গবেষণা

শব্দে শব্দে দীন শেখা : রাসুল


রিসালাত আরিব শব্দ। এর অর্থ হচ্ছে বার্তা, বাণী, পয়গাম, সংবাদ বা কোনো শুভকর্মের দায়িত্ব পালন করা। এর ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো Message। রিসালাত শব্দ থেকেই মূলত রাসুল শব্দটি উদ্ভূত। যিনি রিসালাতের দায়িত্ব পালন কিরেন তিনি রাসুল। ভাবগত বিবেচনায় নবুয়াত ও রিসালাত শব্দ দুটি সমর্থক।


মাওলানা মিরাজ রহমান : রাসুল আরবি শব্দ। আরবি ‘রিসালাতুন’ মূলধাতু থেকে নির্গত। বাংলা অর্থ “বার্তাবাহক”। বহুবচন রুসুল। পারিভাষিক অর্থে রাসুল হলেন অল্লাহ প্রেরিত স্বতন্ত্র কিতাব প্রাপ্ত বার্তাবাহী ব্যক্তিত্ব। রাসুল বলতে তাদেরকেই বোঝানো হয়, যারা আল্লাহর কাছ থেকে কিতাব বা স্বতন্ত্র পুস্তক বা পৃথক শরিয়তের বিধানাবলী প্রাপ্ত হয়েছেন।

হজরত আবু উমামা থেকে বর্ণিত সাহাবি হজরত আবু জর (রা.) বলেছেন, আমি রাসুলকে (সা.) জিজ্ঞাসা করলাম যে, নবিগণের সংখ্যা কত? রাসুল [সা.] উত্তরে বললেন, তাঁদের (নবিদের) সংখ্যা এক লাখ চব্বিশ হাজার, তন্মধ্যে রাসুল ছিলেন ৩১৫ (মতান্তরে ৩১৩জন) জন। [মুসনাদে আহমদ, মিশকাত]

রাসূল বলতে তাদেরকেই বোঝানো হয় যারা আল্লাহ্‌র কাছ থেকে কিতাব বা পুস্তক প্রাপ্ত হয়েছেন। হাদিস সহ অন্যান্য ইসলামি বইয়ে এক লক্ষ চব্বিশ হাজার মতান্তরে দুই লক্ষ চব্বিশ হাজার নবির কথা বলা হয়েছে। এদের মাঝে সকলে কিতাব প্রাপ্ত হননি। যারা কিতাব প্রাপ্ত হয়েছেন তারাই শুধু রাসুলের খেতাব পেয়েছেন। অর্থাৎ সকল রাসুলই নবি কিন্তু সকল নবি রাসুল নয়। কোরআন অনুযায়ী, আল্লাহ্‌ মানবজাতির নিকট বহু নবি-রাসুল (আনবিয়া, একবচন নবি) প্রেরণ করেছেন। তাঁদের মধ্যে পঁচিশ জনের নাম কোরআনে উল্লেখ আছে। কুরআন তাদের চার জনকে রাসুল হিসাবে উল্লেখ করে, দাউদ (ডেভিড), মুসা (মোজেস), ঈসা (যিশু) এবং মুহাম্মাদ (সা.)। [উইকিপিডিয়া]

রিসালাত কি? : রিসালাত আরিব শব্দ। এর অর্থ হচ্ছে বার্তা, বাণী, পয়গাম, সংবাদ বা কোনো শুভকর্মের দায়িত্ব পালন করা। এর ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো Message। রিসালাত শব্দ থেকেই মূলত রাসুল শব্দটি উদ্ভূত। যিনি রিসালাতের দায়িত্ব পালন কিরেন তিনি রাসুল। ভাবগত বিবেচনায় নবুয়াত ও রিসালাত শব্দ দুটি সমর্থক।

শরীয়তের পরিভাষায় আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের পক্ষ থেকে পৃথিবীর মানুষের কাছে তার হিদায়াত, পথ-নির্দেশনা এবং আদেশ-নিষেধ ও বিধি-বিধান প্রভৃতি অবিকলভোবে পৌছে দেওয়ার নাম রিসালাত।

নবি ও রাসূলের মধ্যে পার্থক্য: প্রত্যেক রাসূল নবি ছিলেন, কিন্তু প্রত্যেক নবি রাসূল নন। রাসূলকে নতুন শরীয়ত দিয়ে তো পৌঁছানোর আদেশ দেওয়া হয়। কিন্তু নবিদের পূর্বের শরীয়ত মোতাবেক দাওয়াত দেওয়ার জন্য প্রেরণ করা হয়েছে। একটি বর্ণনায় পাওয়া যায়, কিতাব বা সহিফা প্রাপ্ত রাসুলের সংখ্যা ৮ জন বাকি ৩০৫ জন রাসুলের প্রতি স্বতন্ত্র কোনো কিতাবও নাজিল হয় নাই।

রাসূল প্রেরণের রহস্য : প্রথমত বান্দাদেরকে কোনো বান্দার ইবাদাত করা হতে মুক্ত করে প্রকৃত প্রতিপালকের (আল্লাহর) ইবাদাতের দিকে যাওয়া এবং সৃষ্টিজীবের দাসত্বের বন্ধন থেকে মুক্ত করে স্বীয় প্রতিপালকের (আল্লাহর) স্বাধীন ইবাদাতের পথ দেখানোর গুরুদায়িত্ব অর্পণ করে রাসুলকে পৃথিবীতে পাঠানো হয়েছে বা হয়। আল্লাহপাক ইরশাদ করেছেন, আমি প্রত্যেক উম্মাতের মধ্যেই রাসূল প্রেরণ করেছি এই মর্মে যে, তোমরা আল্লাহর ইবাদাত কর এবং তাগূত (আল্লাহ ব্যতীত অন্যের ইবাদাত) থেকে নিরাপদ থাক। [সূরা আন-নহল, আয়াত-৩৬]

