জাতীয় সংবাদ

হজ নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে যা বললেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী

লিখেছেন মিরাজ রহমান

সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সচিবালয়ে হজ ব্যবস্থাপনার সমাপ্তি বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের ধর্ম-বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী মহোদয় কর্তৃক প্রদত্ত পূর্ণাঙ্গ বক্তৃতা।

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

ধর্ম-বিষয়ক মন্ত্রণালয় আয়োজিত “হজ ব্যবস্থাপনা-২০১৯” এর সফল সমাপ্তিতে আজকের সংবাদ সম্মেলন-এ উপস্থিত ধর্ম-বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সম্মানিত সচিব জনাব মো. আনিছুর রহমান, অন্যান্য কর্মকর্তাবৃন্দ, বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিনিধিবৃন্দ,

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ

প্রিয় সাংবাদিকবৃন্দ,

আমি প্রথমেই মহান আল্লাহ্‌ পাকের অশেষ শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি, যিনি আমাদের তাঁর মেহমান সম্মানিত হাজী সাহেবানের খেদমত করার সুযোগ দিয়েছেন এবং আমাদের ২০১৯ খ্রি./ ১৪৪০ হিজরি সালে বাংলাদেশের হজ ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত সুন্দর ও সফলভাবে সম্পন্ন করার তৌফিক দিয়েছেন, আলহামদুলিল্লাহ।

প্রিয় সাংবাদিক ভাই বোনেরা,

আমি আমার ব্যক্তিগত ও ধর্ম-বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাই বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা Mother of Humanity খেতাবে ভূষিত বিশ্বনন্দিত সফল রাষ্ট্রনায়ক জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রতি। মূলত মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধান ও দিক-নির্দেশনার ফলে ২০১৯খ্রি./ ১৪৪০ হিজরি সালে আমরা বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি সফলতম হজ ব্যবস্থাপনা উপহার দিতে পেরেছি। সুন্দর ও সুষ্ঠু হজ ব্যবস্থাপনার জন্য আমরা দেশ-বিদেশে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের পক্ষ থেকে অভিনন্দন লাভ করছি।

প্রিয় সাংবাদিকবৃন্দ,

হজ ব্যবস্থাপনা একটি বহুপাক্ষিক ব্যাপক বিষয়। এখানে বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের সরকার ও প্রশাসন জড়িত। দেশের মধ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, ধর্ম-বিষয়ক মন্ত্রণালয়, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন, স্বরাষ্ট্র, পররাষ্ট্র, জনপ্রশাসন, অর্থ ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ অনেকগুলো মন্ত্রণালয়, বিভাগ, দপ্তর, পরিদপ্তর ও সংস্থা জড়িত। এ ছাড়া হজ ব্যবস্থাপনার সাথে ধর্ম-বিষয়ক মন্ত্রণালয় অনুমোদিত হজ এজেন্সিসমূহ এবং এজেন্সিসমূহের সংগঠন ‘হজ এজেন্সিজ এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ’ (HAAB) সরাসরি সম্পৃক্ত। ধর্ম-বিষয়ক মন্ত্রণালয় হজ ব্যবস্থাপনার সমন্বয়কারী মন্ত্রণালয় হিসেবে দায়িত্ব পালন করে থাকে। এ  বছর ধর্ম-বিষয়ক মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সকল মন্ত্রণালয় ও সংস্থার সাথে অত্যন্ত নিবিড় সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে হজ ব্যবস্থাপনা পরিচালনা করেছে। ফলে আমাদের সাফল্যের সাথে জড়িয়ে আছে বেশ কিছু মন্ত্রণালয়, বিভাগ, দপ্তর, পরিদপ্তর, সংস্থা, সর্বোপরি গণমাধ্যমকর্মীদের আন্তরিক সহযোগিতা। সে জন্য ধর্ম-বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আমি সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। বিশেষ করে আমি ধন্যবাদ জানাই বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী জনাব মো. মাহবুব আলী এম.পি ও সম্মানিত সচিব জনাব মো. মহিবুল হককে। আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের সম্মানিত চেয়ারম্যান, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক এবং প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স লি. এর চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং সৌদি এরাবিয়ান এয়ারলাইন্সের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীকে যাদের আন্তরিক সহযোগিতার ফলে বাংলাদেশের হজযাত্রীদের  হজের সফর সহজ ও নিরাপদ হয়েছে । ধন্যবাদ জানাই পাসপোর্ট ও ইমিগ্রেশন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার (এনটিএমসি) এর পরিচালককে, আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই  স্বরাষ্ট্র  মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, জপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসমূহ এবং সকল জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা বাহিনীর সদস্যদের, যাদের সার্বিক সহযোগিতায় আমরা হজ ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত সুন্দরভাবে সম্পন্ন করতে পেরেছি। বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানাই সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের মান্যবর রাষ্ট্রদূত জনাব গোলাম মসিকে যিনি তাঁর সহকর্মীদের নিয়ে হজ কার্যক্রমের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রতিটি পর্যায়ে আন্তরিকভাবে যুক্ত থেকে আমাদের হজ কার্যক্রমকে ফল করার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। ধন্যবাদ জানাই কনস্যুলেট জেনারেল, জেদ্দার সম্মানিত কনসাল জেনারেল এবং অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীকে, যাঁরা নিরলসভাবে অক্লান্ত পরিশ্রম করে হজ ব্যবস্থাপনাকে সফল করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।

