জীবনী মুসলিম মনীষী

তাবলীগ জামাতের তৃতীয় আমির হজরতজি মাওলানা এনামুল হাসান [রহ.]

লিখেছেন মিরাজ রহমান

‘হজরতজি’ সম্বোধনে পরিচিত ছিলেন তিনি
গোটা ভারত উপমহাদেশে ‘হজরতজি’ সম্বোধনে পরিচিত ছিলেন তিনি। একনামে ‘হজরতজি’ বললেই মাওলানা এনামুল হাসানকে [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বুঝতো না— এমন মানুষ যেমন আগে ছিলো না, এখনও নেই বললেই চলে। বিশ্বব্যাপী তাবলিগ জামাতের বৃহৎ পরিসরের এই ব্যাপী-বিস্তৃতির নেপথ্যে যে কয়জন আল্লাহওয়ালা ব্যক্তির জীবন, সময় ও সম্পদ ব্যয় হয়েছে হজরতজি মাওলানা এনামুল হাসান [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] তাঁদের অন্যতম। গোটা জীবনকে ইলমে অহির খেদমতের পাশাপাশি দীনি দাওয়াতের জন্য উৎসর্গ করে দিয়েছিলেন তিনি।

১৯১৮ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি ভারতের উত্তর প্রদেশের কান্দালা নামক স্থানে জন্মগ্রহণ করেন মাওলানা এনামুল হাসান। পিতা ছিলেন দেশবিখ্যাত আলেম। জ্যেষ্ঠ বুজুর্র্গ হিসেবেও বেশ পরিচিতি ছিলো তাঁর। পিতা মাওলানা ইকরামুল হাসান [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-এর তত্ত্বাবধানে ইলমে অহির প্রাথমিক সবক গ্রহণ করেন মাওলানা এনামুল। সুষম একটি দীনি পরিবার ছিলো তাঁর জীবনের প্রথম পাঠশালা। প্রথম দীক্ষালয়। এরপর মক্তবে ভর্তি হয়ে আরবি কায়দা, আমপারা, কোরান মাজিদ দেখে তেলাওয়াত করার যোগ্যতা অর্জন করেন তিনি। এরপর তৎকালীন বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব হাফেজ মাংতুর [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] কাছে পবিত্র কোরআনের হিফজ সমাপ্ত করেন। খুব অল্প সময়ের মাঝে গোটা কোরান হিফজ করেছিলেন এনামুল হাসান। হিফজ সমাপ্ত করার পর মামা মৌলভি হাকিম আব্দুল হামিদ বড়লভির [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] কাছে উর্দূ ও ফার্সি ভাষাসহ হস্তাক্ষর সুন্দর করার বিদ্যা অর্জন করেন। এভাবেই কাটে মাওলানা এনামুল হাসানের বাল্যকাল, ছোটবেলার শিক্ষা গ্রহণ এবং আমলি দীক্ষা লাভের তত্ত্বাবধায়ন-আয়োজন।

