জীবনী মুসলিম মনীষী

তাবলীগ জামাত এবং একজন শাইখুল হাদিস মাওলানা জাকারিয়া [রহ.]

লিখেছেন মিরাজ রহমান

‘শায়খুল হাদিস’ নামেই সবচেয়ে বেশি প্রসিদ্ধ যিনি
হাদিস ও ইলমে হাদিস- ইসলামি জ্ঞানশাস্ত্রের অন্যতম একটি পাঠ। কোরান-হাদিস ছাড়া ইসলামের কোনো জ্ঞান, কোনো আহকামই গ্রহণযোগ্যতার বিচারে পরিপূর্ণ নয়। হাদিস ও ইলমে হাদিসের অধ্যয়ন-গবেষণা ও আলোচনা-প্রচার ইসলামের খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও আবশ্যক একটি অধ্যায়। সারা বিশ্বের সব মুসলিম সীমানায়ই ইলমে হাদিসের খেদমত হয়ছে। এশিয়া মহাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মাঝে ভারত উপমহাদেশে ইলমে হাদিসের খেদমত এবং অধ্যয়ন তুলনামুলকভাবে বেশি হয়েছে বলেই পরিলক্ষিত। এশিয়া মহাদেশের সীমানায় এবং এই সীমানা ছাপিয়ে বিশ্বদরবারে যে কয়জন আলিমকে হাদিসশাস্ত্রের পন্ডিত-বিশেষজ্ঞ মনে করা হয়, তাদের অধিকাংশ আলিমই জন্মগতভাবে ভারতীয়। ভারতীয় আলিমদের এই অর্জন বা কৃতিত্ব যাই বলি না কেন, এর নেপথ্যে ইলম অর্জনের সাধনায় তাদের ঐকান্তিক অংশগ্রহণ এবং হাদিসশাস্ত্রের ব্যুৎপত্তি অর্জনের জন্য সময় ব্যয় করাটাই প্রধান উপলক্ষ্য হিসেবে কবুল হয়েছে। কেবল হাদিসশাস্ত্র নয়, দীনি ইলমের প্রায় সব বিষয়-শাস্ত্রে তারাই সবচেয়ে অগ্রগামী। ইসলামি আইনশাস্ত্র থেকে শুরু করে বিভিন্ন মাসয়ালার সমাধান কল্পে তাদের মতামতের মূল্যায়ন, তাদের কাজের ‘মান’ অনেক গ্রহনযোগ্য। ভারতীয় হাদিসশাস্ত্রেরবিশারদদের মাঝে শায়খুল হাদিস মাওলানা জাকারিয়ার [রহমাতুল্লাহি আলাইহহি] নাম অধিক প্রসিদ্ধ। কেবল প্রসিদ্ধই নয়, ইলমে হাদিসের ওপর অগাধ পান্ডিত্য ছিল তাঁর। উপমহাদেশে ‘শায়খুল হাদিস’ বলতে প্রাথমিক বিবেচনায় মাওলানা জাকারিয়াকেই [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বোঝা হয়। কারণ এই ক্ষেত্রে তাঁর মত এতোটা প্রসিদ্ধি, এতোটা মান সম্পন্ন কাজ কিংবা বলি এত্তো ‘খেদমত’ আর কারো নসিব হয় নি।

তাবলিগ জামাতের সূচনা ও বিকাশে তাঁর ভূমিকা
তাবলিগ জামাতের প্রাথমিক সূচনা ও বিকাশে শায়খুল হাদিস মাওলানা জাকারিয়ার [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] ভূমিকা অপরিসীম। তাবলিগ জামাতের নানামুখি সঙ্কটময় সময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন তিনি। তাবলিগ জামাতের দ্বিতীয় আমির হিসেবে মাওলানা ইউসূফকে মনোনীত করার নেপথ্যেও মাওলানা জাকারিয়ার অবদান ছিল মুরুব্বিসুলভ। জীবনের বড় অংশটুকু তিনি ব্যয় করেছেন হাদিসের খেদমতে। শুধু শুধুই কি ‘শায়খুল হাদিস’ বললে উপমহাদেশের আলিম-উলামাসহ সাধারণ মানুষের নব্বই ভাগই এক বাক্যে তাঁকে চিনেন। এ এক অমূল্য অর্জন- ই সায়াদাত বজোড়ে বাজু নিস্ত। হাদিসে নববির আলোকে দাওয়াত ও তাবলিগের মেহনত করা ছিল তাঁর জীবনের অন্যতম সাধনা। যে কয়জন প্রথিতযশা আলিমের তত্ত্বাবধান, পরামর্শ, পৃষ্ঠপোষকতা ও নির্দেশনায় তাবলিগ জামাতের কার্যক্রম গতি লাভ করেছে তাঁদের মধ্যে অন্যতম ব্যক্তিত্ব ছিলেন শায়খুল হাদিস মাওলানা জাকারিয়া [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]। তাবলিগ জামাতের প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা ইলিয়াসের [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] পর এ কাজ পরিচালনায় নেপথ্যগত প্রধান ভূমিকা পালন করেছেন তিনি। বিখ্যাত আলিম মাওলানা ইয়াহইয়া [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] ছিলেন তাঁর পিতা আর তাঁর চাচা ছিলেন তাবলিগ জামাতের প্রতিষ্ঠাতা প্রাণপুরুষ মাওলানা ইলিয়াস [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]।