উপস্থিত সাংবাদিক ভাই বোনেরা,

বাংলাদেশের অধিকাংশ হজযাত্রী বেসরকারি হজ এজেন্সিসমূহের মাধ্যমে হজপালন করে থাকেন। হজ এজেন্সিগুলোর ভালো সেবা প্রদানের ওপর হজ ব্যবস্থাপনার সফলতা অনেকাংশে নির্ভরশীল। এ বছর অধিকাংশ হজ এজেন্সি সুনামের সাথে তাঁদের দায়িত্ব পালন করেছে। হজ এজেন্সিসমূহের কর্মকাণ্ড সমন্বয় করার ক্ষেত্রে এজেন্সিসমূহের সংগঠন ‘হজ এজেন্সিজ এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ’ (HAAB) প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করেছে। এ বছরের সফল হজ ব্যবস্থাপনায় হাব নেতৃবৃন্দ অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। সে জন্য হাবের সভাপতি জনাব মো. শাহাদাত হোসেন তসলিম, মহাসচিব জনাব ফারুক আহমদ সরদারসহ সকল নেতৃবৃন্দকে আন্তরিক অভিনন্দন ও ধন্যবাদ জানাই।

প্রিয় সাংবাদিকবৃন্দ,

আমি বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানাই প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক ও অনলাইন মিডিয়ার সকল সাংবাদিক বন্ধুদের, যারা মূল্যবান পরামর্শসহ বিভিন্নভাবে আমাদের সহযোগিতা করেছেন। যাদের আন্তরিক সহযোগিতা না পেলে আমরা হজ ব্যবস্থাপনাকে এত সুন্দর ও সফলভাবে সম্পন্ন করতে পারতাম না। ভবিষ্যতেও আমরা সাংবাদিক বন্ধুদের কাছ থেকে এরূপ সহযোগিতা পাব বলে আশা রাখি।

সাংবাদিক ভাই বোনেরা,

সুন্দর ও সফল হজ ব্যবস্থাপনার জন্য আমি বিশেষ সম্মান ও কৃতজ্ঞতা জানাই ভ্রাতৃপ্রতিম রাজকীয় সৌদি আরবের মহামান্য বাদশাহ খাদেমুল হারামাইন আশ্‌-শারীফাইন সালমান বিন আব্দুল আজিজ, ক্রাউন্স প্রিন্স His Excellency মোহাম্মদ বিন সালমান, সৌদি সরকারের মাননীয় হজ ও ওমরাহ বিষয়ক মন্ত্রী ড. সালেহ বিন তাহের বেনতেন, ডেপুটি মিনিস্টার ড. হোসাইন বিন নাসের আল শরীফ, ইসলামিক অ্যাফেয়ার্স, দাওয়া ও গাইডেন্স-বিষয়ক মন্ত্রী শেখ আব্দুল লতিফ বিন আব্দুল আজিজ আল শেখ, মোয়াসসাসা জুনুব এশিয়ার সম্মানিত চেয়ারম্যান ড. রাফাত ইসমাইল বদর, মহাপরিচালক ড. ওমর আকবর  ও মদিনা আদিল্লা অফিসের সম্মানিত চেয়ারম্যান জনাব হাতেম জাফরকে। আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই সৌদি সরকারের ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট বিভাগের প্রধান মেজর জেনারেল সুলাইমান বিন আব্দুল আজিজ আল ইয়াহইয়াসহ “Makkah Route Initiative” বাস্তবায়নের সাথে সংশ্লিষ্ট সৌদি ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের, যাদের আন্তরিক সহযোগিতার ফলে এ বছর প্রথম অত্যন্ত সফলতার সাথে বাংলাদেশি হজযাত্রীদের সৌদি আরব অংশের ইমিগ্রেশন জেদ্দার পরিবর্তে ঢাকায় সম্পন্ন করা সম্ভব হয়েছে । এই ব্যবস্থাপনার ফলে  বাংলাদেশি হজযাত্রীগণ অত্যন্ত সহজে দ্রুততম সময়ে ঢাকায় ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করেছেন এবং যারা জেদ্দায় ইমিগ্রেশন করেছেন তারাও অনেক সহজ ও দ্রুততম সময়ে ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করতে পেরেছেন। আমি ধন্যবাদ জানাই সৌদি আরবের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং পবিত্র মক্কা ও মদিনা শরীফের হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে যারা অত্যন্ত আন্তরিকভাবে বাংলাদেশি হাজীদের নিরলসভাবে সেবা দিয়েছেন। আমি বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানাই বাংলাদেশে নিযুক্ত সৌদি আরবের চার্জ  দ্যা এফেয়ার্স His Excellency হারকান ওয়ায়দি বিন সুয়াইয়া ও তাঁর সকল সহকর্মীর প্রতি যারা অত্যন্ত আন্তরিকতা ও দ্রুততার সাথে হজযাত্রীদের ভিসা প্রদানসহ যাবতীয় সহায়তা প্রদান করেছেন।