অলি-আল্লাহদের সংস্পর্শে থাকার অপার সুযোগ লাভ
খুব ছোটবেলা থেকেই বিভিন্ন অলি-আল্লাহদের সংস্পর্শে থাকার অপার সুযোগ লাভ করেছিলেন মাওলানা এনামুল হাসান [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]। আনুমানিক নয় কিংবা দশ বছর বয়সে তাবলিগ জামাতের প্রতিষ্ঠাতা মুরুব্বি মাওলানা ইলিয়াস [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-এর তত্ত্বাবধানে নিজামুদ্দিন চলে আসেন এবং মাওলানা ইলিয়াস [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] ও মাওলানা এথেকেশামুল হাসান [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-এর কাছে আরবি ভাষা-সাহিত্যসহ বিভিন্ন বিষয়ের ওপর পান্ডিত্য অর্জন করেন। প্রাথমিক পর্যায়ের কিতাবাদি অধ্যয়ন করার সময়ই শিক্ষক-মুরুব্বি মাওলানা ইলিয়াস [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-এর নজর কাড়েন এনামুল। বালক ছেলের মেধা ও মনোযোগিতা দেখে আরো বেশি থেকে বেশি অধ্যয়ন উপযোগী পরিবেশে রাখার চেষ্টা করেন মাওলানা ইলিয়াস। উচ্চশিক্ষা অর্জনের পিপাসা নিয়ে মাওলানা ইলিয়াসের পরামর্শ মোতাবিক ১৯৩৪ সালে সাহরানপুর মাজাহিরুল উলূম মাদরাসায় ভর্তি হন তিনি। এই মাদরাসায় ভর্তি হওয়ার সুবাদে মাওলানা সিদ্দিক আহমদ কাশ্মিরি [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-সহ দেশবরেণ্য বিভিন্ন আলেমদের কাছ থেকে ইলম অর্জন করার সুযোগ লাভ করেন মাওলানা এনামুল হাসান। আরবি ব্যাকরণ, ইলমে ফিকাহ ও দর্শন শাস্ত্রের ওপর বিশেষ পান্ডিত্য ছিলো তাঁর। ভুবনবিখ্যাত শাইখুল হাদিস মাওলানা জাকারিয়া কান্দলভির [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] কাছে হাদিসের পাঠ গ্রহণ করার মাধমে ‘দাওয়ায়ে হাদিস’ জামাত সমাপ্ত করেন তিনি এবং শেষ পরীক্ষায় সবার মাঝে ভালো ফলাফল অর্জন করে পাশ করেন। এককথায়, ইলমি এবং আমলি ময়দানের অভিভাবক গোছের বেশ কয়েকজন আলিমে দীনের ইলমি এবং আমলি সোহবত-সংস্পর্শ শুভ্রতায় ধন্য ছিলেন মাওলানা এনামুল হাসান কান্দলভি।

জীবনের প্রধান পাথেয় ছিলেন…
হজরত মাওলানা ইলিয়াস [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-এর নানাবিধ অবদানে কানায় কানায় পরিপূর্ণ ছিলো মাওলানা এনামুল হাসানের জীবন। ইলমি, আমলি, ইসলাহি, তরবিয়াতি জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে, প্রতিটি বিষয়ে মাওলানা ইলিয়াসের পরামর্শই ছিলো মাওলানা এনামুল হাসানের প্রধান পাথেয়। কেবল দীনি দাওয়াত বা পড়াশুনার ক্ষেত্রে নয়, আধ্যাত্মিক সাধনার জগতেও মাওলানা ইলিয়াসই ছিলো তাঁর ওস্তাদ-পীর। ছাত্রজীবনের কোনো এক সময় আধ্যাত্মিক সাধনার প্রতি আগ্রহী হয়ে মাওলানা ইলিয়াস [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-এর কাছে বায়আত গ্রহণ করেছিলেন এবং ধারাবাহিক সাধনার মাধ্যমে সুফিজগতের বিভিন্ন স্তর পার করতে সক্ষম হয়েছিলেন মাওলানা এনামুল হাসান।

