জাতীয় জীবন বিধান বিধান সংবাদ

আজানের সময় কথা বলা যাবে নাকি যাবে না?

লিখেছেন মিরাজ রহমান

আজানের সময় কথা বন্ধের নিয়ম নেই বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের। বুধবার বিকেলে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বক্তৃতা দেয়ার সময় আজান শুরু হলে এমন মন্তব্য করেন তিনি। (সূত্র : সময় টেলিভিশন অনলাইন।)



বিষয়টি নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়াসহ মিডিয়া পাড়ায় বেশ আলোচনা চলছে। তার এমন মন্তব্যকে মেনে নিতে পারছেন না সরলপ্রাণ মুসল্লিরা। সময় টেলিভিশনের ইউটিউব চ্যানেল প্রকাশ করা ভিডিওর নিচে গিয়ে দেখা যায় বহু মানুষ বহু রকমের মন্তব্য করছেন। একজন মুসলমান হিসেবে এ বিষয়টি সম্পর্কে ইসলামের বিধান কি তা সঠিকভাবে জানা জরুরি।

‘আজান’ আরবি শব্দ। এর অর্থ হলো— ঘোষণা করা, জানানো, আহবান করা ইত্যাদি। কোনো জিনিস সম্পর্কে ঘোষণা দেওয়াকে আজান বলা হয়। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, আর আল্লাহ ও তার রাসূলের পক্ষ থেকে আজান। (সূরা তাওবা: আয়াত ৩)। নির্ধারিত শব্দমালা দ্বারা নির্দিষ্ট সময়ে নামাজের জন্য আহবান জানানোকে ইসলামী পরিভাষায় আজান বলা হয়। (আল মুজামুল ওয়াসীত, লিসানুল আরব)। প্রশ্ন হলো, আজানের সময় একজন মুসলিম হিসেবে করণীয় কী? বা এ সময় কথা বলার বিধান কী?

ইসলামে আজানের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। আজান শুনে জবাব দেওয়ার বিধানটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। মৌখিকভাবে আজানের উত্তর দেওয়া আজান শ্রবণকারীর জন্য সুন্নত। রাসুল (সা.)  ইরশাদ করেছেন, ‘যখন তোমরা আজান শুনবে, এর জবাবে মুয়াজ্জিনের অনুরূপ তোমরাও বলবে।’ (সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৫৮৬, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৮৭৪, সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং- ৫২২, সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং-২০৮)

আজানের উত্তর প্রদানে ব্যর্থ হলে আজানের সময় চুপ থাকাও সুন্নত। একান্ত প্রয়োজন না হলে সাধারণ দ্বীনি ও দুনিয়াবি সব ধরনের কথা বা কাজে লিপ্ত থাকা অনুচিত। বক্তৃতা বা সেমিনার চলাকালে আজান হলে সাময়িকভাবে তা স্থগিত রাখা উত্তম। ওয়াজ বা কোনো দ্বীনি মাহফিল চললেও তা সাময়িক বন্ধ রেখে আজানের জবাব দেওয়া সবার জন্যই উত্তম। মনে রাখতে হবে, একজন আজানের জবাব দিলে সবার পক্ষ থেকে তা আদায় হয়ে যায় না। কারণ আজানের জবাব দেওয়া শ্রবণকারী সব মুসলমানের জন্য সুন্নত। ইসলামী বিধান মতে, আজানের জবাব দেওয়া সুন্নতে কেফায়া নয়। যা একজন আদায় করলে, সবার পক্ষ থেকে আদায় হয়ে যাবে। (ফাতহুল কাদির : ১/২৪৮, রদ্দুল মুহতার : ১/৩৯৯, ফাতাওয়া মাহমুদিয়া : ৫/৪২৭)

তবে আজানের সময় কথা বলা একেবারেই হারাম— কথাটি সহীহ নয়। আজানের সময় কথা বলা ঠিক নয়। বরং আজানের উত্তর দেয়া উচিত। কোনো কোনো ফকিহ বলেছেন, যদি কেউ আজানের জবাব না দেয় তবে গোনাহ হবে না। সুতরাং একজন মুসলিম হিসেবে প্রথম কাজ হলো— যদি সম্ভব হয় তাহলে সব কথা ও কাজ বন্ধ রেখে আজানের উত্তর প্রদান করা। আর উত্তর প্রদান করা সম্ভব না হলে অন্তত চুপ থাকা।