জন্ম, শিক্ষাকাল এবং…
১৮৯৮ সালের ১২ই ফেব্রুয়ারি মোতাবিক ১৩১৫ হিজরি সনের ১০ই রমজান ভারতের উত্তর প্রদেশের মুজাফফরনগর জেলার ‘কান্দালা’ নামক গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন মাওলানা জাকারিয়া [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]। তাঁর পিতার নাম মাওলানা ইয়াহিয়া। খলিফাতুল মুসলিমিন হজরত আবু বকর [রাজিয়াআল্লাহু তায়ালা আনহু]-এর মাধ্যমে হজরত মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর সঙ্গে মিলিত হয়েছে তাঁর বংশলতিকা। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে ‘সাইয়িদ’ বংশদ্ভূত সন্তান মাওলানা জাকারিয়া [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] । বংশগত ঐতিহ্য হিসেবে একটি ‘ধার্মিক’ ও ‘ধর্মীয় জ্ঞানপুষ্ঠ’ পরিবারে লালিত পালিত হয়েছেন তিনি। বাবা, চাচাসহ পরিবারের প্রায় সব সদস্যই ‘ইলমি’ ক্ষেত্রে যোগ্য এবং ‘আমলি’ ক্ষেত্রে অগ্রগণ্য ছিলেন। তাঁর বংশের বেশ কয়েকজন সদস্যই ভারত উপমহাদেশের স্বনামধন্য আলিম ছিলেন। মাত্র আড়াই বছর বয়সের তিনি পিতা-মাতার সঙ্গে গঙ্গুহতে চলে যান। হজরত গঙ্গুহির [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] রূহানি ফয়েজ ও বরকতে গঙ্গুহ তখন ইলমি পরিবেশের জন্য অত্যন্ত সহায়ক ছিল। মাওলানা রশিদ আহমদ গাঙ্গুহির [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] কাছে সহিহ বোখারি, তিরমিজিসহ হাদিসশাস্ত্রের প্রসিদ্ধ সব কিতাব অধ্যয়ন করেছেন মাওলানা জাকারিয়া। যেহেতু নিজ ঘর-পরিবারই ছিল মাওলানার প্রথম পাঠশালা, লেখাপড়া ও তরবিয়তের পরিবেশ ছিল ভালো; প্রাতিষ্ঠানিক আনুষ্ঠানিক শিক্ষা শুরু করতে একটু দেরী হয়েছে তাই। সাত বছর বয়সের সময় ডা. আব্দুর রহমানের কাছে তাঁর লেখাপড়ার আনুষ্ঠানিকতা যাত্রা শুরু হয়। ঘরে থাকাকালীনই তিনি পবিত্র কোরানে কারিম হিফজ করেন। মূল শিক্ষা-তরবিয়তটা হাসিল করেন তাঁর পিতা মাওলানা ইয়াহইয়াহর [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] কাছ থেকে। মাওলানা ইয়াহইয়াহর ইলমি যোগ্যতা ও সুখ্যাতি ছিল ব্যাপক। তাঁর পাঠদানগত বৈশিষ্ট্য ছিল অনন্য। নিজের ছেলের তত্ত্বাবধানের ক্ষেত্রে সে বৈশিষ্ট্যগুলো যথার্থভাবে প্রয়োগ করেছেন তিনি। পিতার তালিম-তরবিয়তগত কঠোর নজরদারিতে থাকার কারণে মাওলানা জাকারিয়ার [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] মধ্যে ইলমের প্রতি গভীর মনোযোগ সৃষ্টি হয়। একবার জুতা হারিয়ে যাওয়ার কারণে ছয়মাস পর্যন্ত মাদরাসার বাহিরে যাননি মাওলানা জাকারিয়া। সতের বছর বয়স পর্যন্ত কারো সঙ্গে বিনা প্রয়োজনে কথা বলাও নিষেধ ছিল। এভাবে পিতার কঠোর নজরদারি-তত্ত্বাবধানে থেকে মাজাহেরুল উলূম সাহরানপুর মাদরাসা থেকে তিনি শিক্ষাজীবন সমাপ্ত করেন। হাদিস শাস্ত্রসহ দর্শন, মানতেন, ফিকাহ ও বিভিন্ন উসূল শাস্ত্রে ব্যুৎপত্তি অর্জন করেন তিনি। তাঁর ওস্তাদ মাওলানা খলিল আহমদ সাহরাপুরি [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] তাঁকে ‘শায়খুল হাদিস’ উপাধিতে ভূষিত করেন। ওস্তাদের ভূষিত উপাধিতে বিশ্বব্যাপি পরিচিতি লাভ করেন মাওলানা জাকারিয়া [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]।