তাবলিগের সাথে সংযুক্তি এবং…
ইলমি পড়াশুনা থেকে ফারেগ হওয়ার পরপরই তাবলিগ জামাতে সময় ব্যয় করা শুরু করেছিলেন মাওলানা এনামুল হাসান। মাওলানা ইলিয়াস [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-এর পরামর্শ মতো বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দেশে এবং মহল্লায় জামাত নিয়ে সফরে যেতেন তিনি। ঠিক এভাবে, একজন অভিভাবক-মুরুব্বির তত্ত্বাবধানে মাওলানা এনামুল হাসানের দাওয়াতি জীবনের সূচনা হয়েছিলো। নিজামুদ্দিনের কাশিফুল উলূম মাদরাসায় শিক্ষক থাকাকালীনও দাওয়াতি আমল থেকে কোনোভাবে দূরে ছিলেন না তিনি। এছাড়া এলাকার সব দাওয়াতি কাজের সঙ্গে ওতপ্রতভাবে জড়িত থাকতেন মাওলানা এনামুল হাসান। ১৯৬৫ সালে বিশ্ব তাবলিগ জামাতের আমির মাওলানা ইউসূফ কান্দলভি [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-এর ইনতিকালের পর শাইখুল হাদিস মাওলানা জাকারিয়া [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] তাঁকে (মাওলানা এনামুল হাসান) বিশ্বতাবলিগ জামাতের আমির হিসেবে মনোনীত করেন। একজন নওজোয়ান আলিমের কাঁধে এমন বিশাল দায়িত্বভার ন্যস্ত করার ব্যাপারে প্রাথমিক পর্যায়ে কেউ কেউ একমত না থাকলেও মাওলানা এনামুল হাসানের দক্ষতা ও খোদাপ্রীতির একনিষ্ঠতা সবার মন ও নজর জয় করেছিলো পরবর্তীতে। উল্লেখ্য, মাওলানা এনামুল হাসান কান্দলভি শায়খুল হাদিস মাওলানা জাকারিয়া [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-এর মেয়ের জামাতা এবং মাওলানা ইউসূফ কান্দলভি [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] এর একান্ত সহচর ও ভায়রা ভাই ছিলেন।

আমি এনামুল কাল কেয়ামতের দিন কী জবাব দেবো
তাবলিগ জামাতের আমির হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করার পর আরো অধিক পরিমাণে উৎসর্গী হয়ে যান মাওলানা এনামুল হাসান। দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা একটাই কেবল ফিকির তাঁর— দীনের এই মেহনতের আরো বেশি বিস্তার কীভাবে ঘটানো যায়? নবিওয়ালা এ কাজের সঙ্গে আরো বেশি উম্মতকে কীভাবে জোড়ানো যায়? নবিওয়ালা এ কাজকে বিশ্বপরিম-লে পৌঁছে দেওয়ার ফিকিরে সর্বদা চিন্তিত থাকতেন তিনি। সময় পেলেই বলতেন, ‘পৃথিবীর একটি মানুষের কাছেও যদি এ কাজের দাওয়াত পৌঁছানো বাকি থাকে, আমি এনামুল কাল কেয়ামতের দিন আল্লাহ মহানের কাছে কী জবাব দেবো?’

দীনের পথের একনিষ্ঠ এ দায়ি জীবনের সিংহভাগ সময় দীনের দাওয়াতি কাজের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তাবলিগ ও দাওয়াতের কাজ তাঁর প্রকৃতির সঙ্গে মিশে গিয়েছিলো। দীনি হরকত ছাড়া তিনি এক মুহূর্তকালও অতিবাহিত করতে পারতেন না। চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ও বহুমুখী গুণাবলীর কারণেও তিনি প্রসিদ্ধ ছিলেন। গুরুত্ত্বপূর্ণ যে কোনো মাশওয়ারায় তাঁর পরামর্শটি বিশেষভাবে বিবেচনা করা থেকো। তিনি ছিলেন সবার কাছে সমানভাবে সমাদৃত। তাবলিগি কাজের দায়িত্ব তাঁর কাধে আসার পর তিনি নিজেকে আরো কোরবান করেন এবং দাওয়াতি কাজকে বিশ্বের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে দেন। আল্লাহভোলা মানুষকে হেদায়েতের পথে আনতে দিনভর দাওয়াত ও রাতভর ইবাদত ও কান্নাকাটিতে কাটিয়ে দিতেন। পূর্ববর্তীদের ইখলাস ও সাধনার পথ যথাযথ অনুসরণ করার ফলে দাওয়াত ও তাবলিগের কাজে কোনো চিড় ধরেনি বরং আগের চেয়ে সুচারুভাবে দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলেছে। মাওলানা ইউসূফ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-এর সাথে ঘনিষ্ঠভাবে তিনি জড়িত থাকার ফলে কর্মোদ্যম ও কর্মকৌশলে তিনি ছিলেন অনেক এগিয়ে। দীর্ঘ অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে তাবলিগের কার্যক্রমকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত করে তোলেন মাওলানা এনামুল হাসান।