প্রিয় সাংবাদিকবৃন্দ,

গত ১০ আগস্ট এ বছরের পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হয়। ২০১৯ সালে হজে গমনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ থেকে সরকারি ব্যবস্থানায় ৬ হাজার ৯২৩ জন ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ১ লাখ ২০ হাজারসহ মোট ১ লাখ ২৬ হাজার ৯২৩ জন হজযাত্রী নিবন্ধন সম্পন্ন করেছিলেন। সকল হজযাত্রী কোনো প্রকার বিড়ম্বনা ছাড়াই ভিসা পেয়েছেন। ভিসাপ্রাপ্ত সকল হজযাত্রী হজে যেতে সক্ষম হয়েছেন। এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ করতে চাই, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যেভাবে নির্দেশ দিয়ে বলেছিলেন, “হাজিরা আল্লাহর মেহমান, তাঁদের চোখে আমি তিনি পানি দেখতে চাই না, কোনো হাজিকে যেন এহরাম পড়ে  রাস্তাঘাটে ঘুরতে না হয়।” আলহামদুলিল্লাহ, এ বছর কোনো হাজিকে হজে যেতে না পেরে রাস্তাঘাটে এহরাম পরা অবস্থায় ঘুরতে দেখা যায়নি।

হজ ব্যবস্থাপনার সাথে যু্ক্ত সদস্যসহ মোট ১ লক্ষ ২৭ হাজার ১৫২ জন হজযাত্রী এ বছর হজ পালন করেছেন। হজ চুক্তি অনুসারে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ও সৌদি এরাবিয়ান এয়ারলাইন্স যৌথভাবে বাংলাদেশের সকল হজযাত্রী পরিবহন করেছে। এ বছর বাংলাদেশ বিমান এবং সাউদিয়ার কোনো ফ্লাইট বাতিল হয়নি। গত ৪ জুলাই ২০১৯ তারিখে হজের ফ্লাইট শুরু হয়। এবং ০৫ আগস্ট ২০১৯ তারিখ পর্যন্ত হজের ফ্লাইট পরিচালিত হয়। ফিরতি ফ্লাইট শুরু হয় ১৭ আগস্ট তারিখে এবং ফিরতি ফ্লাইট শেষ হয় ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯ তারিখে। এ বছর ৫৯৮ টি হজ এজেন্সি হজ কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। বাংলাদেশি হাজি সাহেবানদের মধ্যে ১১৮ জন সৌদি আরবে ইন্তেকাল করেছেন যাদের মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনার হাজি ৫ জন এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনার হাজী ১১৩ জন। মৃত হাজি সাহেবদের মধ্যে পুরুষ ১০১ জন, মহিলা ১৭ জন। মক্কায় ১০৩ জন, মদিনায় ১৩ জন এবং জেদ্দায় ২ জন হাজি সাহেব ইন্তেকাল করেছেন। মক্কার ৩টি হাসপাতালে ৪ জন এবং মদীনা শরীফের ৩টি হাসপাতালে ৪ জন হাজি সাহেব গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় চিকিৎসাধীন ছিলেন।

গত ৮-১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯ সময়ে সৌদি আরবের ইসলামিক অ্যাফেয়ার্স, দাওয়া ও গাইডেন্স-বিষয়ক মন্ত্রীর আমন্ত্রণে আমি সৌদি আরব সফর করি। এ সময় ৯ সেপ্টেম্বর এবং ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ তারিখে আমি কাউন্সেলর (হজ) ও অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ে মক্কা ও মদীনার  হাসপাতালসমূহ পরিদর্শন করি এবং গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় চিকিৎসাধীন হাজি সাহেবদের খোঁজখবর নেই। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে উন্নত সেবা প্রদানের অনুরোধ জানাই। অসুস্থ হাজিরা সুস্থ হলে দ্রুত দেশে ফেরত পাঠানোর জন্য কাউন্সেলর (হজ)-কে নির্দেশ প্রদান করি।

সর্বশেষ তথ্যমতে গুরুতর অসুস্থ ৮ জন হাজি সাহেবের মধ্যে ৬ জন দেশে ফিরেছেন, ১ জন চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন এবং অপর ১ জন মক্কায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেছেন। মৃত্যুবরণকারী বাংলাদেশি হাজি সাহেবদের সাধারণত মক্কার সরাইয়া ও মদীনার জান্নাতুল বাকী কবরস্থানে দাফন করা হয়ে থাকে। আমি এ বছর মক্কা ও মদিনার হজ অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ অন্যান্যদের নিয়ে উক্ত কবরস্থান দুটি যিয়ারত করি এবং মৃত হাজি সাহেবদের রুহের মাগফেরাত কামনা করে দোয়া ও মোনাজাত করি। এ সময় কবরস্থানসমূহে দায়িত্ব পালনকারী ও অন্যান্য ব্যক্তিবর্গ সন্তোষ প্রকাশ করে জানান যে ইতিপূর্বে কেউ কখনো এরূপ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেনি।