হাদিসের দরস নেয়ার জন্য ভিড় লেগেই থাকতো
শিক্ষাজীবন সমাপ্ত করার পর মাওলানা জাকারিয়া [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] ১৩৩৫ হিজরির মহররম মাস থেকে মাজাহেরুল উলূম সাহরানপুর মাদরাসায় দরস প্রদান করা শুরু করেন। তাঁর দরসের সুনাম অল্প দিনেই ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। ছাত্ররা তাঁর কাছে হাদিসের দরস নেয়ার জন্য ভিড় করতেই থাকতো। উপচেপড়া ভিড় লেগেই থাকতো প্রতিটি হাদিসের দরসে। বিভিন্ন মাদরাসার হাদিস শাস্ত্র পড়ুয়া শিক্ষার্থীরাও এসে অংশ নিতো তাঁর ক্লাসে। হজরত মাওলানা খলিল আহমদ সাহরানপুরির [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] কাছ থেকে খেলাফত লাভ করে আধ্যাত্মিক সাধনাও জারি রেখেছিলেন সমান তালে। একদিকে চলছিল দরসদান, অন্যদিকে জারি ছিল তাজিকিয়ায়ে নফসের মেহনত। সমকালীন আকাবির ও বুজূর্গদের সাথে মাওলানা জাকারিয়ার ‘সম্পর্ক’ ছিল সুগভীর। অনেকের কাছ থেকেই তিনি ইলমি ফয়েজ ও ইসলাহি বরকত হাসিল করেছেন।

ছোটবেলা থেকেই পড়াশুনায় খুব দক্ষ ছিলেন তিনি
খুব ছোটবেলায় বাবার হাত ধরে গাঙ্গুহ চলে এসেছিলেন মাওলানা জাকারিয়া। মাওলানা রশিদ আহমেদ গাঙ্গুহির [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] সাথে তাঁর পিতার গভীর স¤পর্ক ছিল। পিতার স¤পর্কের রেশ ধরেই মাওলানা রশিদ আহমদ গাঙ্গুহির [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] ‘সোহবত’ লাভে ধন্য হন তিনি। সেখানে থাকা অবস্থায় হজরত গাঙ্গুহির [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] তত্ত্বাবধানে পিতার কাছেই মাওলানা জাকারিয়ার লেখাপড়ার জীবনের সূচনা হয়। পবিত্র কোরান হিফজ করার পাশাপাশি বাবা ও চাচা মাওলানা ইলিয়াসের [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] কাছে আরবি ও ফার্সি ভাষার প্রাথমিক কিতাবাদি পড়া শুরু করেন তিনি। জাকারিয়ার বয়স যখন আট, সে বছর মাওলানা রশিদ আহমদ গাঙ্গুহির ইনতিকাল হয়। মাত্র ১২ বছর বয়সে মাওলানা জাকারিয়া বাবার সঙ্গে মাজাহিরুল উলূম মাদরাসায় চলে আসেন এবং সেখানেই বাবার তত্ত্বাবধানে তার পড়াশুনা সামনে এগুতে থাকে। এ সময় আরবি ভাষায় পারদর্শিতা অর্জন করার জন্য বেশ সাধনা করেছিলেন তিনি। সতের বছর বয়সে এসে হাদিস অধ্যয়ন করাকে জীবনের মূল লক্ষ হিসেবে নির্ধারণ করতে সক্ষম হন এবং প্রাথমিক পর্যায়ে বাবার কাছেই হাদিসশাস্ত্রের গ্রহণযোগ্য পাঁচটি কিতাব পাঠ করেন। এরপর তিনি মাওলানা খলিল আহমদ সাহরানপুরির [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] কাছে হাদিসশাস্ত্রের বিখ্যাত গ্রন্থ সহিহ বোখারি ও তিরমিজি শরিফ অধ্যয়ন করেন। হাদিসশাস্ত্রের প্রতি মাওলানা জাকারিয়ার আন্তরিক টান ছিল। হাদিসের কিতাব পেলেই যেন খুশি হয়ে যেত তাঁর মন। আন্দোলিত হতো হৃদয়-আত্মা। অন্যান্য বিষয়-শাস্ত্র অধ্যয়ন করার তুলনায় হাদিস পাঠের ব্যাপারে অধিক আগ্রহ বোধ করতেন তিনি।

