আদা একটি প্রাকৃতিক মশলা। বিশ্বজুড়ে আদা একটি জনপ্রিয় উপাদান। কিছু কিছু রান্নায় আদা ছাড়া যেন স্বাদই হয় না। নানা রোগ-প্রতিরোধে এটি খুবই কার্যকর। আদায় নানা প্রকার ঔষধি গুণ থাকায় প্রাচীনকাল থেকেই বিভিন্ন ঔষধের বিকল্প হিসেবে আদা ব্যবহার করা হয়। আদায় রয়েছে ভিটামিন এ, সি, ই, বি কমপ্লেক্স, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, পটাশিয়াম, সিলিকন, সোডিয়াম, আয়রণ, জিঙ্ক, ক্যালসিয়াম ও বিটা ক্যারোটিন। ঔষধি গুণ পেতে কাঁচা, শুকনো, অথবা রস করে আদা খাওয়া যায়। প্রতি ১০০ গ্রাম আদায় রয়েছে এনার্জি: ৮০ ক্যালরি, কার্বোহাইড্রেট : ১৭ গ্রাম, ফ্যাট : ০.৭৫ গ্রাম, পটাশিয়াম : ৪১৫ মিলিগ্রাম ও ফসফরাস : ৩৪ মিলিগ্রাম। এ লেখায় তুলে ধরা হলো আদার কিছু গুণ ও উপকারিতার কথা।
১. হজমশক্তি বাড়ায় : হজমশক্তি বাড়াতে আদার জুড়ি নেই। আদায় রয়েছে হজমের জন্য উপকারী কিছু কার্যকর উপাদান। আর এগুলো হজমে সহায়তাকারী এনজাইগুলোর কার্যক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। যে কারণে হজমে সমস্যা হলে নিয়মিত কিছু পরিমাণে আদা খেতে পারেন।
২. বমিভাব দূর করে : আদা বমিভাব ও অস্বস্তি দূর করে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আদার এ গুণটিকে স্বীকৃতি দিয়েছে। এ কারণে গর্ভবতী নারী, সার্জারির রোগী, ক্যান্সারে কেমোথেরাপি দেওয়া হচ্ছে এমন ব্যক্তি কিংবা ভ্রমণজনিত অসুস্থতায় বমিভাব দূর করার ক্ষেত্রে আদার উপকারিতা স্বীকৃত। এ ক্ষেত্রে খুব বেশি পরিমাণে আদা প্রয়োজন নেই।
৩. ব্যথানাশক : শরীরের যেকোনো ধরনের ব্যথায় আদা টনিকের মতো কাজ করে। অসটিও আর্থ্রাইটিস, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসে শরীরের প্রায় প্রতিটি হাড়ের জোড়ায় প্রচুর ব্যথা হয়। এই ব্যাথা দূর করে আদা। মাংসপেশির ব্যথা থেকেও মুক্তি দিতে পারে আদা। মার্কিন এক গবেষণায় আদার এ গুণের কথা প্রকাশিত হয়েছে। গবেষকরা জানিয়েছেন, শারীরিক অনুশীলনের ফলে সৃষ্ট মাংসপেশির ব্যথা কমাতে প্রতিদিন দুই গ্রাম আদা ১১ দিন খেতে হবে।
৪. ফুসফুসের জন্য উপকারী : ফুসফুসের সাধারণ যে কোনো সংক্রমণ বা রোগের ক্ষেত্রে আদা বেশ কার্যকরী। সর্দি- কাশি, শ্বাস- প্রশ্বাসের সাধারণ সমস্যা দূর করে আদা। গলা ও স্বরতন্ত্রী পরিষ্কার রাখে। নাক দিয়ে পানি পড়া কমাতে ও শ্বাসযন্ত্র থেকে কফ দূর করতে আদা চা উপকারী।
৫. দেহের তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে : শীতকালে ঠান্ডা নানা ধরনের রোগের প্রভাব বাড়ে। এছাড়াও ঠা-ার প্রভাবে অনেকেরই দেহের তাপমাত্রা কমে যায়। এক্ষেত্রে ঠান্ডা সমস্যার অন্যতম সমাধান হতে পারে কিছু আদা খেয়ে নেওয়া। কারণ আদার রয়েছে দেহের তাপমাত্রা বৃদ্ধির ক্ষমতা। আপনি যদি ঠান্ডায় কষ্ট পান কিংবা কোনো শীতকালীন রোগে আক্রান্ত হন তাহলে নিয়মিত আদা খান।
৬. কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধ : মানবদেহের অন্যতম ক্ষতিকর ক্যান্সারের নাম কোলন ক্যান্সার। যে ক্যান্সারে প্রতিবছর বহু মানুষ মারা যায়। তবে আদার রয়েছে কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধী ক্ষমতা। এর কিছু উপাদান কোলনে সংক্রমণ প্রতিরোধ করে। এতে সেখানে ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কা অনেকাংশেই কমে যায়।
