ফিচার রাজনীতি

প্রচলিত ইসলামী রাজনীতির বেহাল অবস্থা

বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিক ইসলামী রাজনীতি নতুন নয়। মুসলিম শাসনামলে গণতান্ত্রিক রাজনীতি ছিল না। সেখানে রাষ্ট্র বা সরকারের বিরোধীতা করার সুযোগও ছিল না। ছিল দীনি রাজনীতি করার অবারিত সুযোগ। যাতে মানুষ ও সমাজ পরিবর্তন সম্ভব। প্রতিষ্ঠিত মুসলিম সরকারকে উচ্ছেদ করে ক্ষমতা দখলের কোনো নিয়ম বা প্রচেষ্টা মুসলিম বিধানে অনুমোদিত নয়। গঠনমূলক সমালোচনা সবসময় ছিল। ছিল শাসকদের জন্য দিক নির্দেশনা। সরকার বা ব্যবস্থপনার বিরোধীতাকে সহজেই বিদ্রোহ গণ্য করা হতো। যার শরীয়তসম্মত সাজা ছিল প্রাণদন্ড।
গণতন্ত্রে বিরোধী রাজনীতির ধারণা আছে। আছে জনগণের মতামত নিয়ে ক্ষমতায় যাওয়ার সুযোগ। ইসলামে দীনি কাজের পদ্ধতি, বিশাল গভীর রাজনীতির প্রকৃত রূপ। যা সাময়িক দখল বা নিয়ন্ত্রন নয়, চিরস্থায়ী বিপ্লব ও পরিবর্তন। যে ধরণের রাজনীতি করেছেন এদেশে আগত লাখো পীর আউলিয়া ও সুফী দরবেশ। মুঘল বাদশাহ আকবরের ভ্রান্ত মতবাদ দীনে ইলাহির বিরুদ্ধে হযরত মুজাদ্দিদে আলফে সানী আহমদ সরহিন্দির আন্দোলনের ধরন ছিল ঠিক এমনই। বাংলাদেশে হাজার বছরের উলামা মাশায়েখ ও ইসলামী আন্দোলনকারীদের কাজের উদ্দেশ্য যেমন ছিল মানুষ তৈরি ও সমাজগঠন। পাশ্চাত্য গণতান্ত্রিক রাজনীতি ও নীতিচ্যুত লোভী রাজনীতিকদের কারণে আজ আদর্শের রাজনীতিও প্রায় সমান কলুষিত। ক্ষেত্র বিশেষে অধিক অধঃপতিত, সুবিধাবঞ্চিত তো বটেই।
বাংলাদেশ শতকরা ৯২ ভাগ মুসলমানের দেশ। যদিও দীনি শিক্ষার অভাবে এ দেশের নেতৃত্ব ইসলামী ব্যবস্থার সাথে পরিচিত নয়। ইসলামপন্থীরাও সুন্নাহর আসল স্বরূপ নিয়ে অগ্রসর নয়। উলামায়ে কেরাম অনেকেই ইলম থাকা সত্তে¡ও রাষ্ট্র ও সমাজের ব্যাপারে সচেতন নন। যারা সচেতন আছেন, পরিবেশগত কারণে তাদের অনেকেই রাজনীতিতে আসেন না। তা ছাড়া রাজনীতির ধারণাও এ দেশে ভ্রান্তিতে পূর্ণ। দীনি বা নববী সিয়াসত আর প্রচলিত রাজনীতি যেহেতু এক নয়, সুতরাং অসংখ্য উলামায়ে কেরাম রাজনীতি-সচেতন ও যোগ্য হওয়া সত্তে¡ও প্রচলিত রাজনীতিতে আসেন না। অজ্ঞ লোকেরা তাদের অরাজনৈতিক মনে করলেও আসলে তারা একটি ব্যাপক গভীর ও অর্থবহ রাজনীতিতেই আছেন। এটিই শরীয়তী রাজনীতি। সুতরাং কোনো আলেম রাজনীতি করেন না, এটা আমি বিশ্বাস করি না।