দরস-তাদরিস-শিক্ষাদান
১৩৩৫ হিজরি সনে মাজাহিরুল উলূম মাদরাসায় শিক্ষকতা শুরু করার মাধ্যমে মাওলানা জাকারিয়ার কর্মজীবনের সূচনা ঘটে। প্রাথমিক পর্যায়ে আরবি ব্যাকারণ ও সাহিত্যসহ প্রাথমিক ক্লাসের বিভিন্ন কিতাব পড়ানোর দায়িত্ব প্রাপ্ত হন তিনি। এরপর মাওলানা খলিল আহমদ সাহানপুরির [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] নির্দেশনা মোতাবিক ১৩৪১ হিজরি সন থেকে সহিহ বোখারির দরস দান শুরু করেন। এতো অল্প বয়সে মাওলানা জাকারিয়ার বোখারি শরিফের মতো কিতাবের দরস দানের অনুমতি লাভ করা সম্পর্কে ভারতের বিখ্যাত লেখক মাওলানা আবুল হাসান আলি মিয়া নদভি [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] লিখেন, ‘শায়খ জাকারিয়াই একমাত্র সৌভাগ্যবান যুবক আলিম ছিলেন, এতো অল্প বয়সে মাওলানা সাহরানপুরি [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] যাঁকে সহিহ বোখারির দরস দানের অনুমতি প্রদান করেছিলেন। হজরত সাহরানপুরির [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] এই নির্বাচন কেবলমাত্র শায়খ জাকারিয়ার ভালো শিক্ষক হওয়ার বিষয়টিকে প্রস্ফুটিত করে না, বরং হাদিসশাস্ত্রের ওপর তার অগাধ পান্ডিত্য এবং রাসুল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম]-এর একজন খাঁটি আশেক হওয়ারও প্রমাণ বহন করে। এক কবি তাঁর কবিতায় উল্লেখ করেন, বে ইশকে নবি যেস নে দিয়া দরসে বুখারি; আতি হায় বুখার উছছে বুখারি নেহি আতি। দরস-তাদরিসের পাশাপাশি তাসনিফাত বা লেখালেখি-রচনায়ও তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

তাসনিফাত-লেখালেখি
১৩৩৪ হিজরি সনে মাওলানা ইয়াহইয়াহর [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] ইনতিকাল ঘটে। পিতার মৃত্যুতে গভীরভাবে শোকাহত হন মাওলানা জাকারিয়া। কারণ মাওলানা ইয়াহইয়াহ কেবল তাঁর পিতাই ছিলেন না, তিনি ছিলেন মাওলানা জাকারিয়ার প্রথম শিক্ষক এবং সুদক্ষ একজন তত্ত্বাবধায়ক-মুরুব্বি। পিতার ইনতিকালের পর থেকে ১৩৪৬ হিজরি সনে মাওলানা খলিল আহমেদ সাহরানপুরির [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] ইনতিকাল পর্যন্ত তার কাছে বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে হাদিসশাস্ত্রের পাঠ গ্রহণ করেছেন এবং নানাবিধ তাসনিফাত-লেখালেখির কাজ করেছেন। মাওলানা সাহরানপুরি [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] জীবিত থাকাকালীন মাওলানা জাকারিয়াকে সঙ্গে নিয়ে হাদিসে রাসুলের [সাল্লাল্লাহি আলাইহি ওয়া সাল্লাম] ওপর বিশাল কলেবরের একটি গ্রন্থ রচনার কাজ করেছিলেন, যে কাজে মাওলানা জাকারিয়া ছিলেন তাঁর ‘ডান হাত’। প্রাণপ্রিয় শিক্ষকের সঙ্গে এই গ্রন্থের কাজ করতে গিয়েই ‘শায়খুল হাদিস’ উপাধিতে ভূষিত হন তিনি।