৭. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে : আদা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে। এটি মানুষের রক্তে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ফলে ডায়াবেটিস রোগের উপশম হয়। সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ে র গবেষকরা সম্প্রতি এসব তথ্য দিয়েছেন। আদার নির্যাস শরীরের কোষে গ্লুকোজের শোষণক্ষমতা বৃদ্ধি করে, যা ডায়াবেটিস রোগীর রক্তে দীর্ঘমেয়াদে সুগারের স্তর ঠিক রাখতে ভূমিকা রাখে এবং কোষগুলোতে নির্বিঘ্নে ইনসুলিনের চলাচল ঠিক রাখে। ডায়াবেটিস রোগীর ক্ষেত্রে সাধারণ অবস্থায় রক্তে গ্লুকোজের স্তর নিম্নমাত্রায় থাকে বলে নানা ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়তে হয়। কিন্তু আদার রস সেই স্তরের বৃদ্ধি ঘটায়। পেশির কোষগুলোতে গ্লুকোজের ধারণ ক্ষমতা বাড়ায় এবং তাতে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমে।
৮. শ্বাস-প্রশ্বাস সহজ করে : আপনি যদি শ্বাসকষ্টের সমস্যায় ভোগেন তাহলে নিয়মিত আদা খেলে উপকার পাবেন। ২০১৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির এক গবেষণায় বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে। গবেষকরা জানিয়েছেন, শ্বাসকষ্টের রোগীদের ক্ষেত্রে আদা সেবনে স্পষ্ট উপকার দেখা যায়। এতে তাদের শ্বাস নেওয়া সহজ হয় এবং যন্ত্রণা কমে।
৯. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় : দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় আদা। এক গবেষণায় দেখা গেছে, আদার রস দাঁতের মাড়িকে শক্ত করে, দাঁতের ফাঁকে জমে থাকা লুকানো জীবাণুকে ধ্বংস করে। এছাড়াও আদায় থাকা অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান শরীরের রোগজীবাণু ধ্বংস করে। জ্বর জ্বর ভাব, গলাব্যথা ও মাথাব্যথা দূর করতে সাহায্য করে আদা। কাশি এবং হাঁপানির জন্য আদার রসের সাথে মধু মিশিয়ে সেবন করলে বেশ উপকার মেলে।
১০. কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময় : নিয়মিত আদা খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে। এছাড়াও পরিপাকতন্ত্রে জমে থাকা বিষাক্ত গ্যাস বা হজম না হওয়া খাবার হজমে সহায়তা করে।
১১. সতেজতা বাড়ায় : আদা চা অবসাদ দূর করে শরীর ও মনে সতেজতা বাড়ায়।
১২. রক্তপ্রবাহ সচল করে : আদা চায়ে আছে দেহ উষ্ণ করার ক্ষমতা। এভাবে এটি রক্ত সঞ্চালনও ঠিক রাখে। বসে কাজ করার অভ্যাস যাদের তাদের রক্তসঞ্চালন প্রায়ই বাধাগ্রস্ত হয়। আদা চা এই সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।
১৩. বিষাক্ত পদার্থ অপসারণ : আদায় রয়েছে বিষাক্ত উপাদান অপসারনের ঔষধি উপাদান। দেহে জমে থাকা বিষাক্ত বর্জ্য অপসারণে আদা ভূমিকা রাখে।
১৪. ত্বকের দাগ দূর করে : আদা চা দাগপড়া ত্বক সারিয়ে তুলতে সাহায্য করে। এক্ষেত্রে এটি কোষ তৈরি করায় সাহায্য করে।
আদা খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা
গর্ভবতীদের জন্য : আদা ও গর্ভবতী মহিলাদের মধ্যে গবেষণাকালে মিশ্র ফলাফল পাওয়া গেছে। এক গবেষণা মতে, আদার ফলে গর্ভপাত ও বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে। আরেক গবেষণা মতে, আদার ফলে বমি বমি ভাব দূর হয়। তাই আদা খাওয়া ভালো।
দাঁতের প্রদাহ বাড়ে : আদা একটি প্রাকৃতিক ঔষধ যা আমাদের বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্তি দেয়। তবে আদা আমাদের দাঁতের ক্ষতি করে। বেশি পরিমাণে আদা খাওয়ার ফলে মুখ ও দাঁতে প্রদাহ বৃদ্ধি পায়।
কমেন্টস করুন