ফিচার বই

শিশুসাহিত্যিক নকীব মাহমুদের নবি-জীবনের গল্পভাষ্য— মুস্তফা

‘পুরো মক্কায় একটা শোরগোল পড়ে গেলো। সে কী চিৎকার চেঁচামেচি। উট-দুম্বা-বকরি- যার যা পাচ্ছে সবকিছু লুট করে নিয়ে নিচ্ছে লোকগুলো। ইয়া বড়ো মোচ, খোঁচা খোঁচা দাড়ি। কোঁকড়ানো চুল- সে কী বিচ্ছিরি চেহারা লোকগুলোর! দেখলে গা একেবারে শিরশিরিয়ে ওঠে….. না, আর পড়লাম না। পড়ছিলাম নকীম মাহমুদ রচিত নবি জীবনের গল্পভাষ্য ‘মুস্তফা’ থেকে। এখানেই নকীব মাহমুদ’ এর স্বাতন্ত্র্যতা। তার লেখা গল্পগুলো পাঠককে টানে, প্রচুর টানে। এক পর্যায়ে শেষ হয়। পাঠকভাবে শেষ না! শেষ হয়েও হইলো না শেষ’ একেই বলে নকীব মাহমুদের লেখাসন্দেশ।

আরেকটু পড়ি… সুবহে সাদিক। মক্কার আকাশে নতুন সূর্যোদয়ের প্রস্তুতি চলছে সবেমাত্র। অনেকেই এখনো গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। আল্লাহর ঘর বাইতুল্লাহ’ এর খুব কাছাকাছি প্রায় পরিত্যক্ত জীর্ণ একটা কুটির। একজন মহীয়সী নারী মাত্রই সন্তান প্রসব করেছেন। জীর্ণকুটিরের থোকা থোকা অন্ধকারের ভেতর এ যেনো নতুন চাঁদের হঠাৎ আগমন। চাঁদ- নাহ, চাঁদ বললেও ঠিক ভুল হবে। চাঁদের চাইতেও আরো উজ্জ্বল আরো সুন্দর সে মুখ…।

গল্পের আকারে এই প্রথম শিশুতোষে যুক্ত হলো প্রিয়নবির জীবনচরিত। পড়ার মতো শব্দে, পাঠের মতো বাক্যে, আবৃত্তির মতো সুরে, পুলকিত করার মতো গল্পে, আন্দোলিত করার মতো ছন্দে। এই বিষয়ে আরো বহুগুণি লেখক কলম ধরেছেন; কিন্তু শব্দের জটিলতা, বাক্যের কুটিলতা, বিষয়ের গাঢ়তা শিশুসহ সব শ্রেণির পাঠককে মজা দিতে পারেনি। কিন্তু ‘মুস্তফা’ এর শুরু থেকে শেষ শব্দের সরলতা গদ্যের তরলতা; পাঠক কখনো পড়তে পড়তে খেই হারাবে না, হারাবে না গল্পের আগপিছ।

নকীব মাহমুদের মুস্তফা ছোটোদের জন্য লেখা বাংলাভাষায় অন্যতম একটি সীরাতগ্রন্থ নিঃসন্দেহে! তাই বলে বড়দের হতাশ হওয়ার কিছু নেই কিন্তু। গল্পের বিষয়বস্তু ভীষণ পুরানো, কিন্তু গল্পের আঙ্গিক শরীর গতর দেহ বর্ণনা আধুনিক। এই দুয়ের মিশেলে বইটা সেই, কেমন জানি টক ঝাল মিষ্টি। আর বিষয়বস্তু যখন নবি মুহাম্মাদ! তখন তো আর বলা লাগে তাতে আছে অপার্থিব সৌরভ সুষমা; যা হৃদয়কে আলোকিত করে, জীবনকে পুলকিত করে, করে গৌবরময়।

মুস্তফার পাঠকেরা গল্পের সাথে সাথে পাবে ছড়ার একচিলতে স্বাদ। কেননা নকীব মাহমুদ একজন ছড়ার মানুষ; ছড়ায় চলেন ছড়ায় বলেন ছড়ায় লেখেন। এই গল্পভাষ্যেও এর ব্যত্যয় ঘটেনি। শিরোনামের ভিন্নতায় নবিজীবনের প্রতিটা অধ্যায় উঠে এসেছে ভিন্নমুগ্ধতার স্বাদ নিয়ে; যা পাঠককে টানতে থাকে তার শেষতক। বইটিতে মোট ৩৩ টি গল্পে উঠে এসেছে রাসুলুল্লাহর পুরো জীবনচিত্র।

বইটি এবারের একুশে বইমেলায় প্রকাশনাসংস্থা দারুল হিলাল থেকে প্রকাশিত হয়েছে। পরিবেশনা করেছে বাংলার প্রকাশন। বই : মুস্তফা। ধরণ: ছোটোদের সীরাত। প্রকাশনী : দারুল হিলাল। প্রচ্ছদ : সিদ্দিক মামুন। পৃষ্ঠা : ১৯২। মুদ্রিত মূল্য : ৩২০ টাকা। প্রথম প্রকাশ : একুশে বইমেলা ২০১৯। বইমেলায় স্টল নং : ৪২৮। অমর একুশে বইমেলা ছাড়াও অনলাইন বুকশপ রকমারি.কমে পাওয়া যাচ্ছে বইটি। অথবা যোগাযোগ করতে পারেন- ০১৯১৭৯৬৪৯০০ কিংবা ০১৭১২২৯৮৯৪১ এই নাম্বারে।

Comment

লেখক পরিচিতি

জাহিদ হাসান মিলু

আমি জাহিদ। সরকাারি কাগজপত্রের জাহিদুল ইসলাম থেকে বেসরকারি কাগজপত্রে জাহিদ হাসান মিলু- নামের এই বিচিত্র পরিবর্তনের পেছনে একটা মিষ্টি গল্প আছে।
জন্মেছি গোপালগঞ্জ জেলার অখ্যাত গ্রাম প্রশন্নপুরে, ১৯৯৬ সালের ডিসেম্বরে। কী এক বিশেষ কারণে যেন কাগজকলমে বয়েস কমিয়ে আমাকে আরও তিনবছরের ছোটো করে রাখা হয়েছে। বাবা মা দুজনেই অক্ষর না শিখেও আমার জীবনের শ্রেষ্ঠতম স্বাক্ষর হয়ে আছেন।
অবুঝ বয়েসে পারিবারিক স্বপ্নের কারণে ভর্তি হতে পেরেছিলাম মাদ্রাসায় , আলহামদুল্লিলাহ। জীবনের সবথেকে বড় পারিবারিক গিফ্ট ছিল এটা আমার জন্য। কুরআন পড়তে শিখলাম, মুখস্থ করতে পারলাম। অর্থ জানলাম এবং ব্যাখ্যাও পড়লাম।
আমাদের পাড়ার মাদ্রাসা কুলিয়ার ভিটায় পড়ার সময় ধর্মের প্রতি আমাদের ভেতরে যে বীজটা রোপিত হয়েছিল, সেটা ডালাপাল মেলে খোলা হাওয়ায় বেড়ে ওঠার সুযোগ পায় প্রাণের প্রতিষ্ঠান এরাবিল মডেল মাদ্রাসায়। তারপর? তারপর আর কি- এখন পড়াশোনা করছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্নালিজম বিভাগে।
দায়ী হওয়ার স্বপ্ন আমার সবথেকে বড় স্বপ্ন। স্বপ্নটি পূরণ করতেই পড়ছি, শুনছি, দেখছি, শিখছি এবং অপেক্ষা করছি।