দ্বিতীয়ত যে উদ্দেশ্যে আল্লাহ সৃষ্টিজীব সৃষ্টি করেছেন, সে উদ্দেশ্যের সাথে (মানুষকে) পরিচয় করানো রাসুল পাঠানোর একটি মূল রহস্য। যাদেরকে আল্লাহ তাঁর সৃষ্টজীব হতে মনোনয়ন করেছেন এবং সকলের উপর প্রাধান্য দিয়েছেন একমাত্র তারাই কেবল রাসুল হওয়ার সৌভাগ্য লাভ করেন।
রাসূলগণের আলামত বা নিদর্শনসমূহ : 
আল্লাহপাক তাঁদেরকে অকাট্য প্রমাণ এবং স্পষ্ট মু’জিযা (মানুষের সাধ্যাতিত বিষয়) দিয়ে শক্তিশালী করেছেন। যা তাঁদের সত্যতা এবং তাঁদের  নবূয়ত ও রিসালাতের বিশুদ্ধতার উপর প্রমাণ বহন করে। সঙ্গত কারনেই আল্লাহ স্বীয় রাসূলগণের সত্যতা এবং দৃঢ়তা প্রমাণে তাঁদের হাতে মানুষের সাধ্যাতীত বিষয়সমূহ সংঘটিত করেছেন।

রাসূলগণের আলামত ও মুজিযার পরিচয় : আল্লাহ মহান মানুষের সাধ্যাতীত বিভিন্ন অলৌকিক বিষয়াবলী স্বীয় নবি ও রাসূলগণ থেকে প্রকাশ করেছেন। এ সকল মুজিযা ও নিদর্শনের উদাহরণ আমরা ইতিহাসে খুজে পাই। হজরত ঈসা কর্তৃক তাঁর কাওম বা জাতি তাদের বাড়িতে কি খাবে ও কি গুদামজাত করবে, তার সংবাদ দেওয়া। হজরত মুসার লাঠি সাপে রূপান্তরিত হওয়া এবং আমাদের রাসূল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্য চাঁদ দ্বিখন্ডিত হওয়া ইত্যাদি।

রাসূগণের উপর ঈমান আনার গুরুত্ব ও প্রভাব : রাসূলদের প্রতি ঈমান আনা ইসলামের মৌলিক বিষয়। রাসুলদের প্রতি বিশ্বাস না রাখলে ইমান পরিপূর্ণ হবে না এবং প্রতিটি মুসলিমের জীবনে এই বিশ্বসের বিশেষ বড় প্রভাব রয়েছে, তন্মধ্যে কিছু নিচে উল্লেখ করা হল-

১. বান্দার প্রতি আল্লাহর বিশেষ দয়া ও গুরুত্ব সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন। কারণ তিনি মানুষদের প্রতি রাসূল প্রেরণ করেছেন, যাতে তাঁরা তাদেরকে সঠিক পথের দিশা দেন এবং তাদের নিকটে ইবাদাতের পদ্ধতি বর্ণনা করেন। কারণ মানুষের জ্ঞান এসব জানার জন্য যথেষ্ট নয়। নবি মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, আমি আপনাকে বিশ্ববাসীর জন্যে রহমত স্বরূপই প্রেরণ করেছি। (সূরা আল আম্বিয়া আয়াত: ১০৭।

২. এই বড় নিয়ামতের দরুন মহান আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা।

৩. রাসূলগণকে ভালবাসা, তাঁদেরকে সম্মান করা এবং তাঁদের উপযুক্ত প্রশংসা করা। কেননা, তাঁরা আল্লাহর ইবাদাত করেছেন, রিসালাত পৌঁছানো এবং বান্দাদেরকে নসিহতের খিদমত আঞ্জাম দিয়েছেন।

৪. রাসূলগণ আল্লাহর পক্ষ থেকে যে রিসালাত নিয়ে এসেছেন তার অনুসরণ করে সে অনুযায়ী আমল করা। আল্লাহপাক ইরশাদ করেছেন, এরপর যদি আমার পক্ষ থেকে তোমাদের কাছে হেদায়েত আসে, তখন যে আমার বর্ণিত পথ অনুসরণ করবে, সে পথভ্রষ্ট হবে না এবং কষ্টে পতিত হবে না।যে আমার স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, তার জীবিকা সংকীর্ণ হবে এবং আমি তাকে কিয়ামতের দিন অন্ধ অবস্থায় উত্থিত করব। (সূরা ত্বহা আয়াত ১২৩-১২৪)

সৌজন্যে : প্রিয়.কম

Comment

লেখক পরিচিতি

আবদুল্লাহ মারুফ

আমি আবদুল্লাহ মারুফ। বর্তমানে অধ্যয়নরত আছি আল বায়ান অ্যারাবিক লানিং সেন্টারে। পাশাপাশি নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি হেরার জ্যোতি ও মাসিক ঘাসফড়িঙ -এর। পড়াশুনা, লেখালেখি আর ঘুরে বেড়ানো এই আমার ছোট্ট জীবন। ইসলাম প্রতিদিনের সাথে আছি কন্ট্রিবিউটিং রাইটার হিসেবে।

কমেন্টস করুন