জীবনী মুসলিম মনীষী

বিশ্ব তাবলীগ জামাতের দ্বিতীয় আমির মাওলানা ইউসূফ কান্দলভির [রহ.]

লিখেছেন মিরাজ রহমান

২০ মার্চ ১৯১৭ সাল মোতাবিক ১৩৩৫ হিজরি সনের ২৫ জুমাদাল উলা ভারতের কান্দালায় জন্ম গ্রহণ করেন মাওলানা ইউসূফ কান্দলভি [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]। ভারতের বিখ্যাত এক ধার্মিক পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন তিনি। ইসলামি ফিকহ ও হাদিসশাস্ত্র বিশেষজ্ঞ বেশ কয়েকজন ভুবনবিখ্যাত আলেমে দীনের আবির্ভাব ঘটেছে তাঁর বংশে। তাঁর পিতা তাবলিগ জামাতের প্রতিষ্ঠাতা পুরুষ বিশ্ব তাবলিগের প্রথম আমির হজরত মাওলানা ইলিয়াস কান্দলভি [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]।

পবিত্র বংশলতিকা
মাওলানা ইউসূফ কান্দলভির [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বংশলতিকা ধারাবাহিকভাবে বিশিষ্ট সাহাবি হজরত আবু বকর [রাজিআল্লাহু তায়ালা আনহু]-এর মাধ্যমে রাসুল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর সঙ্গে মিলিত হয়েছে। মাওলানা ইউসূফ কান্দলভির বংশলতিকার কিছু অংশ প্রদান করা হলো— মাওলানা ইউসূফ কান্দলভি বিন মাওলানা ইলিয়াস কান্দলভি বিন মাওলানা ইসমাইল বিন মাওলানা গোলাম হুসাইন বিন হাকিম কারিম বকশ বিন হাকিম গোলাম মহিউদ্দিন বিন মাওলানা মুহাম্মাদ সাজিদ বিন মাওলানা মুহাম্মাদ ফাইজ বিন মাওলানা হাকিম মুহাম্মাদ শারিফ বিন মাওলানা হাকিম মুহাম্মাদ আশরাফ বিন শায়খ জামাল মুহাম্মাদ শাহ বিন শায়খ নূর মুহাম্মাদ বিন শায়খ বাহাউদ্দিন শাহ বিন মাওলানা শায়খ মুহাম্মাদ বিন শায়খ মুহাম্মাদ ফাজিল বিন শায়খ কুতুবুদ্দিন শাহ। …এভাবে হজরত আবু বকর [রাজিআল্লাহু তায়ালা আনহু] -এর মাধ্যমে রাসুল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর সঙ্গে মিলিত হয়েছে মাওলানা ইউসূফ কান্দলভির [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] পবিত্র বংশলতিকা।

হাফেজ, আলিম, দায়ি এবং আধ্যাত্মিক পুরুষদের সমাহার…
মাওলানা ইউসূফ কান্দলভি [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] এমন একটি বরকতপূর্ণ ধার্মিক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন, যে পরিবারটিতে হাফেজ, আলিম, দীনের দায়ি এবং আধ্যাত্মিক পুরুষদের সমাহার ছিল এবং তাঁদের পরিবারে ছেলেদের পাশাপাশি মেয়েরাও পবিত্র কোরান হিফজ করতো। পারিবারিক এই ধর্মীয় আনুকূল্যতায় খুব ছোট বয়সেই পবিত্র কোরানের হিফজ সমাপ্ত করতে সক্ষম হন তিনি। কারো কারো মতে, মাওলানা ইউসূফের হিফজের প্রথম শিক্ষক ছিলেন হাফেজ ইমাম খান মেওয়াতি [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]। এরপর হজরত মাওলানা সাইয়িদ হুসাইন আহমদ মাদানির [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] ভাই মাওলানা সাইয়িদ আহমদ ফায়জাবাদি [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-এর কাছ থেকে হিফজ সমাপ্ত করার সনদ গ্রহণ করেন মাওলানা ইউসূফ। পবিত্র কোরান হিফজ করার পাশাপাশি পিতার কাছে ইসলামি শিক্ষার প্রাথমিক পাঠ অর্জন করেন তিনি। প্রখর মেধাবী হওয়ার কারণে অল্প বয়সেই হাদিসশাস্ত্র অধ্যয়নের অনুমতি লাভ করেছিলেন মাওলানা ইউসূফ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]। ১৩৫১ হিজরি সনে মাজাহিরুল উলূম মাদরাসায় ভর্তি হওয়ার মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁর ছাত্রজীবনের সূচনা হয়। তৎকালীন ভারতের বিখ্যাত হাদিস বিশারদগণ এই মাদরাসায় দরস প্রদান করতেন। মাওলানা খলিল আহমদ সাহরানপুরি [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] এবং শায়খুল হাদিস মাওলানা জাকারিয়া [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-এর মতো ভুবনবিখ্যাত হাদিসবেত্তারাও তখন এই মাদরাসার ‘মুহাদ্দিস’ ছিলেন।