আরবি, ফার্সি এবং উর্দূ ভাষায় বহু গ্রন্থ রচনা করেছেন মাওলানা জাকারিয়া [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]। লেখালেখির এই মানসিকতা মূলত বাবার কাছ থেকেই পেয়েছিলেন তিনি। মাওলানা জাকারিয়ার রচনাবলীর অধিকাংশই হাদিসশাস্ত্রের গবেষণা ও এই বিষয়ক আলোচনা-পর্যালোচনায় সমৃদ্ধ। মাত্র তের বছর বয়সে, ছাত্রাবস্থায় আরবি ব্যকরণ বিষয়ক তিন খন্ডে রচিত ‘আলফিয়া ইবনে মালিক’ নামক গ্রন্থের কাজ করেছিলেন তিনি এবং এটাই ছিল তাঁর লেখালেখি জীবনের প্রথম কাজ। পরবর্তীতে আরো অনেক কাজ করেছেন তিনি। মাওলানা জাকারিয়া [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] কোনো গ্রন্থ লিখেছেন আর সেটা জনপ্রিয়তা লাভ করেনি- এমন কোনো ইতিহাস তাঁর লেখক জীবনে নেই। ফাজায়েলে আল কোরান, ফাজায়েলে রমজান, ফাজায়েলে সালাত ও ফাজায়েলে আমল নামক তাঁর রচিত গ্রন্থগুলি প্রায় ১০ থেকে ১৫টি ভাষায় অনূদিত হয়ে প্রকাশিত হয়েছে। পবিত্র কোরানের তাফসির বিষয়ক ৪টি, হাদিসশাস্ত্রের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মোট ৪৪টি, ইসলামি ফিকাহ বিষয়ক ৬টি, ইতিহাস ও জীবনী বিষয়ক ২৪টি, ইসলামি আকিদা বিষয়ক ৪টি, জিহাদ বিষয়ক ১২টি, আরবি ব্যকরণ বিষয়ক ৩টি এবং সমকালীন নানা বিষয়ের উপর ৬টি বইসহ প্রায় দুই শতাধিক গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থের একজন স্বনামধন্য লেখক ছিলেন শায়খুল হাদিস মাওলানা জাকারিয়া। সমকালীন সব আলিমদের তুলনায় এই ক্ষেত্রেও বেশ অগ্রগামী ছিলেন তিনি। তৎকালীন অনেক আলিমরা এইজন্য তাকে হজরত শাহ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলোভির [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] প্রতিচ্ছবি বলতেন।

শায়খুল হাদিস মাওলানা জাকারিয়া [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] রচিত গ্রন্থের মাঝে আওয়াজাজুল মাছালিক, খাসায়িলে হজরত নববি (সা.), আল-কাওয়াকিবুদ দুররি, লামিউদ দুররি, এবং আল-আবওয়াব ওয়াত তারাজিম বিশেষ প্রসিদ্ধ। এছাড়া তাবলিগ জামাতে আলিমের জন্য নির্বাচিত মাওলানা জাকারিয়া [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] রচিত ‘ফাজায়েলে আমল’ বইটি চেনেন না এমন মুসলমান তাবলিগ জামাতে তো নেই, অন্যান্য সেক্টরেও নেই বললেই চলে। তাঁর এই খেদমতটিকে বিশেষভাবে কবুল করেছেন আল্লাহ মহান।

দাওয়াত ও তাবলিগ এবং একজন মাওলানা জাকারিয়া
দাওয়াত ও তাবলিগের সঙ্গে মাওলানা জাকারিয়ার [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বিশেষ স¤পৃক্ততা ছিল। এ কাজের সূচনা বয়স থেকেই তিনি এর সঙ্গে জড়িত ছিলেন। মাওলানা ইলিয়াসের [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] মৃত্যুর পর তিনিই একমাত্র সর্বোচ্চ মুরুব্বি ও রাহবার হিসেবে সামনে আসেন। মাওলানা ইলিয়াস [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] পরবর্তী দুজন আমীর নির্বাচনের ক্ষেত্রে তাঁর ভূমিকাই মূখ্য ছিল। দাওয়াতি এ মিশন পরিচালনার প্রতিটি ক্ষেত্রে সর্বাত্মক সহযোগিতা তিনি করতেন। বিভিন্ন দাওয়াতি সফর ও ইজতেমায় শরীক হয়েছেন নিজেও। বর্তমানে উপমহাদেশের এই সীমানায় ইলমি ও দাওয়াতি ময়দানে যাঁরাই বহুমুখী খেদমত আঞ্জাম দিচ্ছেন; তাঁদের অধিকাংশই শায়খুল হাদিস জাকারিয়ার [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] ছাত্র কিংবা স্পর্শধন্য। দীনি খেদমতের জমিনে যেসব বীজ তিনি অঙ্কুরিত করে গেছেন; তা আজ ফলদার বৃক্ষরূপে উম্মতকে নানাভাবে উপকৃত করেছে। কেয়ামত পর্যন্ত এ ধারা অব্যাহত থাকবে, ইনশাআল্লাহ।