আপনি যদি কোরআন-সুন্নাহ ও সীরাত মুতালাআ করেন, তা হলে পলিটিক্স খুঁজে পাবেন না। যার অর্থ রাজনীতি। আপনি পাবেন কালেমার দাওয়াত, কিতাবুল্লাহর তিলাওয়াত, তালীম, তাযকিয়া, তরবিয়ত ও জিহাদ। এসব কি রাজনীতি নয়? নাগরিক তৈরি, পরিবার ও সমাজ গঠন, মানবসম্পদ উন্নয়ন, আমিরকে মানা, সংগঠিত থাকা, এ সবই তো সফল রাষ্ট্রের জন্য অপরিহার্য। মানুষের চিন্তা-চেতনা, ইবাদত-বন্দেগী, আর্থ-সামাজিক লেনদেন ও পারস্পরিক মানবিক নৈতিক সম্পর্ক এবং আত্মশুদ্ধিসহ সমাজ ও রাষ্ট্রের সংস্কার ইত্যাদি সবই ওপরে বর্ণিত কর্মসূচির মধ্যে শতভাগ নিহিত আছে।
হাজার বছর মুসলিম শাসনের অনুগত থেকে, বিরোধী রাজনীতি না করে, সুফী-দরবেশ, আলেম-ওলামা, পীর-মাশায়েখগন যে দীনি রাজনীতি বা আন্দোলন করেছেন, তার ফলেই ২৫০ বছর যাবত ইসলামী শাসন না থাকলেও এদেশের মানুষের মনে ও আচরণে যে ধর্মীয় ভাবধারা আছে তা সে রাজনীতিরই ফসল। বর্তমানেও সব ইসলাম প্রচারক যদি নববী রাজনীতি করেন, তাহলে তারা দুনিয়ার ফেতনায় পড়বেন না, দৃশ্যতও হবে তাদের আদর্শের বিজয়। মানুষ তৈরি ও সমাজগঠন তাদের মূল লক্ষ্য। এ মানুষ ও সমাজ শাসকদের উপর গভীর প্রভাব রাখে। শাসক যেই হোন, তিনি যেন সমাজের শক্তিকে মানতে বাধ্য হন। এটিই ইসলামী রাজনীতি।
যেমন বর্তমান শাসকরাও ধর্মীয় অঙ্গনের সাথে সুসম্পর্ক ও সমঝোতার প্রয়োজন মনে করেন। কেননা, ইসলামী অঙ্গন মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রভাব বিস্তার করে। প্রায় ৮ কোটি মানুষ বছরের ৫২ জুমায় দেশের সাড়ে ৪ লাখ মসজিদে শুধু জুমার দিনেই আল্লাহকে সেজদা করেন এবং অন্তত দেড় ঘন্টা তারা মনোযোগ দিয়ে দীনের কথা শোনেন। গণসংযোগের এত ব্যাপক সার্কেল ধর্মীয় অঙ্গন ছাড়া আর কারও হাতে নেই। এরা প্রচলিত রাজনীতিতে, বাতিল প্রায় গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে না এসে যদি অতীত মুরব্বীদের দাওয়াত ও ইসলাহের পদ্ধতি ধরে রাখেন, তাহলে তারাই হবেন সফল রাজনীতিক। যে রাজনীতি হাজার বছর ধরে বাংলাকে বিশ্ব খেলাফতের অংগ হিসাবে আলোকিত করে রেখেছে। শাসকরা বদলে গেছে কিন্তু ঈমান ও ইসলামের প্রভাব পরিবর্তিত হয়নি। মানুষ ও সমাজ শরীয়তের উদ্দীপনাই ধরে রেখেছে। ইসলামী শিক্ষা ও সংস্কৃতি মানুষের দেহ মনে প্রিন্ট হয়ে আছে। সামান্য যত্মেই তা ফুলে ফলে সু শোভিত হয়ে উঠতে পারে।