নিয়মিত একজন সফর সঙ্গী ছিলেন তিনি
পাকিস্তানের যে সফরে থাকাকালীন মাওলানা ইউসূফ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-এর ইনতিকাল হয় মাওলানা এনামুল হাসানও সেই সফরে তাঁর সঙ্গী ছিলেন। শুধু এই এক সফরেই নয়; মাওলানা ইউসূফ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-এর বেশিরভাগ সফরেই মাওলানা এনামুল হাসান [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] সঙ্গী হিসেবে প্রাধান্য পেতেন। খুবই হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক ছিলো মাওলানা ইউসূফ এবং মাওলানা এনামুল হাসানের মাঝে। একে অপরের একান্ত নিভর্রযোগ্য সহযোগী ছিলেন তাঁরা। শ্রদ্ধা-সমীহ করতেন একে অপরকে। জীবনের বেশির ভাগ হজও তাঁরা দুইজন একসাথেই করেছেন। মাওলানা ইউসুফের উপস্থিতিতে কোনো প্রকারের কোনো সিন্ধান্তুমূলক কথা বলতেন না মাওলানা এনাম। মাওলানা ইউসুফের মতামতকেই সব সময় প্রাধান্য দিতেন তিনি। মাওলানা ইউসূফকে [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] খুবই মান্য করতেন মাওলানা এনামুল হাসান। তাঁর মান্য করার বিষয়ে মাওলানা আজিজুর রহমান [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] লিখেছেন, ‘মাওলানা ইউসূফ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] জীবিত থাকাকালীন মাওলানা এনামুল হাসান [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] একেবারেই চুপ থাকতেন। বিভিন্ন মাশওয়ারা ও ইজতিমায় উপস্থিত থাকতেন ঠিকই কিন্তু সিন্ধান্তমূলক কোনো মতামত প্রকাশ করতেন না তিনি।’

নীরব থেকে সরব
মাওলানা ইউসূফ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-এর জীবদ্দশায় একেবারেই নীরব প্রকৃতির একজন দায়ির দায়িত্বে ছিলেন মাওলানা এনামুল হাসান [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]। উপর থেকে যে ফয়সালা তাঁর ওপর আসতো; কামা হাককুহু সেগুলোকে পালন করতেন তিনি। মুরুব্বি-অভিভাবকদের সামনে সিন্ধান্তমূলক কোনো প্রকারে কোনো কথাও বলতেন না মাওলানা এনামুল হাসান। নীরব প্রকৃতির কর্মময় একজন মানুষ ছিলেন তিনি। মাওলানা ইউসূফ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-এর ইনতিকালের পর নতুন এক এনামুল হাসানের দর্শন লাভ করেন তাবলিগি ভাইয়েরা। নুতন আঙ্গিকের নব্য একজন আমিরের স্পর্শ লাভে ধন্য হয় তাবলিগ জামাত। তাঁর এই নতুন কর্মচাঞ্চল্য সম্পর্কে মাওলানা আজিজুর রহমান লিখেন, ‘মাওলানা ইউসূফ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-এর ইনতিকালের পর মাওলানা এনামুল হাসান যখন তাঁর স্থলাভিষিক্ত হলেন, কর্মচাঞ্চল্যময় নতুন এক এনামুল হাসানের আর্বিভাব দেখতে পাই আমরা। একজন আমির হিসেবে যতটুকু এবং যে পরিধির অংশ গ্রহণ উচিত, পরিপূর্ণরূপে তা করা শুরু করেন তিনি। মেহমানদের খোঁজ-খবর নেওয়া, বিদায়ি জামাতগুলোকে হেদায়েতি বয়ান করা, ইজতিমার আয়োজন করা, বিদেশি মেহমানদের তদারকি করা এবং ধারাবাহিকভাবে জামাত পাঠানোসহ নানান কজে এতোটাই কর্মময় হয়ে উঠেন তিনি, আশপাশের লোকেরা বলাবলি শুরু করেন— এ কোন নতুন হজরতজিকে দেখছি আমরা।