মাওলানা ইলিয়াসের মৃত্যুর পর বিভিন্ন সময় মাওলানা ইউসূফ, মাওলানা এনামুল হাসানরা বাহ্যত আমির থাকলেও মাওলানা জাকারিয়া ছিলেন এ কাজের প্রধান মুরুব্বি। তাবলিগি কাজের নানান বিপদসঙ্কুল সময় বিচক্ষণতার সঙ্গে বিভিন্ন পরামর্শ প্রদান করেছেন মহান এই ব্যক্তিত্ব। মাওলানা ইলিয়াসের মৃত্যুর পর মাওলানা ইউসূফ কান্দলভিকে এবং মাওলানা ইউসূফের ইনতিকালের পর হজরতজি এনামুল হাসানকে তাঁরই পরামর্শ অনুযায়ী তাবলিগ জামাতের ‘আমির’ নির্বাচিত করা হয়েছিল। এককথায়, শায়খুল হাদিস আল্লামা জাকারিয়া তাবলিগ জামাতের পৃষ্ঠপোষক পর্যায়ের একজন মুরুব্বি ছিলেন। তিনি ছিলেন জামাতে তাবলিগের এমন এক জ্ঞানবৃক্ষ, যে জ্ঞানবৃক্ষের ছায়াতলে নিশ্চিন্ত-নিরাপদে বিস্তার লাভ করেছে তাবলিগ জামাত। স্বস্তি-শুভ্রতার সাথে কাজ আঞ্জাম দিয়েছেন কার্যত আমিররা। তাবলিগ জামাতের বহুল প্রচার-প্রসারের লক্ষে পরামর্শ বা নির্দেশনা প্রদান করা ছাড়াও বিভিন্ন সময় তিনি নিজেও তাবলিগের সফরে বেড়িয়েছেন। নিজে তালিম করেছেন। নিজস্ব তত্ত্বাবধানের মাধ্যমে বাঘা বাঘা দীনের দায়ি তৈরি করেছেন তিনি। বর্তমান সময় পর্যন্ত সারা বিশ্বব্যাপী দাওয়াতে তাবলিগের কাজ যাদের জিম্মাদারিতে চলছে, প্রত্যক্ষ বা পরোাক্ষভাবে মাওলানা জাকারিয়ার [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] শিক্ষা প্রদান বা তত্ত্বাবধান-তরবিয়তগত অবদানে ধন্য তারা সবাই।

আবার চলে এলেন ভারতে; কিন্তু কেন?
১৩৪৫ হিজরি সনে মাওলানা জাকারিয়া [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] ভারত ছেড়ে মদিনায় চলে গিয়েছিলেন এবং সেখানে এক বছর অবস্থান করেছিলেন। এ সময় তিনি মদিনায় অবস্থিত মাদরাসা আল-উলূম আশ-শরইয়াতে হাদিসগ্রন্থ আবু দাউদ শরিফের ‘দরস’ প্রদান করতেন। মদিনা শরিফে এক বছর থাকার পর আবার তিনি ফিরে এলেন ভারতে এবং মাজাহিরুল উলূম মাদরাসায় ‘মুহাদ্দিস’ পদে যোগ দান করলেন। এ সময় তাকে হাদিসশাস্ত্রের বড় বড় কিতাবের সঙ্গে বোখারি শরিফের ২য় খন্ড পড়ানোর দায়িত্ব প্রদান করা হয়। তিনি যখন বোখারি শরিফের ২য় খন্ড পড়াতেন, মাওলানা খলিল আহমদ সাহরানপুরি [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] তখন ১ম খন্ডের দরস দান করতেন। মাওলানা সাহরানপুরির ইনতিকালের পর সহিহ বোখারি পড়ানোর দায়িত্ব সম্পূর্ণভাবে মাওলানা জাকারিয়ার [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] ওপর ন্যস্ত হয়।

