ইতিহাস জীবনী নবি-রাসুল বিবিধ ইতিহাস

হজরত ইদরিস (আ.) দেখতে কেমন ছিলেন?

গোধূম-বর্ণ, পূর্ণাবয়ব, মাথায় কম চুল, সুশ্রী ও সুদর্শন, ঘন দাড়ি, রঙরূপ ও চেহারার কমনীয়তা, কঠিন বাহু, প্রশস্ত কাঁধ, শক্ত হাড়, হালকা-পাতলা গঠন, চোখ দুটি উজ্জ্বল সুরমা রঙের, কথাবার্তায় গাম্ভীর্যতা, নীরবতাপ্রিয়, গম্ভীর ও দৃঢ়চেতা, চলাচলে নিম্নদৃষ্টি, চরম পর্যায়ের চিন্তা ও অনুসন্ধানে অভ্যস্ত, ক্রোধের সময় অত্যন্ত ক্রুদ্ধ, কথা বলার সময় তর্জনী দ্বারা বার বার ইঙ্গিত করতে অভ্যস্ত। হজরত ইদরিস (আ.) ৮২ বছর আয়ু পেয়েছিলেন। তাঁর আংটির ওপর এই বাক্যটি অঙ্কিত ছিলো- ‘আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসের সঙ্গে সঙ্গে ধৈর্য বিজয়ের কারণ হয়ে থাকে।’ আর তাঁর কোমরবন্দের ওপর লিখিত ছিলো, প্রকৃত ঈদ বা আনন্দ আল্লাহ তাআলার ফরজ কর্তব্যগুলো সংরক্ষণের মধ্যেই নিহিত; দীনের পূর্ণতা শরিয়তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এবং মানবতার পূর্ণতা অর্জনেই ধর্মের পূর্ণতা সাধিত হয়।’

আর জানাযার নামাযের সময় তিনি যে-পাগড়িটি বাঁধতেন তাতে নিচের বাক্যটি লেখা থাকতো, ‘সেই ব্যক্তি ভাগ্যবান যে নিজের নফসের প্রতি দৃষ্টি রাখে। আর রবের দরবারে মানুষের জন্য সুপারিশকারী হলো তার সৎকর্মসমূহ।’ হজরত ইদরিস (আ.)-এর অনেক উপদেশ ও নসিহত এবং তাঁর চালচলন ও চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য সম্পর্কিত বাণীসমূহ প্রসিদ্ধ রয়েছে। তার মধ্যে থেকে কয়েকটি বাণী নিচে উল্লেখ করা হলো- ১। আল্লাহ তাআলার সীমাহীন নেয়ামতের শোকর আদায় মানব-ক্ষমতার বাইরে। ২। যে ব্যক্তি জ্ঞানের পূর্ণতা ও সৎকাজের আকাক্সক্ষা করে, তার জন্য মূর্খতার কারণসমূহ এবং অসৎকাজের কাছেও যাওয়া উচিত নয়। তুমি কি দেখো না যে সব দর্জি সেলাই করতে চাইলে সুই হাতে নেয়, বর্ম হাতে নেয় না। সুতরাং, সবসময় এ-বাক্যটির প্রতি যেনো লক্ষ্য থাকে, ‘আল্লাহকেও পেতে চাইবে আবার দুনিয়ার মোহেও মত্ত থাকবে তা অসম্ভব কল্পনা এবং পাগলামি ছাড়া কিছু নয়। ৩। দুনিয়ার ধন-দৌলতের পরিণাম আক্ষেপ এবং অসৎকাজের পরিণাম অনুতাপ। ৪। আল্লাহ তাআলা যিকির ও নেক আমলে খাঁটি নিয়ত থাকা শর্ত। ৫। মিথ্যা শপথ করো না। আল্লাহ তাআলার পবিত্র নামকে কসমের জন্য অনুশীলনীয় শ্লেটরূপে ব্যবহার করো না। মিথ্যাবাদীদেরকে কসম খাওয়ার প্রতি উৎসাহিত করো না। কারণ, এ-ধরনের কাজ করলে তুমিও তাদের পাপের অংশীদার হয়ে যাবে। ৬। হীন পেশা অবলম্বন করো না। (যেমন, সিঙ্গা লাগানো, গৃহপালিত পশুকে পাল দেখিয়ে বিনিময় গ্রহণ করা ইত্যাদি।) ৭। (শরিয়তের বিধান জারি করার জন্য পয়গম্বর কর্তৃক নিয়োজিত) বাদশাহকে মান্য করো। নিজের মুরুব্বী ও বয়ঃজ্যেষ্ঠদের সামনে বিনয়ী থেকো। আর সবসময় আল্লাহ তাআলার স্তুতি দ্বারা নিজের জিহ্বাকে আর্দ্র রেখো। ৮। জ্ঞান-বিজ্ঞান আত্মার জীবন। ৯। অন্যের সচ্ছল জীবিকার প্রতি হিংসা পোষণ করো না। কারণ তাই এই আনন্দময় জীবনযাপন ক্ষণস্থায়ী। ১০।  যে-ব্যক্তি জীবিকা নির্বাহের প্রয়োজনে বেশি প্রত্যাশা করে সে কখনোই তৃপ্ত হতে পারে না।