উপস্থিত সাংবাদিকবৃন্দ,

হজ ব্যবস্থাপনা ধর্ম-বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব। জাতীয় হজ ও ওমরাহ নীতি ১৪৪০ হিজরি / ২০১৯ খ্রি. এর আলোকে আমরা এ বছরের হজ ব্যবস্থাপনার কার্যক্রম পরিচালনা করেছিলাম। ২০১৮ সালের ১৩ ডিসেম্বর সৌদি-বাংলাদেশ হজ চুক্তির মাধ্যমে ২০১৯ সালের হজ কার্যক্রম শুরু হয়। তার পূর্বে সুন্দর ও সফল হজ ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে আমরা হজ ব্যবস্থাপনা বিষয়ে একটি বার্ষিক কর্ম পরিকল্পনা তথা হজ ক্যালেন্ডার-২০১৯ প্রস্তুত করে হজ কার্যক্রম শুরু করি। হজ ব্যবস্থাপনায় আমাদের যেসব ক্ষেত্রে উন্নতি করার সুযোগ ছিল সেসব ক্ষেত্রে আমরা পরিবর্তন/ সংস্কার আনার চেষ্টা করেছি।

উপস্থিত সাংবাদিকবৃন্দ,

আপনারা জানেন, বাংলাদেশের হজ ব্যবস্থাপনা দুটি পর্বে বিভক্ত। বাংলাদেশ পর্ব এবং সৌদি আরব পর্ব। উভয় পর্বে সুষ্ঠু ও সুন্দর হজ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এ বছর আমরা যেসব উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ গ্রহণ করি সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো :

১. এ বছর প্রথমেই আমরা হজের খরচ কমিয়ে আনার চেষ্টা করি। ফলে হজযাত্রীদের শুধু বিমানভাড়া বাবদ এ বছর ১০ হাজার ১ শত ৯০ টাকা পর্যন্ত কমানো সম্ভব হয়েছে। অন্যান্য বছরের স্বাভাবিক ব্যয় বৃদ্ধির সাথে তুলনা করলে এ বছর প্রকৃত হিসেবে হজের ব্যয় বাড়েনি; বরং কমেছে। মূলত রাজকীয় সৌদি সরকার কর্তৃক সার্ভিস চার্জ বৃদ্ধি, অতিরিক্ত কর আরোপ এবং পরিবহন ব্যয় গত বছরের তুলনায় দ্বিগুণের বেশি বৃ্দ্ধি করায় হজের খরচ সর্বমোট ২৫,০০৬.২৫ (পঁচিশ হাজার ছয় টাকা পঁচিশ পয়সা) টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। এ বছর আকস্মিকভাবে সৌদি সরকার কর্তৃক হজের ব্যয় বৃদ্ধি না করা হলে আমাদের হজের ব্যয় ৩৫,০০০/- টাকা পর্যন্ত কমানো হয়েছে বলে গণ্য করা যায়।

২. ধর্ম প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই হজ ব্যবস্থাপনাকে অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে আরও  উন্নত করার লক্ষ্যে আমরা ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সকলে দৃঢ়ভাবে সংকল্পবদ্ধ হই। ইতিমধ্যে রাজকীয় সৌদি সরকারের হজ ও ওমরাহ বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং ইসলামিক অ্যাফেয়ার্স মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সৌদি আরব সফরের আমন্ত্রণ পাই। ধর্ম-বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সম্মানিত সচিবসহ আমাদের একটি প্রতিনিধিদল গত ২২ ফেব্রুয়ারি হতে ০২ মার্চ ২০১৯ খ্রি. তারিখ পর্যন্ত সৌদি আরব সফর করি। সফরের পূর্বে হজ এজেন্সিজ এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব)-সহ বাংলাদেশের হজ ব্যবস্থাপনার সাথে সংশ্লিষ্ট সকলকে নিয়ে বিস্তারিত আলাপ-আলোচনা করি এবং তাঁদের কাছ থেকে সুনির্দিষ্ট পরামর্শ গ্রহণ করি। সৌদি কর্তৃপক্ষের নিকট উপস্থাপনের লক্ষ্যে বিশেষভাবে ৬টি প্রস্তাব প্রস্তুত করা হয়। সফরকালে বাংলাদেশের বর্তমান মুসলিম জনসংখ্যার আনুপাতিক হারে প্রাপ্য অতিরিক্ত ২০ হাজার হজযাত্রীর কোটা বৃদ্ধি, সৌদি আরবের  বিমানবন্দরে বাংলাদেশি  হজযাত্রীদের  অপেক্ষার সময়  ও  কষ্ট কমিয়ে আনার লক্ষ্যে সৌদি আরবের পরিবর্তে বাংলাদেশেই প্রি-এরাইভাল ইমিগ্রেশন সম্পন্ন  করা, চলতি বছর হজের সময় মিনায় অবস্থানকালে বাংলাদেশি হজযাত্রীদের দ্বিতল খাট ব্যবহারে বাধ্য না করা, বাংলাদেশি  হজযাত্রীদের  উন্নত খাবার পরিবেশন,  বেসরকারি  ব্যবস্থাপনায়  প্রতিটি  এজেন্সির সর্বনিম্ন হজযাত্রীর সংখ্যা ১৫০ থেকে ১০০ তে কমিয়ে আনা এবং পবিত্র হজের দিনগুলোতে বাংলাদেশি হজযাত্রীদের জন্য মক্কা, মিনা, আরাফা, মুযদালেফায় যাতায়াতের সুবিধার্থে পুরোনো বাসের পরিবর্তে উন্নত মানের নতুন  ও পর্যাপ্ত-সংখ্যক বাস সরবরাহের অনুরোধ জানাই। এর পরিপ্রেক্ষিতে সৌদি কর্তৃপক্ষ হজযাত্রীর কোটা বৃদ্ধি ব্যতীত অন্যান্য প্রায় সবগুলো দাবি মেনে নেয়। কোটা বৃদ্ধির বিষয়টি আন্তরিকতা-সহকারে রয়েল কেবিনেটে উপস্থাপন করা হবে বলে আমাদের আশ্বাস প্রদান করা হয়।