আবার শুরু হলো বিদেশে জামাত পাঠানোর যাত্রা
মাওলানা ইউসূফ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] ইনতিকালের পর বিদেশে জামাত পাঠানো আয়োজন কিছুটা হলেও বাধাগ্রস্ত হয়। বেশ কিছু সময় বন্ধ ছিলো বিদেশে জামাত পাঠানো। কিন্তু না খুব বেশি সময় নিলেন না তিনি, দ্রুততম সময়ের মাঝেই আবার বিদেশে জামাত পাঠানোর আয়োজন গ্রহণ করলেন মাওলানা এনামুল হাসান এবং নিজেও বিদেশ সফরে বেড়িয়ে পড়লেন। মরোক্ক, তিউনিশিয়া, লিবিয়া, মিশর, সিরিয়া, ইয়ামান এবং কুয়েতসহ বেশ কিছু দেশে তাবলিগের জামাত প্রেরণ করনে তিনি। কাতার, বাহরাইন এবং দুবাইসহ বেশ কিছু দেশে সফর করলেন নিজেই। মোট কথা, মাওলানা ইউসূফ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-এর ইনতিকালের কারণে তাবলিগি কাজের বিশ্বায়নে কোনো প্রকারের কোনো আচঁ লাগতে দেননি হজরতজি মাওলানা এনামুল হাসান। বেশ কয়েকজন ইতিহাসবিদ বর্ণনা করেছেন, মাওলানা ইলিয়াসর [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-এর আমলে বিদেশে জামাত পাঠানোর তেমন কোনো ফিকিরই ছিলো না। কারণ তখন ছিলো তাবলিগ জামাতের প্রাথমিক কাল। মাওলানা ইউসূফ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] এবং হজরতজি মাওলানা এনামুল হাসান কান্দলভি [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-এর মাধ্যমেই বিশ্বব্যাপী তাবলিগ জামাতের বিস্তৃতি সাধিত হয়েছে। দেশের সীমানা পেড়িয়ে বিভিন্ন মুসলিম ও অমুসলিম দেশের আকশে উড়েছে তাবলিগ জামাতের বিজয় নিশান। তাঁদের দুইজনের আমলেই মূলত বিশ্ববাসীর কাছে তাবলিগের দাওয়াত পৌঁছেছে এবং বিশ্বব্যাপী সমাদৃত হয়েছে এই আমলি মিশন।

নিজামুদ্দিনেই তাঁকে সমাহিত করা হয়
দীনের দাওয়াতি আয়োজনই ছিলো তাঁর জীবনের শ্রেষ্ঠ আয়োজন। আল্লাহর পথের উৎসর্গী এই মানুষটিও আর রইলেন না। সবার মতো করে তিনিও একদিন চলে গেলেন। প্রিয়তম প্রভুর ডাকে সাড়া দিয়ে বিদায় নিলেন এই ধরা থেকে। ১৯৯৫ সালের ১০ জুন প্রিয়তম প্রভুর দরবারের ফেরেশেতারা এসে মাহবুবের ‘দিদারে’ নিয়ে গেলেন এবং স্বহাস্য মনে চলে গেলেন মাওলানা এনামুল হাসান। ইনতিকালের পর নিজামুদ্দিনে তাঁকে সমাহিত করা হয়। তাঁর ইনতিকালের পর তাবলিগ জামাতের নিয়মতান্ত্রিক কোনো বিশ্ব আমির নির্বাচিত করা হয়নি। বর্তমান সময় পর্যন্ত মজলিসে শুরার মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে তাবলিগ জামাতের কার্যক্রম। ###