নগর-সভ্যতা বা নাগরিক রাষ্ট্র যখন বৃহৎ ভূগোল নিয়ে বিশ্বময় একটি কল্যাণ-রাষ্ট্রের রূপ পরিগ্রহ করে ইসলামে তখনো এটিকে দুনিয়াদারী বলে গণ্য করা হয় না। যদিও দুনিয়াদাররা তাদের পরিভাষায় একে পরাশক্তি, সাম্রাজ্য কিংবা বৃহৎ বাদশাহী আখ্যায়িত করে। যুগে যুগে যেসব মামলাকাত, সালতানাত, হুকুমাত ইত্যাদি নাম গ্রহণ করে একধরনের রাজকীয় ধারণা নির্মাণ করেছে। কিন্তু আসলে ‘খিলাফত আলা মিনহাজিন নবুওয়াহ’ নামের বৈশ্বিক রাষ্ট্রব্যবস্থাটি মসজিদে নববীর সামগ্রিক কর্মসূচিরই একটি ফলিত বাস্তবায়ন মাত্র। শরীয়তে যাকে ইমামতে সুগরা ও ইমমাতে কুবরা বলা হয়।
এ খিলাফত-পদ্ধতির রাজনীতি যখন একটি জনপদের সবচেয়ে বড় বুযুর্গ ও আহলে ইলমগণ ইমারতের আওতায় জামাতবদ্ধ হয়ে সুচিন্তিতভাবে পরিচালনা করেন, সাথে শক্তি ও অর্থনীতি যোগ হয়, নানা শ্রেণি ও পেশার সমমনা বিশেষজ্ঞরা এতে সন্নিহিত হন তখন ইমাম বা আমীর একটি মুসলিম জনপদকে দীনের পূর্ণাঙ্গ রূপরেখার ওপর চালানোর উদ্যোগ গ্রহণ করার নামই খিলাফত। পশ্চিমা ধারণার ফলে, দীর্ঘদিন খেলাফত না থাকার ফলে, জনগণ পশ্চিমা শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার ফলে, অপেক্ষাকৃত কম যোগ্য ও অল্প শিক্ষিত আলেমগণ প্রচলিত রাজনীতিতে আসার ফলে মুসলিম সমাজেও দীন, সিয়াসত ও ইমারতের ধারণা ধূলিধূসরিত হয়ে যায়।
দীর্ঘ ১৩ শ বছর মোটামুটি একটি কেন্দ্রীয় শৃঙ্খলায় মুসলিমবিশ্ব পরিচালিত হয়। কখনো নিষ্কলুষ খিলাফত (খিলাফতে রাশেদা) কখনো কোনো শাসকবংশ, কখনো কোনো নতুন শাসকগোষ্ঠী কেন্দ্রীয়ভাবে মুসলমানদের পরিচালনা করে। কেন্দ্র দুর্বল হয়ে পড়লে আঞ্চলিকভাবে কেন্দ্রকে স্বীকার করেও অনেক সৎ ও যোগ্য শাসক খেলাফতে রাশেদার আলোকে বিশাল বিশাল রাজ্য পরিচালনা করেন।
কোরআন-সুন্নাহর মূলনীতির ওপর এসব আমীর বা শাসক ব্যক্তিগত রুচি ও বৈশিষ্ট্য নিয়ে বর্ণিল চরিত্রের থাকলেও তাদের বিচার ও প্রশাসন ছিল শত ভাগ ফিকাহ ও ফতোয়ার আলোকে পরিচালিত। শত শত আঞ্চলিক শাসকের নাম মুসলমানের ইতিহাসে এমন পাওয়া যাবে, যাদের প্রত্যেকেরই শাসনব্যবস্থা আধুনিক পশ্চিমা রাষ্ট্রব্যবস্থার সবগুলো থেকে হাজার গুণ সফল ও উত্তম। ন্যায়বিচার, সুশাসন ও নাগরিক অধিকারের ক্ষেত্রে এসব শাসক আরও হাজার বছর বিশ্ববাসীর অনুসরণীয় ও পাঠ্য।
বৃটিশ যুগে সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী আন্দোলনই ছিল রাজনীতি। ছিল জিহাদ, দাওয়াত, তা’লীম ও ইসলাহের সংগ্রাম। পাকিস্তান আমলে গণতান্ত্রিক কারণে ইসলামী রাজনীতিও প্রচলিত পদ্ধতিতে প্রক্রিয়াগত হয়ে পড়ে। স্বাধীনতার পর ইসলামী রাজনীতিকদের একাংশ মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী হওয়ায় তাদের কার্যক্রম বাধাগ্রস্থ হয়। ্এরপর গণতান্ত্রিক রাজনীতির ব্যর্থতায় দিনে দিনে সমাজের বিরাট অংশ রাজনীতি বিমুখ হয়ে পড়ে। বৃহত্তর ইসলামী কর্মকান্ড যারা চালাচ্ছেন, তাদের রাজনীতি কখনও বন্ধ হয় না।