৩. এ বছর হজ ব্যবস্থাপনায় আমাদের অন্যতম সফলতা হলো সৌদি কর্তৃপক্ষের “Makkah Route Initiative” ফ্রেমওয়ার্ক এর আওতায় সৌদি আরবের ইমিগ্রেশন বাংলাদেশেই সম্পন্ন করার উদ্যোগ গ্রহণ করে তা সফলভাবে বাস্তবায়ন করা। আমরা সৌদি ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের চাহিদা মোতাবেক প্রয়োজনীয় অবকাঠামো, আইটি সহযোগিতা ও নিয়মিত সমন্বয় সাধন করি। এ কার্যক্রমের ফলে সৌদি আরবের জেদ্দায় বাংলাদেশি হজযাত্রীদের বিমানবন্দরে ০৬ থেকে ০৮ ঘণ্টা অপেক্ষার সময় ও কষ্ট লাঘব করতে সক্ষম হয়েছি। প্রথম বছরেই আমরা অত্যন্ত সফলতার সাথে বাংলাদেশের ৬১ হাজার ৫ শত ৯০ জন হজযাত্রীর ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করতে  পেরেছি, আলহামদুলিল্লাহ।

৪. হজের সফরে কষ্টকর বিষয় হলো হজযাত্রীদের লাগেজ পরিবহন করা। লাগেজ পরিবহনের কষ্ট লাঘবের উদ্দেশ্যে Makkah Route Initiative কার্যক্রমের আওতায় এ বছর United Agents Office এর মাধ্যমে হজযাত্রীদের লাগেজ পরিবহন করা হয়েছে। ঢাকা এয়ারপোর্ট থেকে লাগেজ সরাসরি হজযাত্রীর মক্কাস্থ হোটেলের কক্ষে পৌঁছিয়ে দেওয়া হয়েছে। হজযাত্রী পৌঁছার পূর্বেই লাগেজ হজযাত্রীর ঠিকানায় পৌঁছে যাওয়ায় হাজি সাহেবগণ অত্যন্ত সন্তুষ্ট হয়ে তাৎক্ষণিকভাবে আমাদের টেলিফোনে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। তবে লাগেজের ওপর নাম, ঠিকানা ও নির্ধারিত স্টিকার না থাকায় অল্প কিছুসংখ্যক লাগেজ খুঁজে পাওয়া যায়নি। দায়িত্বপ্রাপ্ত কোম্পানি প্রতিটি হারানো লাগেজের বিপরীতে উপযুক্ত পরিমাণ ক্ষতিপূরণ প্রদানের বিষয়টি আমাদের নিশ্চিত করেছে। পৃথিবীর অন্য যে দেশসমূহ Makka Route Initiative ফ্রেমওয়ার্কের আওতায় কার্যক্রম পরিচালনা করেছে, বাংলাদেশের কার্যক্রম ছিল সবচেয়ে সফল ও সন্তোষজনক। সাবির্ক কার্যক্রমে সন্তুষ্ট হয়ে সৌদি সরকার আমিসহ বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলকে জেদ্দা বিমানবন্দরে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানিয়েছেন।

৫. “ডিজিটাল হজ ব্যবস্থাপনা, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দিক-নির্দেশনা”-এ স্লোগানকে সামনে রেখে আমাদের পুরো হজ ব্যবস্থাপনাকে ডিজিটাল হজ ব্যবস্থাপনায় উন্নীত করা হয়েছে। বাংলাদেশের হজযাত্রীগণ পবিত্র হজব্রত পালনের নিমিত্ত অনলাইনে প্রাক-নিবন্ধন এবং নিবন্ধন-প্রক্রিয়া নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করছেন। হজের প্রতিটি পর্যায়ে সকল করণীয় বিষয় প্রত্যেক হাজি সাহেবকে স্বতন্ত্রভাবে খুদেবার্তা, ফোনকল ইত্যাদির মাধ্যমে অবহিত করা হয়েছে এবং যা হজ ব্যবস্থাপনার ডিজিটালাইজেশনকে অন্য মাত্রায় পৌঁছে দিয়েছে। এ বছরই প্রথম ধর্ম-বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নিবন্ধন সার্ভারের সঙ্গে পাসপোর্ট অধিদপ্তরের ডাটাবেজের আন্তঃসংযোগ স্থাপনের মাধ্যমে হজযাত্রী নিবন্ধন করা হয়েছে। এর ফলে পাসপোর্টের তথ্যের সঠিকতা নিবন্ধন করার পূর্বেই যাচাই করা সম্ভব হয়েছে। এতে ভিসা-প্রক্রিয়া অনেক সহজ ও নির্ভুল হয়েছে।