মাওলানা ইউসুফের সৌভাগ্য!
মায়ের কোল শিশুর প্রথম বিদ্যালয়, প্রথম পাঠশালা। এখান থেকেই একটি শিশুর স্বভাবগত ও চিন্তাগত মানসিক শক্তির বিকাশ ঘটা শুরু হয়। মাওলানা ইউসুফের সৌভাগ্য এ ব্যাপারে পুরোটাই অনুকূলে ছিল। মাওলানা ইলিয়াসের মতো বাবা এবং একজন মহীয়সী ধার্মিক নারীকে মা হিসেবে পেয়েছেন তিনি। পরবর্তী জীবনে একজন বিজ্ঞ আলিম ও মানবতার সেবায় নিয়োজিত একজন মনীষী হিসেবে মাওলানা ইউসুফের গড়ে ওঠার নেপথ্যে মা-বাবা কিংবা পরিবারের এই সুষম তত্ত্বাবধানই মূল ছিল। কেবল মা-বাবা ও পরিবারের সদস্যদের কাছে থেকেই নয়, পরিবার থেকে শুরু করে মাদরাসা জীবন পর্যন্ত সর্বক্ষেত্রের কর্তাব্যক্তিদের স্নেহ-ভালোবাসাময় শাসন পেয়েছিলেন তিনি। বাবা-মা বা শিক্ষকদের পক্ষ থেকে আদর-ভালবাসার দরজা যেমন উন্মুক্ত ছিল তাঁর জন্য, তেমনি করেই পদে পদে টানানো ছিল আদব-শিষ্টাচার কিংবা শিক্ষা-দীক্ষার শাসনের লাঠি। হজরত মাওলানা খলিল আহমদ সাহরানপুরি [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] মাওলানা ইউসূফকে আদর করে ‘বেটা’ বলে ডাকতেন এবং ইউসূফও তাকে ‘বাবাজান’ বলে সম্মোধন করতেন। মাজাহিরুল উলূম মাদরাসা থেকেই ‘দাওরায়ে হাদিস’ সমাপ্ত করেন মাওলানা ইউসূফ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]।

আমলিয়াতের ময়দানেও বেশ অগ্রগণ্য ছিলেন তিনি
মাওলানা খলিল আহমদ সাহরানপুরি [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] ও শায়খুল হাদিস আল্লামা জাকারিয়া [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-এর কাছে হাদিসশাস্ত্রের বড় বড় কিতাবগুলোর দরস গ্রহণ করার অপার সুযোগ লাভ করেছিলেন মাওলানা ইউসূফ। ভুবনবিখ্যাত আলিম ও হাদিসবিশারদদের সংস্পর্শ এবং নিজের ঐকান্তিক আগ্রহকে পুঁজি করে খুব অল্প সময়ের ব্যবধানে ইলমি অঙ্গনের একটি উজ্জ্বল নক্ষত্রে পরিণত হয়েছিলেন তিনি। ইলমি যোগ্যতার সাথে সামঞ্জস্য রেখে আমলিয়াতের ময়দানেও বেশ অগ্রগণ্য ছিলেন। তাঁর সঙ্গী-সাথীদের বিভিন্ন মতামত থেকে জানা যায়, ছাত্রজীবন থেকেই ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নাত আমলের পাশাপাশি মুস্তাহাব আমলগুলোকেও খুব গুরুত্বের সঙ্গে পালন করতেন মাওলানা ইউসূফ। ইলম অর্জনের জন্য হজরত সাহরানপুরি [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] এবং শায়খুল হাদিস সাহেবের পাশাপাশি মাওলানা আব্দুল লতিফ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-এর কাছেও মাওলানা ইউসূফ কিছুদিন হাদিসের ‘দরস’ গ্রহণ করেছিলেন বলে জানা যায়।

কিতাব অধ্যয়নে গভীর মনোযোগী ছিলেন তিনি
কিতাব অধ্যয়ন করার প্রতি গভীর মনোযোগ ছিল মাওলানা ইউসুফের। কিতাব অধ্যয়নের বাহিরে অন্য তেমন কোন ‘মাশগালাহ’ ছিল না তাঁর। এমনকি বাবা মাওলানা ইলিয়াস [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] প্রতিষ্ঠিত দাওয়াতি মেহনতেও তেমন একটা সময় দিতেন না তখন। এ সম্পর্কে তিনি নিজেই বলেছেন, ‘প্রথমদিকে তাবলিগের প্রতি আমার তেমন মনোযোগ ছিল না। পড়াশুনা নিয়ে ব্যস্ত থাকাটাই আমার কাছে ভালো মনে থেকো। কিতাব অধ্যয়নের বাহিরে কোনো বিষয় আমাকে আকৃষ্ট করতো না এবং এ ঘোরাফেরাও আমার মনঃপূত ছিল না। তাবলিগের যতোটুকু কাজ আমি তখন করেছি, তা ‘হজরতজি’র বদৌলতে করেছি।