তবে ইসলামী বিধান মতে কিছু কিছু সময় আজানের উত্তর দিতে হবে না। সেগুলো হলো— নামাজ আদায়কারী, পানাহার অবস্থায়, ইস্তিনজাকারী, স্ত্রী সহবাসে লিপ্ত, মহিলাদের ঋতুকালীন ইত্যাদি সময়। অনেক আলেমের মতে, আজানের পরক্ষণেই যদি উল্লিখিত কাজ থেকে অবসর হয়, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে আজানের জবাব দিয়ে দেওয়া উত্তম। কোরআন তেলাওয়াতকারীর জন্য সাময়িক বন্ধ তেলাওয়াত রেখে আজানের জবাব দেওয়া উত্তম। (আদ্দুররুল মুখতার : ১/৩৯৭)। শিক্ষার বিষয় হলো— পবিত্র কুরআন তিলাওয়াত বন্ধ রেখে আজানের উত্তর প্রদান করা যদি উত্তম হয়, তাহলে বক্তৃতা বা অন্য কাজ বন্ধ করে আজানের উত্তর দেওয়া উচিত নাকি অনুচিত হবে?

Comment

লেখক পরিচিতি

মিরাজ রহমান

গতানুগতিক ধারার বাইরে থেকে কাজ করে ইতিমধ্যেই বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন মিরাজ রহমান। পেশায় পুরোদস্তুর একজন সাংবাদিক হলেও কেবল ইসলামকে ঘিরেই আবর্তিত তার ধ্যান-জ্ঞান। দৈনিক পত্রিকার ইসলাম পাতায় লেখালেখি থেকে তিনি পরিচিত হয়ে উঠেছেন বটে, কিন্তু একসময় শিল্প চর্চায়ও ছিলেন বেশ মনোযোগী।
মিডিয়ায় সক্রিয়ভাবে কাজ শুরু করেছেন যখন, তখনও তিনি ছাত্র। মাদানিনগর মাদরাসার কাফিয়া জামাতের (শ্রেণি) শিক্ষার্থী থাকা অবস্থায় কণ্ট্রিবিউটর হিসেবে প্রথম কাজ শুরু করেন দৈনিক যুগান্তরে। ধারালো লিখনী শক্তি অল্পদিনের মধ্যে পরিচিত করে তোলে তাকে। দেশের জাতীয় দৈনিক পত্রিকার প্রায় সবগুলোতেই ইসলামবিষয়ক কলাম ও ফিচার লিখেছেন দীর্ঘ সময়। জাতীয় প্রিন্ট মিডিয়াগুলোতে তার অন্তত দুই সহস্রাধিক প্রবন্ধ-নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে।
মিরাজ মূলত পড়াশুনা করেছেন কওমি শিক্ষাধারায়, এর পাশাপাশি তিনি জেনারেল শিক্ষাধারায়ও পড়াশুনা করছেন। সহ-সম্পাদক হিসেবে প্রথম যোগদান করেন দৈনিক ডেসটিনি পত্রিকায়। সেখান থেকে দৈনিক কালের কণ্ঠে। দেশে-বিদেশে অনলাইন গণমাধ্যমের জয়যাত্রা শুরু হলে মিরাজ ইন্টারনেট জগতকে ইসলাম প্রচারের জন্য সবচেয়ে সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র বিবেচনা করে অনলাইনেই গাঁটছাড়া বাঁধেন। দেশের প্রথম পূর্ণাঙ্গ ইসলামবিষয়ক অনলাইন পোর্টাল প্রিয়.কমের ‘প্রিয় ইসলাম’-এর সৃষ্টি ও পথচলার সূচনা তারই হাতে। দীর্ঘদিন কাজ করেছেন প্রিয়.কমের প্রিয় ইসলাম বিভাগের এডিটর ইনচার্জ। সর্বশেষ কর্মরত ছিলেন দৈনিক বাংলাদেশের খবরের ফিচার ইনচার্জ হিসেবে।
টেলিভেশনে অনুষ্ঠানের উপস্থাপনা ও আলোচনার সঙ্গেও ইতিমধ্যে যুক্ত হয়েছেন মিরাজ রহমান। পরিচালনা করেছেন বেশ কিছু অনুষ্ঠানও। এসো কলম মেরামত করি, ছোটদের নবী-রাসূল সিরিজ, তাবলিগী জামাতের পৃষ্ঠপোষক-মুরুব্বি ছিলেন যাঁরা, শরয়ী পর্দার বিধান, আশিক মিন ফিলিস্তিন, নারী তুমি সৌভাগ্যবতী ও হালাল ব্যবসা ও হালাল অর্থনীতির কথকতাসহ বেশ কিছু আলোড়ন সৃষ্টিকারী গ্রন্থেও জনক তিনি। বর্তমান তিনি ইসলাম প্রতিদিনের সম্পাদক ও প্রকাশক এবং দ্য সুলতান প্রকাশনীর প্রধান নির্বাহী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।