৬. এ বছরই প্রথম ইলেক্টনিক হেলথ প্রোফাইল সিস্টেম চালু করা হয়েছে। ইলেক্ট্রনিক টিকা প্রত্যয়নপত্র সিস্টেমে সংযোজন করার ফলে সকল হজযাত্রীর মেডিকেল প্রোফাইল হজযাত্রার পূর্বেই সম্পন্ন করা সম্ভব হয়েছে। শতভাগ হজযাত্রীর ভ্যাকসিন হেলথ প্রোফাইল সিস্টেম চালু করা হয়েছে। ফলে শতভাগ হজযাত্রীর ভ্যাকসিন প্রদান নিশ্চিত করা হয়েছে।

৭. এ বছর প্রথম লক্ষাধিক হজযাত্রীর চিকিৎসা-সেবা সুশৃঙ্খল করার লক্ষ্যে কিউ সিস্টেম চালু করা হয়েছে। এর ফলে সম্মানিত হজযাত্রীদের দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়াতে হয়নি। হজযাত্রীদের, বিশেষ করে বয়স্ক হাজিদের, মেডিকেল সেবা দ্রুত দেওয়া সম্ভব হয়েছে। আমি মক্কা ও মদীনা শরীফে সরেজমিন চিকিৎসা-সেবা কেন্দ্র পরিদর্শন করি। এ সময় চিকিৎসা-সেবা বিষয়ে আমি অনেক হাজি সাহেবদের সাথে কথা বলি। তারা চিকিৎসা-সেবা সম্পর্কে  উচ্ছ্বসিত সন্তোষ প্রকাশ করেন।

৮. এ বছর প্রথম ফ্লাইট শুরুর বেশ আগেই তারিখ নির্ধারণ করে সরাসরি হজ এজেন্সির নিকট টিকেট বিক্রির ব্যবস্থা করা হয়েছে এবং টিকেট বিক্রির তথ্যপ্রাপ্তির জন্য সিস্টেমে পে-অর্ডার ব্যবস্থাপনা সংযোজন করা হয়েছে। এর ফলে অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত অব্যবস্থাপনা দূর করা সম্ভব হয়েছে।

৯. বাড়ি ভাড়ার আগাম তথ্য সংগ্রহের ফলে মনিটরিং সহজ হয়েছে। এ বছর হজের পূর্বেই মক্কা ও মদীনার বেসরকারি হজ এজেন্সি কর্তৃক ভাড়াকৃত শতভাগ হোটেল/বাড়ি পরিদর্শন করা সম্ভব হয়েছে। এর ফলে হজযাত্রীদের আবাসন নিয়ে কোনো প্রকার সমস্যা দেখা যায়নি।

১০. হজযাত্রীদের জন্য ToT প্রশিক্ষণ জোরদার করা হয়েছে। ঢাকায় কেন্দ্রীয়ভাবে এবং  সারা দেশে জেলা পর্যায়ে জেলা প্রশাসকদের সক্রিয় তত্ত্বাবধানে সকল হজযাত্রীর জন্য উন্নত  প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এর ফলে হজযাত্রীগণ অত্যন্ত সহজে হজপালন সম্পন্ন করতে পেরেছেন।

১১. প্রতিটি বিষয়ে হজযাত্রীদের মোবাইলে SMS প্রেরণ এবং সকলের অবগতির জন্য পর্যাপ্ত প্রচারণা/বিজ্ঞাপন প্রদান করা হয়েছে। মোবাইল অ্যাপ্‌স-ভিত্তিক রিপোর্টিং সিস্টেমের মাধ্যমে সার্বক্ষণিক হজের কার্যক্রম মনিটরিং করা সহজ হয়েছে।

১২. হজযাত্রীদের হজে গমনে যেকোনো প্রকার অনিশ্চয়তা পরিহার করার লক্ষ্যে হজ ব্যবস্থাপনা ইনফরমেশন সিস্টেম হতে রিপোর্ট ব্যবহার করে বেসরকারি হজ এজেন্সিসমূহের কার্যক্রম প্রতিনিয়ত মনিটরিং করা হয়েছে। এর ফলে হজ অফিস ও ধর্ম-বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দ্রুত ও সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হয়েছে। হজযাত্রীগণের যাত্রা ও ফ্লাইট নিশ্চিত করতে বিশেষ মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। যে সকল এজেন্সি টিকেট ক্রয় করতে গড়িমসি করেছে তাদের তালিকাভিত্তিক নিবিড় মনিটরিং করায় সকল হজযাত্রীর হজযাত্রা সুনিশ্চিত হয়েছে।

১৩. হজযাত্রীদের সুবিধার্থে হাজীক্যাম্পের ইমিগ্রেশন পয়েন্ট, মসজিদ ও সম্মানিত মহিলা হজযাত্রীদের ডরমেটিরতে এসি স্থাপন করা হয়েছে। হাজি ক্যাম্পের প্রয়োজনীয় সম্প্রসারণসহ অবশিষ্ট কাজ চলতি বছর সম্পন্ন করা হবে ইনশাআল্লাহ।