বোখারি শরিফ অনেকাংশেই মুখস্ত ছিল তাঁর
এক পরিসংখ্যানে দেখানো হয়েছে যে, গোটা জীবদ্দশায় শায়খুল হাদিস মাওলানা জাকারিয়া [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] মোট ২৫ বার বোখারি শরিফ দ্বিতীয় খন্ডের এবং ১৬ বার পুরো বোখারি শরিফের দরস দান করেছেন। এতোটা অভিজ্ঞতা, এতো ভালো ইলম থাকার পরও কোনো একদিন ‘মোতালায়াহ’ ছাড়া বোখারির দরস প্রদান করেননি তিনি। অনেক সময় দেখা যেত, ছাত্ররা কিতাব পড়ছে আর মাওলানা জাকারিয়া [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] কিতাব না দেখেই ভুল ধরছেন। এককথায়, পবিত্র কোরানের মতো সহিহ বোখারি শরিফও অনেকাংশে মুখস্ত হয়ে গিয়েছিল তার। এক বছর সৌদি আরবে অবস্থান করা ছাড়াও বেশ কয়েকবারই তিনি পবিত্র হজব্রত পালনের উদ্দেশ্যে মক্কা-মদিনায় গিয়েছেন। এর মাঝে (১৩৩৮ ও ১৩৪৪ হিজরি সনে) দুইবারই তিনি মাওলানা খলিল আহমদ সাহরানপুরির [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] সফরসঙ্গী ছিলেন।

বিবাহ-সংসার-পরিবার-সন্তান-সন্তুতি
আল্লামা শায়খ রাফি আল-হাসানের [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] কন্যার সঙ্গে বিবাহ হয়েছিল মাওলানা জাকারিয়া [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম আঘাত মেনে নিতে হলো- ১৩৫৫ হিজরিতে তাঁর প্রথম স্ত্রীর ইনতিকাল হয়। প্রথম স্ত্রীর ইনতিকালের পর ১৩৫৬ হিজরিতে দ্বিতীয়বার বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন তিনি। প্রথম ও দ্বিতীয় স্ত্রীর ঘরে মোট সাত মেয়ে এবং তিন পুত্র সন্তানের জনক ছিলেন মাওলানা জাকারিয়া [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]।

অত্যন্ত ধার্মিক একজন সাধক ছিলেন
ব্যক্তিগত জীবনে মাওলানা জাকারিয়া [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] অত্যন্ত ধার্মিক একজন সাধক পুরুষ ছিলেন। জীবনের প্রতিটি বিষয়ে, প্রতিটি মুহূর্ত কাটানোর ক্ষেত্রে কোরান-সুন্নাহর নির্দেশনাই ছিল তাঁর একমাত্র পাথেয়। সুন্নাতে রাসুলের একজন সাচ্চা আশেক, শুদ্ধ অনুসারী ছিলেন তিনি। আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের সন্তুষ্টি অর্জনের মানসে চিরজীবন বিনামূল্যে হাদিসের দরস প্রদান করেছেন। বিভিন্ন মাদরাসা থেকে ভালো সম্মানিতে খেদমতের অনেক সুযোগ আসার পরও কখনো তা গ্রহণ করেননি তিনি, এমনকি মাজাহিরুল উলূম মাদরাসা থেকে তাঁর জন্য মাসিক সম্মানির ব্যবস্থা করা হলেও তিনি তা প্রত্যাখান করেছিলেন। ইলমে হাদিসের দরস প্রদান করাকে পেশা হিসেবে নয়, মহান এক ইবাদত হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন মাওলানা জাকারিয়া [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]।

কুল্লু নাফসিন জায়িকাতুল মাওত
কুল্লু নাফসিন জায়িকাতুল মাওত- এসেছি যখন বিদায় তখন নিতেই হবে। কেউ আগে আর কেউ পরে। মানজীবনের এই চিরসত্যটির প্রতি গভীর বিশ্বাস ছিল মাওলানা জাকারিয়ার। কিন্তু একটি স্বাদ ছিল, একটি আকাক্সক্ষা পুষে রেখেছিলেন হৃদয়ে। রাসুলের [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] শহর মদিনায় মৃত্যু বরণের বড় ইচ্ছা ছিল তাঁর। বারেবারে, বিভিন্ন সময়- কারণে-অকারণে তাই মদিনায় ছুটে আসতেন তিনি। আল্লাহ মহান তাঁর এই সাধক বান্দার মনোবাসনা পূরণ করলেন, ১৯৮২ সালের ২৪ শে মোতাবিক ১৪০২ হিজরি সনের ২রা শাবান পবিত্র নগরী মদিনায় থাকাবস্থায় প্রিয়তম প্রভুর ‘দিদারে’ যাওয়ার ডাক এলো এবং সেই ডাকে সাড়া দিয়ে পুলকিত হৃদয়ে, আন্দোলিত বদনে চলে গেলেন শায়খুল হাদিস মাওলানা জাকারিয়া [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]। মৃত্যুর সময় তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৭ বছর। পরে পবিত্র নগরীর ‘জান্নাতুল বাকি’তে সমাধিস্থ করা হয় তাঁকে। নবি পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সুখনিদ্রায় আজও সেখানেই সুয়ে আছেন তিনি এবং থাকবেন ঠিক সেই দিন পর্যন্ত- সেদিন আবার প্রিয়তম প্রভুর ডাক আসবে, সুখকর চিরস্থায়ী প্রতিদান প্রদানের ডাক। ###