Comment

লেখক পরিচিতি

মিরাজ রহমান

গতানুগতিক ধারার বাইরে থেকে কাজ করে ইতিমধ্যেই বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন মিরাজ রহমান। পেশায় পুরোদস্তুর একজন সাংবাদিক হলেও কেবল ইসলামকে ঘিরেই আবর্তিত তার ধ্যান-জ্ঞান। দৈনিক পত্রিকার ইসলাম পাতায় লেখালেখি থেকে তিনি পরিচিত হয়ে উঠেছেন বটে, কিন্তু একসময় শিল্প চর্চায়ও ছিলেন বেশ মনোযোগী।
মিডিয়ায় সক্রিয়ভাবে কাজ শুরু করেছেন যখন, তখনও তিনি ছাত্র। মাদানিনগর মাদরাসার কাফিয়া জামাতের (শ্রেণি) শিক্ষার্থী থাকা অবস্থায় কণ্ট্রিবিউটর হিসেবে প্রথম কাজ শুরু করেন দৈনিক যুগান্তরে। ধারালো লিখনী শক্তি অল্পদিনের মধ্যে পরিচিত করে তোলে তাকে। দেশের জাতীয় দৈনিক পত্রিকার প্রায় সবগুলোতেই ইসলামবিষয়ক কলাম ও ফিচার লিখেছেন দীর্ঘ সময়। জাতীয় প্রিন্ট মিডিয়াগুলোতে তার অন্তত দুই সহস্রাধিক প্রবন্ধ-নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে।
মিরাজ মূলত পড়াশুনা করেছেন কওমি শিক্ষাধারায়, এর পাশাপাশি তিনি জেনারেল শিক্ষাধারায়ও পড়াশুনা করছেন। সহ-সম্পাদক হিসেবে প্রথম যোগদান করেন দৈনিক ডেসটিনি পত্রিকায়। সেখান থেকে দৈনিক কালের কণ্ঠে। দেশে-বিদেশে অনলাইন গণমাধ্যমের জয়যাত্রা শুরু হলে মিরাজ ইন্টারনেট জগতকে ইসলাম প্রচারের জন্য সবচেয়ে সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র বিবেচনা করে অনলাইনেই গাঁটছাড়া বাঁধেন। দেশের প্রথম পূর্ণাঙ্গ ইসলামবিষয়ক অনলাইন পোর্টাল প্রিয়.কমের ‘প্রিয় ইসলাম’-এর সৃষ্টি ও পথচলার সূচনা তারই হাতে। দীর্ঘদিন কাজ করেছেন প্রিয়.কমের প্রিয় ইসলাম বিভাগের এডিটর ইনচার্জ। সর্বশেষ কর্মরত ছিলেন দৈনিক বাংলাদেশের খবরের ফিচার ইনচার্জ হিসেবে।
টেলিভেশনে অনুষ্ঠানের উপস্থাপনা ও আলোচনার সঙ্গেও ইতিমধ্যে যুক্ত হয়েছেন মিরাজ রহমান। পরিচালনা করেছেন বেশ কিছু অনুষ্ঠানও। এসো কলম মেরামত করি, ছোটদের নবী-রাসূল সিরিজ, তাবলিগী জামাতের পৃষ্ঠপোষক-মুরুব্বি ছিলেন যাঁরা, শরয়ী পর্দার বিধান, আশিক মিন ফিলিস্তিন, নারী তুমি সৌভাগ্যবতী ও হালাল ব্যবসা ও হালাল অর্থনীতির কথকতাসহ বেশ কিছু আলোড়ন সৃষ্টিকারী গ্রন্থেও জনক তিনি। বর্তমান তিনি ইসলাম প্রতিদিনের সম্পাদক ও প্রকাশক এবং দ্য সুলতান প্রকাশনীর প্রধান নির্বাহী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।