১৪. এ বছর বাংলাদেশের সম্মানিত হজযাত্রীদের সঠিক নিয়মে হজ পালন ও ধর্মীয় বিধিবিধান বিষয়ে পরামর্শ, দিক-নির্দেশনা প্রদানের জন্য সারা দেশের শীর্ষস্থানীয় ওলামা-মাশায়েখদের সমন্বয়ে ৫৮ সদস্য-বিশিষ্ট হজ ওলামা-মাশায়েখ টিম-২০১৯ গঠন করে পবিত্র হজে পাঠানো হয়েছে । এতটা বৃহৎ পরিসরে সরকারিভাবে ওলামা-মাশায়েখদের হজব্রত পালনের ব্যবস্থাকরণধর্মী উদ্যোগ বাংলাদেশের ইতিহাসে এটাই সর্বপ্রথম। রাষ্ট্রীয় খরচে হজে পাঠানোর সংখ্যায় কোনো বৃদ্ধি না ঘটিয়ে এ মহতি উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হয়েছে। বিষয়টি সুধীমহলসহ সর্বস্তরের জনগণ কর্তৃক দেশ-বিদেশে বিশেষভাবে প্রশংসিত হয়েছে। এ ব্যবস্থাপনাকে সাধুবাদ জানিয়ে আলেম-ওলামার সম্মানে মহামান্য রাষ্ট্রপতি হজে গমনের প্রাক্কালে বঙ্গভবনে দোয়া-মাহফিল ও নৈশভোজের আয়োজন করেছেন। মদিনায় মসজিদ নববী কর্তৃপক্ষ ওলামা-মাশায়েখদের সম্মানে বিশেষ মতবিনিময় সভার আয়োজন করে এবং বিশেষ ব্যবস্থাপনায় মসজিদে নববীর রিয়াদুল জান্নাতে নামাজ পড়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। ওলামা-মাশায়েখ টিমের সম্মানিত সদস্যগণ হজের পূর্বে পবিত্র মক্কা শরীফে বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে বাংলাদেশি হাজিদের আবাসস্থলে গিয়ে হজের মাসআলা-মাসায়েল বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। এ ছাড়া ওলামা-মাশায়েখগণ মিনা ও আরাফার বিভিন্ন তাঁবুতে গিয়ে হাজি সাহেবদের হজে করণীয় বিষয়ের ওপর বয়ান করেছেন। এতে হজযাত্রীগণ হজ পালনে দারুণভাবে উপকৃত হয়েছেন। বিশেষ করে হজ পালনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্থান আরাফাতের ময়দানে সকল ওলামায় কেরাম মন্ত্রিপরিষদের সম্মানিত সদস্যবর্গ, মাননীয় সংসদ সদস্যবর্গ ও সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ এবং উপস্থিত সর্বস্তরের হাজি সাহেবদের নিয়ে একত্রে পরম করুণাময় মহান আল্লাহর দরবারে দোয়া ও মোনাজাত করেন। এ সময় সমস্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, ৭৫ এর ১৫ আগস্ট শাহাদাতবরণকারী বঙ্গবন্ধু পরিবারে সকল শহীদ সদস্য, কারাগারে শহীদ জাতীয় চার নেতা, মহান মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লক্ষ শহীদ ও ২ লক্ষ নির্যাতিতা মা-বোন, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহত আইভি রহমানসহ সকল শহীদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে দোয়া ও মোনাজাত করেন। একই সময়ে সেখানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু-কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা ও বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ রেহেনার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করা হয়। পাশাপাশি, বাংলাদেশের সামগ্রিক কল্যাণ, ডেঙ্গুর কবল থেকে জাতিকে পরিত্রাণ, আকস্মিক বন্যা পীড়িতদের সাহায্য এবং ষড়যন্ত্রমূলকভাবে গুজব রটনাকারীর হাত থেকে দেশকে রক্ষা করার জন্য মহান আল্লাহ পাকের দরবারে রহমত কামনা করা হয়।

উপস্থিত অতিথিবৃন্দ,

২০০৯ সাল থেকে বাংলাদেশি হজযাত্রীর সংখ্যার ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০০৯ সালে যেখানে বাংলাদেশি হজযাত্রীর সংখ্যা ছিল ৫৮ হাজার ৬ শত ২৮ জন, ২০১৯ সালে হজযাত্রীর সংখ্যা ১ লক্ষ ২৭ হাজার ১৫২ জনে বৃদ্ধি পায়। হজযাত্রী বৃদ্ধির এ পরিসংখ্যান প্রমাণ করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশের মানুষের অর্থনৈতিক সক্ষমতা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। একই সাথে ইসলামের অন্যতম বিধান পবিত্র হজ পালনের ব্যবস্থাপনাও অনেক সহজ ও নিরাপদ হয়েছে।