তবে, প্রথাগত রাজনীতিতে ৪৭ পরবর্তি বড় ইসলামী দল জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ও নেজাম ইসলাম পার্টি দেশের তৃতীয় পরে দ্বিতীয় বৃহৎ শক্তিতে পরিণত হয়। ৭১ এর পর বড় ইসলামী দল ছিল হাফেজ্জী হুজুরের খেলাফত আন্দোলন। যার নেতারাই বর্তমান অধিকাংশ ইসলামী দলের নেতা। প্রথমে ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন চরমোনাই মরহুম পীর ও ব্যারিষ্টার কোরবান আলী নেতৃত্ব দেন। কোরবান আলী আলাদা হয়ে গঠন করেন ইসলামী ঐক্য আন্দোলন। বর্তমানে শাসনতন্ত্র আন্দোলনের নাম ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। এটি নিছক রাজনৈতিক দল নয়। বৃহৎ ইসলামী কার্যক্রমও এর আরধ্য।
খেলাফত আন্দোলন একাধিক, খেলাফত মজলিস একাধিক, নেজাম ইসলাম একাধিক, ইসলামী ঐক্যজোট একাধিক, জমিয়ত একাধিক আকারে রাজনীতি করছে। গণতান্ত্রিক রাজনীতির নতুন হিসাব নিকাশে সাধারণ সব দলের যে অবস্থা, ইসলামী সংগঠনগুলোর অবস্থাও এর ব্যাতিক্রম নয়। তবে, ইসলামী কর্মতৎপরতা অতীত যেমন নির্মোহ ও নিষ্কলুষ চলমান রাজনীতির ধারা মোটেও তেমন নয়। এ ক্ষেত্রে কিছু চাপ, কিছু ক্ষমতা ও অর্থের লোভ, অনেক নীতিভ্রষ্ট মানুষকে কুপোকাৎ করেছে। যেজন্য ইসলামী রাজনীতি অনেক ক্ষেত্রেই অযোগ্যদের হাতে পড়েছে বলে দেশের মানুষ মনে করেন। আস্থার দারুণ অভাব ও শ্রদ্ধাবোধও ঘাটতির দিকে চলে যায়।
কিছু টাউট প্রকৃতির লোক নিজেদের ইসলামী রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টায় মেতে উঠে। দেশী বিদেশী এজেন্সি ইসলামী রাজনীতির ভবিষ্যত সম্ভাবনা নষ্ট করে দেওয়ার জন্য বহু নেতাকে ব্যবহার করে। জনপ্রিয় ও উদিয়মান অনেক চরিত্রকে নানাভাবে কলুষিত করে। খুব সতর্ক ও প্রকৃতই পরহেজগার নেতা কর্মী ছাড়া বিপুল পরিমাণ রাজনীতিক দিকভ্রষ্ট হন। সংসদে আসন পাওয়ার স্বপ্ন ও কিছু নগদ নারায়ণের লোভ, প্রচুর আলেম নামধারী রাজনীতিককে বিগত সময় তিলে তিলে বরবাদ করে দিয়েছে। তারা বামদের মত সামান্য মন্ত্রীত্ব বা সংসদে যাওয়ার সুযোগও পাননি। ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট না পেয়ে তাদের অনেকই খুব সামান্য পকেটমানির বিনিময়ে নিজেদের অবস্থান, অস্তিত্ব, ব্যক্তিত্ব, কণ্ঠস্বর সবই হারিয়ে ফেলেছেন। ইসলাম বিদ্বেষী শক্তি যে কাজটি শত চেষ্টা করেও অতীত যুগের আলেম রাজনীতিকদের মধ্যে ঢুকাতে পারেনি। এবার তা সফল হল।
