দিবস বিধান

ইসলামের দৃষ্টিতে স্বাধীনতা

২৬ মার্চ আমাদের স্বাধীনতা দিবস। এই দেশকে পাকিস্তানের শাসকদের হাত থেকে মুক্তি করার জন্য স্বাধীনতার ডাক দেওয়া হয়। ১৯৭১ সালে বর্বর পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসররা গনহত্যা কিংবা নারীর সম্ভ্রম হরন, লুন্ঠন, অগ্নিসংযোগের মত জঘন্য ঘটনা ঘটিয়েছে। বর্তমান ও পুরোনো বছরের শোষন-শাসন অপমানের শিকার বাঙালী জনগন, তখন ভিজে মাটির সোঁদা গন্ধ হৃদয়ে ধারন করে ঝাপিয়ে পড়েছিলেন স্বাধীনতার লাল সূর্য ছিনিয়ে আনতে এ দেশের মুক্তি পাগল জনগন জীবন বাঝি রেখে ঝাপিয়ে পড়েছিলেন পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর উপর। নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধে লক্ষ লক্ষ মানুষ নিজেদের তাজা প্রান বিলিয়ে দিয়েছেন দেশের জন্য। জানা অজানা বহু মানুষ হারিয়ে গেছেন ফিরে না আসার দেশে। বলা হয়েছে,যারা আল্লাহর রাস্তায় জীবন দেন তারা শহিদ। কারন দেশের জন্য, মজলুম জনতার দাবি আদায়ের স্বার্থে লড়াই করারই নামান্তর। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেছেন, যারা আল্লাহর পথে জীবন দেন তাদের মৃত বলোনা। বরং তারা জীবিত। কিন্তু তোমরা তা উপলব্ধি করতে পারনা। (সুরা বাকারা,আয়াত : ১৫৪)

রাষ্ট্রের রক্ষার নিয়োজিত লোকদের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে রাসুল (সা.) বলেছেন,রাষ্ট্রের সীমানা পাহাড়া দেওয়া দুনিয়া ও তার মধ্যকার সব কিছুর চেয়ে অতি উত্তম। অন্য হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, মানুষ মৃত্যুর পর তার সব আমল বন্ধ হয়ে যায়। ফলে তার আমল আর বৃদ্ধি পেতে পারেনা, তবে ঐ ব্যক্তির কথা ভিন্ন, যে ব্যক্তি কোন রাষ্ট্রে সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য সীমান্ত প্রহরায় নিয়োজিত থাকাবস্থায় মৃতবরন করে। তার আমল কিয়ামত পর্যন্ত বৃািদ্ধ পেতে থাকবে। এবং কবরে প্রশ্ন উত্তর থেকে সে মুক্তি পবে।(তিরমিজি, আবুদাউদ)

ইসলাম কোন পরাধীনতাকে পছন্দ করেনা। মহান আল্লাহ বলেন, যে মুক্ত করে তাদের গুরুভার হতে ও শৃঙ্খল হতে যা তাদের ওপর ছিল। সুতারং যারা তার প্রতি বিশ্বাস করে তাকে সন্মান প্রদর্শন করে তাকে সাহায্য সহযোগীতা করে এবং যে নুর তার সঙ্গে অবতীর্ন হয়েছে এর অনুসরন করে তারাই হলো সফলকাম।(সুরা আরাফ,আয়াত : ১৫৭)

স্বাধীনতা আমাদের শ্রেষ্ঠ অর্জন। বাঙালি জাতির চিন্তা,নিদ্রা, স্বপ্নে, ছিল ১৯৭১ সালে শুধু স্বাধীনতা অর্জন। দেশ প্রেমের উদ্দীপনা হৃদয়ে ধারন করে দেশ প্রেমিকরা মৃত্যুকে উপেক্ষা করে এবং যুদ্ধে বিজয়ী হয়ে দেশ স্বাধীন করেছেন ও আমাদের মুক্তি করেছেন প্রত্যেক মানুষ তার ভূমিষ্ট স্থান এবং তার লালন পালনের স্থানটিকে সহজাতভাবেই ভালবাসে। কেননা জন্মভূমিকে ভালবাসা একজন নাগরিকের নৈতিক ও ঈমানী দায়িত্ব। তাছাড়া এটা রাসুল (সা.)-এর আদর্শ। প্রিয় নবি হযরত মুহাম্মদ (সা.) মক্কা ত্যাগে তার চোখ দিয়ে অঝোর ধারায় পানি পরছিল। তিনি বলেছিলেন, হে মক্কা আমি তোমাকে ভালবাসি। কাফেররা যদি আমাকে বের করে না দিত, তাহলে তোমাকে ত্যাগ করতাম না। আবার যখন মদিনা শরীফ থেকে অন্যত্র বের হতেন,তখন তার মন কাঁদত। সফর শেষে ফিরে যখন উহুদ পাহাড় দেখতেন খুশি হয়ে যেতেন এবং বলতেন এই উহুদ পাহাড় আমাদের কে ভালবাসে আমরাও উহুদ পাহাড়কে ভালবাসি। (বুখারী শরীফ:২/৫৩৯,ইবনে কাছীর: ৩/৪০৪)

Comment

লেখক পরিচিতি

মো. আবু তালহা তারীফ

একজন প্রাবন্ধিক ও বিশ্লেষক এবং গবেষক। দেশের সুনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরকারী মাদ্রাসা-ই-আলিয়া,ঢাকার থেকে দাখিল, আলিম, ফাজিল সাফল্যেও সাথে উত্তীর্ন হয়ে একই প্রতিষ্ঠানে কামিল হাদিস বিভাগে ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ইসলামিক স্ট্যাডিজ বিভাগে অনার্স ৪র্থ বর্ষে অধ্যায়ন করছেন তরুণ এই লেখক।
ছোটবেলা থেকেই সাহিত্য চর্চা করতেন তিনি। যার ফলে কলম ধরেছেন ছোটবেলা থেকেই। বিভিন্ন রচনা প্রতিযোগীতায় জাতীয় পর্যায়ে অসংখ্য বার পুরুস্কারও পেয়েছেন। দৈনিক কালের কন্ঠ পত্রিকায় তার জীবনের প্রথম লেখা প্রকাশিত হয়। জাতীয় বিভিন্ন দৈনিকের ধর্মীয় পাতায় তার লেখা দেখা যায় প্রতিনিয়তই।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বিভিন্ন বইয়ের সম্পাদনাও করেছেন তালহা তারীফ। নবম শ্রেনীতে অধ্যায়ন অবস্থায়ই তার লেখা প্রথম বই প্রকাশিত হয়। তরুন আলোচক হিসেবে মিডিয়া ও মাহফিল পাড়ায় তার ব্যপক পরিচিতি রয়েছে।