তারিখুল হুকামার ৩৪৮ পৃষ্ঠায় তৃতীয় হারমাসের আলোচনায় এটাও বর্ণিত হয়েছে যে এক দল আলেম এই বিশ্বাস পোষণ করেন যে হজরত নুহ (আ.)-এর প্লাবনের পূর্বে পৃথিবীতে যে-পরিমাণ বিদ্যা প্রসার লাভ করেছে, তার সবকিছুরই আদি শিক্ষক এই প্রথম হারমাস। তিনি মিসরের উচ্চভূমির অধিবাসী ছিলেন এবং হিব্রুভাষীরা তাঁকে খানুখ নবী বলে মানতো। তিনি হজরত আদম (আ.)-এর প্রপৌত্র ছিলেন। অর্থাৎ খানুক (ইদরিস) বিন ইয়ারুদ বিন মাহলাইল বিন কীনান বিন আনুশ বিন শীস বিন আদম (আ.)।

তাঁরা এটাও দাবি করেন যে, দর্শনশাস্ত্রের গ্রন্থগুলোতে যেসব জ্ঞানগর্ভ আলোচনা এবং নক্ষত্রসমূহের গতিবিধির বিবরণ পাওয়া যায় তা সর্বপ্রথম হজরত ইদরিস (আ.)-এর পবিত্র জবান থেকে নিসৃত হয়েছে। আল্লাহ তাআলার ইবাদতের জন্য ইবাদতখানা নির্মাণ, চিকিৎসা শাস্ত্রের আবিষ্কার, জমিন ও আসমানের যাবতীয় বস্তু সম্পর্কে যথাপোযুক্ত কবিতার মাধ্যমে মতামত প্রকাশই তাঁর প্রাথমিক কার্যাবলির অন্তর্ভুক্ত। তিনি সর্বপ্রথম প্লাবনের সংবাদ প্রদান করেন এবং আল্লাহর বান্দাদেরকে ভীতি প্রদর্শন করেন। তিনি বলেছিলেন, আমাকে দেখানো হয়েছে যে তা একটি আসমানি মহামারী। তা পৃথিবীকে পানি ও আগুনের মধ্যে জড়িয়ে ধরছে। এই দৃশ্য দেখে ইদরিস (আ.) যাবতীয় জ্ঞানের ধ্বংসপ্রাপ্তি এবং শিল্প ও পেশার ধ্বংস হওয়ার ব্যাপারে শঙ্কিত হয়ে পড়লেন। তিনি মিসরে পিরামিড এবং চারদিক থেকে বন্ধু প্রকোষ্ঠ নির্মাণ করে সেগুলোতে যাবতীয় শিল্প এবং সে-সম্পর্কিত নব-আবিষ্কৃত যন্ত্রপাতিসমূহের ছবি বানালেন। তিনি সকল জ্ঞান ও শাস্ত্রের তথ্যাবলি ও বিবরণ অঙ্কিত করালেন। যাতে এসব শিল্প ও বিদ্যা চিরকালের জন্য স্থায়ী থাকে এবং ধ্বংসের থাবা তাদের কোনো ক্ষতি করতে না পারে।

Comment

লেখক পরিচিতি

জাহিদ হাসান মিলু

আমি জাহিদ। সরকাারি কাগজপত্রের জাহিদুল ইসলাম থেকে বেসরকারি কাগজপত্রে জাহিদ হাসান মিলু- নামের এই বিচিত্র পরিবর্তনের পেছনে একটা মিষ্টি গল্প আছে।
জন্মেছি গোপালগঞ্জ জেলার অখ্যাত গ্রাম প্রশন্নপুরে, ১৯৯৬ সালের ডিসেম্বরে। কী এক বিশেষ কারণে যেন কাগজকলমে বয়েস কমিয়ে আমাকে আরও তিনবছরের ছোটো করে রাখা হয়েছে। বাবা মা দুজনেই অক্ষর না শিখেও আমার জীবনের শ্রেষ্ঠতম স্বাক্ষর হয়ে আছেন।
অবুঝ বয়েসে পারিবারিক স্বপ্নের কারণে ভর্তি হতে পেরেছিলাম মাদ্রাসায় , আলহামদুল্লিলাহ। জীবনের সবথেকে বড় পারিবারিক গিফ্ট ছিল এটা আমার জন্য। কুরআন পড়তে শিখলাম, মুখস্থ করতে পারলাম। অর্থ জানলাম এবং ব্যাখ্যাও পড়লাম।
আমাদের পাড়ার মাদ্রাসা কুলিয়ার ভিটায় পড়ার সময় ধর্মের প্রতি আমাদের ভেতরে যে বীজটা রোপিত হয়েছিল, সেটা ডালাপাল মেলে খোলা হাওয়ায় বেড়ে ওঠার সুযোগ পায় প্রাণের প্রতিষ্ঠান এরাবিল মডেল মাদ্রাসায়। তারপর? তারপর আর কি- এখন পড়াশোনা করছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্নালিজম বিভাগে।
দায়ী হওয়ার স্বপ্ন আমার সবথেকে বড় স্বপ্ন। স্বপ্নটি পূরণ করতেই পড়ছি, শুনছি, দেখছি, শিখছি এবং অপেক্ষা করছি।

কমেন্টস করুন