যারা রাজনীতির সুবাদে দীনি অঙ্গনের কণ্ঠস্বর ছিলেন, তাওহীদি জনতার প্রতিবাদের প্রতিক ছিলেন, তারাও রহস্যজনক দুর্বলতায় ঢাকা পড়ে যান। কণ্ঠ তাদের স্থিমিত হয়ে যায়। যা বাংলাদেশে ইসলামী রাজনীতির ধারার জন্য স্থায়ী ক্ষতির কারণ হয়ে যায়। কৌশলগত কিছু কারণে ছন্দপতনের শিকার হলেও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ইস্যুভিত্তিক বক্তব্য ও বিবৃতি চালিয়ে যাওয়ায় তারা রাজনীতির অঙ্গনে নিজেদের সরব উপস্থিতি ধরে রেখেছে।
কিছু দল প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সরকার ঘেঁষা হয়ে থেকেও কোনো মূল্যায়ন কিংবা ক্ষমতার ভাগ না পেয়ে বামদের চেয়েও বেশি নিগৃহের শিকার। এরফলে বস্তুগত ক্ষতির পাশাপাশি তারা আদর্শিক ঝুঁকিরও মুখোমুখি। মাঠের বিরোধী দলের সাথে থাকা ইসলামী দলগুলো শাসকদের নতুন কৌশলের ধরাশায়ী অংশের সহযাত্রী হিসাবে নিজেরাও সমান ক্ষতিগ্রস্থ। স্বতন্ত্র আদর্শিক অবস্থান ও সম্ভাব্য বৃহৎ ঐক্যের দিশা না পেয়ে দুই মেরুতে চলে যাওয়া প্রচলিত ইসলামী রাজনীতি এখন চরম ধ্বসের মুখে। এসময় ইসলামী রাজনীতিকে তার আদর্শিক ও ঐতিহ্যগত ধারায় ফিরে যাওয়ার কোনো বিকল্প দেখছেন না ইসলামী বিশেষজ্ঞগণ। ঐক্যও তাদের জন্য অপরিহার্য।

সৌজন্যে : দৈনিক ইনকিলাব

Comment

লেখক পরিচিতি

উবায়দুর রহমান খান নদভী

কিশোরগঞ্জের কৃতিসন্তান দেশবরেণ্য আলেমে-দীন ও সংসদ সদস্য মাওলানা আতাউর রহমান খান (রহ.) -এর বড় ছেলে মাওলানা উবায়দুর রহমান খান নদভী। তিনি একাধারে একজন বিদগ্ধ আলেম, দার্শনিক বক্তা, সমাজকর্মী, শিক্ষক, খতিব এবং সাংবাদিক। দৈনিক ইনকিলাবের স্বর্ণযুগ থেকেই যুক্ত রয়েছেন এবং বর্তমানে তিনি ইনকিলাবের সিনিয়র সহকারী সম্পাদক হিসেবে দায়িত্বরত আছেন।
দীনি ও জেনারেল উভয় শিক্ষায় শিক্ষিত জনাব নদভীর পড়াশোনা জীবনের প্রাতিষ্ঠানিক হাতেখড়ি হয় কিশোরগঞ্জের জামিয়া ইমদাদিয়াতে ভর্তি হওয়ার মাধ্যমে। মাওলানা নদভী দাওরায়ে হাদিস সমাপ্ত করেছেন ১৯৮৩ সালে কিশোরগঞ্জ এর জামিয়া ইমদাদিয়া থেকে। এরপর চট্টগ্রামের জামিয়া ইসলামিয়া পটিয়া থেকে আরবি সাহিত্যে তাখাসসুস করেছেন ১৯৮৪ সালে এবং স্নাতক সম্পন্ন করেছেন ১৯৮৫-৮৬ সালে ভারতের নদওয়াতুল ওলামায়। এম.এ ডিগ্রী নিয়েছেন ১৯৯৪ সালে। এরই মাঝে আবার ১৯৮৫ সালে মদিনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইসলামি দাওয়াহ ও সংস্কৃতির ওপর বিশেষ প্রশিক্ষণ নিয়েছেন তিনি এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ১৯৯২ সালে রাষ্ট্র ও রাজনীতি বিজ্ঞানে ডিপ্লোমা করেছেন। এছাড়া সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে মিডিয়ার ওপর আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ কোর্সও করেছেন জনাব নদভী।