Comment

লেখক পরিচিতি

মিরাজ রহমান

গতানুগতিক ধারার বাইরে থেকে কাজ করে ইতিমধ্যেই বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন মিরাজ রহমান। পেশায় পুরোদস্তুর একজন সাংবাদিক হলেও কেবল ইসলামকে ঘিরেই আবর্তিত তার ধ্যান-জ্ঞান। দৈনিক পত্রিকার ইসলাম পাতায় লেখালেখি থেকে তিনি পরিচিত হয়ে উঠেছেন বটে, কিন্তু একসময় শিল্প চর্চায়ও ছিলেন বেশ মনোযোগী।
মিডিয়ায় সক্রিয়ভাবে কাজ শুরু করেছেন যখন, তখনও তিনি ছাত্র। মাদানিনগর মাদরাসার কাফিয়া জামাতের (শ্রেণি) শিক্ষার্থী থাকা অবস্থায় কণ্ট্রিবিউটর হিসেবে প্রথম কাজ শুরু করেন দৈনিক যুগান্তরে। ধারালো লিখনী শক্তি অল্পদিনের মধ্যে পরিচিত করে তোলে তাকে। দেশের জাতীয় দৈনিক পত্রিকার প্রায় সবগুলোতেই ইসলামবিষয়ক কলাম ও ফিচার লিখেছেন দীর্ঘ সময়। জাতীয় প্রিন্ট মিডিয়াগুলোতে তার অন্তত দুই সহস্রাধিক প্রবন্ধ-নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে।
মিরাজ মূলত পড়াশুনা করেছেন কওমি শিক্ষাধারায়, এর পাশাপাশি তিনি জেনারেল শিক্ষাধারায়ও পড়াশুনা করছেন। সহ-সম্পাদক হিসেবে প্রথম যোগদান করেন দৈনিক ডেসটিনি পত্রিকায়। সেখান থেকে দৈনিক কালের কণ্ঠে। দেশে-বিদেশে অনলাইন গণমাধ্যমের জয়যাত্রা শুরু হলে মিরাজ ইন্টারনেট জগতকে ইসলাম প্রচারের জন্য সবচেয়ে সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র বিবেচনা করে অনলাইনেই গাঁটছাড়া বাঁধেন। দেশের প্রথম পূর্ণাঙ্গ ইসলামবিষয়ক অনলাইন পোর্টাল প্রিয়.কমের ‘প্রিয় ইসলাম’-এর সৃষ্টি ও পথচলার সূচনা তারই হাতে। দীর্ঘদিন কাজ করেছেন প্রিয়.কমের প্রিয় ইসলাম বিভাগের এডিটর ইনচার্জ। সর্বশেষ কর্মরত ছিলেন দৈনিক বাংলাদেশের খবরের ফিচার ইনচার্জ হিসেবে।
টেলিভেশনে অনুষ্ঠানের উপস্থাপনা ও আলোচনার সঙ্গেও ইতিমধ্যে যুক্ত হয়েছেন মিরাজ রহমান। পরিচালনা করেছেন বেশ কিছু অনুষ্ঠানও। এসো কলম মেরামত করি, ছোটদের নবী-রাসূল সিরিজ, তাবলিগী জামাতের পৃষ্ঠপোষক-মুরুব্বি ছিলেন যাঁরা, শরয়ী পর্দার বিধান, আশিক মিন ফিলিস্তিন, নারী তুমি সৌভাগ্যবতী ও হালাল ব্যবসা ও হালাল অর্থনীতির কথকতাসহ বেশ কিছু আলোড়ন সৃষ্টিকারী গ্রন্থেও জনক তিনি। বর্তমান তিনি ইসলাম প্রতিদিনের সম্পাদক ও প্রকাশক এবং দ্য সুলতান প্রকাশনীর প্রধান নির্বাহী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।