মহামান্য পিতার শেষ সোহবত এবং…
ইনতিকালের আগের রমজান মাসে মাওলানা ইউসূফকে বিশেষভাবে তাঁর সঙ্গে ইতিকাফে রেখেছিলেন মাওলানা ইলিয়াস [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]। সে সময় মাওলানা ইউসূফ বাবার অনেক খেদমত করেছিলেন। ছেলের দ্বারা দাওয়াতি কাজের অগ্রগতি নিয়ে বেশ চিন্তিত ছিলেন মাওলানা ইলিয়াস [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] এবং এ বিষয়টি নিয়ে তৎকালীন দেশবরেণ্য আলিমদের সঙ্গে কয়েকবার পরামর্শও করেছিলেন তিনি। মাওলানা সাইয়িদ হুসাইন আহমদ মাদানি তখন জেলে থাকা অবস্থায় পত্রযোগে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। বারবার পরামর্শ করেছিলেন শাইখুল হাদিস মাওলানা জাকারিয়ার সঙ্গেও। কিন্তু নাহ, আল্লাহ মহানের ইচ্ছায় ঠিক শেষ মুহূর্তে এসে ছেলের আগ্রহ এবং ঐকান্তিকতা দেখে মুগ্ধ হলেন বাবা। মাওলানা ইলিয়াস [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] যখন বিদায় নিচ্ছিলেন, প্রিয়তম প্রভুর দরবারে যখন তিনি ‘দিদার’-এ যাচ্ছিলেন, মাওলানা ইউসূফ তখন তাঁর পাশেই ছিলেন। বিদায় বেলা মাওলানা ইলিয়াস [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] একপলকে ছেলের দিকেই তাকিয়ে ছিলেন। দেখে মনে হচ্ছিল কী যেন বলছিলেন তিনি, কোনো এক অমূল্য নির্দেশনা রেখে যাচ্ছেন ছেলে ইউসুফের কাছে। অনেকটা সময় ধরে অপলক তাকিয়ে রইলেন এবং হঠাৎ চোখ বুজে চলে গেলেন। মাটির পৃথিবী ছেড়ে উর্ধ্বজগতে…।

বিশ্ব তাবলিগ জামাতের দ্বিতীয় আমির মনোনীত হলেন তিনি
মাওলানা ইলিয়াসের [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] ইনতিকালের পর তৎকালীন ভারতের প্রথিতযশা আলিম-ওলামা, বিশেষ করে মাওলানা হুসাইন আহমদ মাদানি [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] এবং শায়খুল হাদিস মাওলানা জাকারিয়া [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-এর পরামর্শ অনুযায়ী মাওলানা ইউসূফকেই তাঁর স্থলাভিষিক্ত করা হলো। বিশ্ব তাবলিগ জামাতের দ্বিতীয় আমির মনোনীত হলেন তিনি। সর্বজন স্বীকৃত আমির। মাওলানা ইউসুফের প্রাথমিক জীবনের ইলমি অধ্যয়নপ্রীতি এবং দাওয়াতি কাজে অংশগ্রহণের স্বল্পতার কারণে তাঁকে নিয়ে অনেকেই সন্দিহান ছিলেন, বাবার রেখে যাওয়া দাওয়াতি মিশনের সফল ধারক থেকে পারবেন তো তিনি! মাওলানা ইলিয়াস [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-এরে মতো করে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবের তো দীনের এ মহান কাজকে!