উপস্থিত অতিথিবৃন্দ,
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু-কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আবারও আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি, যিনি সার্বক্ষণিভাবে আমাদের দিক-নির্দেশনা দিয়ে হজ ব্যবস্থাপনাকে সুন্দর করার জন্য নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে বিগত ১০ বছরে হজ ব্যবস্থাপনায় যে উন্নতি সাধিত হয়েছে এ বছরও আমরা অত্যন্ত সফলভাবে সে ধারাবাহিকতা রক্ষা করেছি। ২০১৯ সালে একটি সফলতম হজ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সফল হজ ব্যবস্থাপনার ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে পারায় মহান আল্লাহ পাকের নিকট শোকরিয়া জ্ঞাপন করছি, আলহামদুলিল্লাহ।

এ বছরে হজ-কার্যক্রম শেষে মক্কা শরীফে দলমত নির্বিশেষে সকল শ্রেণি-পেশার প্রবাসী বাংলাদেশিদের পক্ষ থেকে একটি সুন্দর ও সফল হজ ব্যবস্থাপনা উপহার দেওয়ায় আমাদের সংবর্ধনা জানানো হয়েছে। সে অনুষ্ঠান থেকে আগামী ২০২০ সালে বাংলাদেশের হজ ব্যবস্থাপনার ইতিহাসে সফলতম হজ ব্যবস্থাপনা উপহার দেওয়ার প্রত্যয় ঘোষণা করা হয়।

মহান আল্লাহ তাআলা আমাদের সকল প্রচেষ্টা কবুল করুন । আমিন।

আপনাদের সকলকে আবারও অসংখ্য ধন্যবাদ জানিয়ে শেষ করছি।

আল্লাহ হাফেজ।

জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু

বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।

ওকে/এমএইচ

Comment

লেখক পরিচিতি

মিরাজ রহমান

গতানুগতিক ধারার বাইরে থেকে কাজ করে ইতিমধ্যেই বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন মিরাজ রহমান। পেশায় পুরোদস্তুর একজন সাংবাদিক হলেও কেবল ইসলামকে ঘিরেই আবর্তিত তার ধ্যান-জ্ঞান। দৈনিক পত্রিকার ইসলাম পাতায় লেখালেখি থেকে তিনি পরিচিত হয়ে উঠেছেন বটে, কিন্তু একসময় শিল্প চর্চায়ও ছিলেন বেশ মনোযোগী।
মিডিয়ায় সক্রিয়ভাবে কাজ শুরু করেছেন যখন, তখনও তিনি ছাত্র। মাদানিনগর মাদরাসার কাফিয়া জামাতের (শ্রেণি) শিক্ষার্থী থাকা অবস্থায় কণ্ট্রিবিউটর হিসেবে প্রথম কাজ শুরু করেন দৈনিক যুগান্তরে। ধারালো লিখনী শক্তি অল্পদিনের মধ্যে পরিচিত করে তোলে তাকে। দেশের জাতীয় দৈনিক পত্রিকার প্রায় সবগুলোতেই ইসলামবিষয়ক কলাম ও ফিচার লিখেছেন দীর্ঘ সময়। জাতীয় প্রিন্ট মিডিয়াগুলোতে তার অন্তত দুই সহস্রাধিক প্রবন্ধ-নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে।
মিরাজ মূলত পড়াশুনা করেছেন কওমি শিক্ষাধারায়, এর পাশাপাশি তিনি জেনারেল শিক্ষাধারায়ও পড়াশুনা করছেন। সহ-সম্পাদক হিসেবে প্রথম যোগদান করেন দৈনিক ডেসটিনি পত্রিকায়। সেখান থেকে দৈনিক কালের কণ্ঠে। দেশে-বিদেশে অনলাইন গণমাধ্যমের জয়যাত্রা শুরু হলে মিরাজ ইন্টারনেট জগতকে ইসলাম প্রচারের জন্য সবচেয়ে সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র বিবেচনা করে অনলাইনেই গাঁটছাড়া বাঁধেন। দেশের প্রথম পূর্ণাঙ্গ ইসলামবিষয়ক অনলাইন পোর্টাল প্রিয়.কমের ‘প্রিয় ইসলাম’-এর সৃষ্টি ও পথচলার সূচনা তারই হাতে। দীর্ঘদিন কাজ করেছেন প্রিয়.কমের প্রিয় ইসলাম বিভাগের এডিটর ইনচার্জ। সর্বশেষ কর্মরত ছিলেন দৈনিক বাংলাদেশের খবরের ফিচার ইনচার্জ হিসেবে।
টেলিভেশনে অনুষ্ঠানের উপস্থাপনা ও আলোচনার সঙ্গেও ইতিমধ্যে যুক্ত হয়েছেন মিরাজ রহমান। পরিচালনা করেছেন বেশ কিছু অনুষ্ঠানও। এসো কলম মেরামত করি, ছোটদের নবী-রাসূল সিরিজ, তাবলিগী জামাতের পৃষ্ঠপোষক-মুরুব্বি ছিলেন যাঁরা, শরয়ী পর্দার বিধান, আশিক মিন ফিলিস্তিন, নারী তুমি সৌভাগ্যবতী ও হালাল ব্যবসা ও হালাল অর্থনীতির কথকতাসহ বেশ কিছু আলোড়ন সৃষ্টিকারী গ্রন্থেও জনক তিনি। বর্তমান তিনি ইসলাম প্রতিদিনের সম্পাদক ও প্রকাশক এবং দ্য সুলতান প্রকাশনীর প্রধান নির্বাহী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।