উবায়দুর রহান খান নদভীর পিতার নাম মাওলানা আতাউর রহমান খান এবং মাতার নাম মুরশিদা-ই-আমিনা। ১৯৬৬ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর কিশোরগঞ্জের জামিয়া রোডস্থ নূর মঞ্জিলে জন্মগ্রহণ করেন নদভী। বর্তমানে তিনি বসবাস করেছেন ২/১ আর কে মিশন রোড, ঢাকায়। শিক্ষকতা এবং সাংবাদিতকায় সুদীর্ঘ ৩০ বছর যাবৎ আস্থার সাথে নিজেকে জড়িত রেখেছেন মাওলানা নদভী। ২৫ বছর যাবৎ জুমআর নামাজের খতিব হিসেবে দায়িত্বরত রয়েছেন ঢাকার মিরপুরস্থ মদিনা নগর মসজিদে।
১৯৭৮ সালে দৈনিক আল-আজাদে মাওলানা উবায়দুর রহমান খান নদভীর প্রথম লেখা প্রকাশিত হয়। লেখার নাম ছিলো সাহিত্য সাধনা। সাইয়্যেদ আবুল হাসান আলী নদভি রচিত আমার দেখা প্রাচ্য নামের একটি গ্রন্থের অনুবাদ তার প্রথম প্রকাশিত অনুবাদ গ্রন্থ এবং নিজস্ব প্রথম প্রকাশিত গ্রন্থের নাম অমুসলিম মনীষীদের চোখে আমাদের প্রিয়নবী (সা.)। এছাড়া আরো বেশ কিছু আলোচিত ও বিবেক জাগানিয়া গ্রন্থের জনক তিনি। মাওলানা নদভী রচিত আধুনিক বিশ্বের চল্লিশজন নওমুসলিমের আত্মকাহিনী, ইতিহাসের কান্না, হৃদয় থেকে, নবীজী (সা.) কেমন ছিলেন, রক্তভেজা গুজরাট, ছেঁড়া পাতা, মুজাহিদের জীবনকথা এবং আফগানিস্তানে আমি আল্লাহকে দেখেছি বইগুলোর প্রত্যেকটাই বেশ সাড়া জাগানো এবং ব্যবসা সফল।
দৈনিক ইনকিলাবে কাজ করার পাশাপাশি দেশের প্রায় সব বড় বড় কওমি মাদরাসাতে অতিথি অধ্যাপক হিসেবে ক্লাস নেওয়াটা মাওলানা উবায়দুর রহমান খান নদভীর বিশেষ একটি পরিচয়। পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘উপমহাদেশের ভাষায় আরবির প্রভাব’ বিষয়ে পিএইচডি সম্পন্নকারী মাওলানা উবায়দুর রহমান খান নদভীর কাছে ইসলাম ও মিডিয়ার মধ্যকার সম্পর্ক বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মিডিয়া হলো গণমানুষের মুখপত্র। আর ইসলাম গণমানুষের ধর্ম। গণমানুষের কাছে ইসলামের বাণী-বার্তা পৌঁছানো ইসলামের মৌলিক একটি দিক আর এই কাজে মিডিয়া হলো সবচেয়ে উত্তম মাধ্যম। সুতরাং একথা নিশ্চিন্তে বলা যায় যে, ইসলামের সবচেয়ে নিকটবর্তী মাধ্যম হলো মিডিয়া।’