ইউসুফের নয়, মাওলানা ইলিয়াসের কথাই শুনছিলাম আমি
মাওলানা ইলিয়াস [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-এর ইনতিকালের পূর্ব মুহূর্তে সমকালীন বুজুর্গদের মাশওয়ারার ভিত্তিতে মাওলানা ইউসূফকে যখন তাবলিগ জামাতের আমির নির্বাচিত করা হলো তখনও অনেকে সন্দিহান ছিলেন এ কাজের সঙ্গে তিনি নিজেকে যথার্থভাবে স¤পৃক্ত করতে পারবেন কি না। কিন্তু দায়িত্ব কাঁধে অর্পিত হয়ে যাওয়ার নতুন এক ইউসুফের আর্বিভাব অবলোকন করেন তাবলিগি সাথীরা। এ দায়িত্ব পালনে সর্বাত্মকভাবে নিযুক্ত হন তিনি। নিজের সত্তার সঙ্গে দাওয়াত ও তাবলিগের কাজকে জড়িয়ে নেন একেবারেই। তাঁর কাজের গতি এতোই ক্ষিপ্র ছিল যে, মুফাক্কিরে ইসলাম সাইয়িদ আবুল হাসান আলি মিয়া নদভি [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-এর ভাষায়, ‘তিনি মাসের কাজ করতেন দিনে, আর দিনের কাজ করতেন ঘণ্টায়।’ রাত-দিনের পুরোটা সময় তিনি তাবলিগের কাজের জন্য ওয়াকফ করে দিয়েছিলেন। এমনকি নিতান্ত প্রয়োজনের সময়টুকু ছাড়া পরিবারের জন্যও তাঁর কোনো বিশেষ সময় বরাদ্দ ছিল না। বয়ান, মাশওয়ারা, গাশত, কারগুজারি— এসব কাজে মধ্যেই কাটতো তাঁর পুরোটা সময়। জীবনের শেষদিন পর্যন্ত ক্লান্তি নামক কোনো জিনিস তাঁর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয়নি। ত্যাগ ও সাধনার সর্বোচ্চ কোরবানি তিনি করেছেন দীনকে জিন্দা করার জন্য। বিশ্বের প্রতিটি মানুষ যেন আল্লাহওয়ালা, নবিওয়ালা আদর্শেও অনুসারী হয়ে যায়— এটাই ছিল তাঁর জীবনের পরম চাওয়া-পাওয়া।

নানান প্রশ্নে চিন্তিত মুখগুলো হাস্যোজ্জ্বল হয়ে গেল, পরদিন থেকে মাওলানা ইউসুফের কার্যকলাপ ও কথাবার্তা শুনে আশ্চর্য বনে গেলেন অনেকেই। সবার কাছেই মনে হচ্ছিলো, আজ যেন মাওলানা ইউসূফকে নয়, মাওলানা ইলিয়াসকেই দেখছেন তারা। এ প্রসঙ্গে আলোচনা করতে গিয়ে মাওলানা মনজুর নোমানি [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] তাঁর এক প্রবন্ধে লিখেছেন, ‘মাওলানা ইলিয়াস [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-এর ইনতিকালের পরদিন মাওলানা ইউসূফ নামাজ পড়ালেন এবং নামাজান্তে কথা বললেন। মাওলানা ইউসুফের কথা শুনে আমার সেদিন মনে হচ্ছিলো, মাওলানা ইউসুফের নয়, মাওলানা ইলিয়াসের কথাই শুনছিলাম আমি। আশ্চর্য! কথা বলার ভঙ্গিমাটা পর্যন্ত সে রকম লাগছিল আমার কাছে। বাবার কাজের যোগ্য জিম্মাদার হিসেবে নয়, তাবলিগের কাজকে মাওলানা ইউসূফ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] নিজের কাজ হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন এবং জীবনের একমাত্র মিশন মনে করে পরবর্তী গোটা জীবনকে এ পথে উৎসর্গ করেছিলেন।

বিশ্বময় তাবলিগের বিস্তৃতির নেপথ্যে তাঁর অবদান
ভারত এবং এ উপমহাদেশের সীমানা ছাড়িয়ে গোটা বিশ্ব দরবারে তাবলিগি কাজের আমুল বিস্তৃতির নেপথ্যে মাওলানা ইউসুফের চিন্তা-ফিকির, চেষ্টা-মোজাহাদা এবং ইখলাস মূল নিয়ামক হিসেবে কবুল হয়েছে। এককথায়, তাবলিগ জামাতের বিশ্বায়নের মহান এক পথিকৃত ছিলেন মাওলানা ইউসূফ কান্দলভি [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]। তাঁর পিতার প্রতিষ্ঠিত দাওয়াতি মিশনকে বিশ্বময়, মুসলিম-অমুসলিম নির্বিশেষে প্রতিটি মানুষের কাছে পৌছানোর জন্য যুগান্তকরী বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করার পাশাপাশি নিজেও সফর করেছেন অকাতরে; অক্লান্ত চিত্তে ছুটে বেড়িয়েছেন এপাড়া ও পাড়ায়। সময়-অসময়ে সফর করেছেন দেশে-বিদেশে। এক সময়ের কিতাবের পোকা— কিতাব অধ্যয়ন ছাড়া কিছুই ভালো লাগতোনা যে ইউসুফের, সেই ইউসূফ দীনের দাওয়াতি মেহনতে হয়ে গেলেন পরিভ্রাজক। তাঁর প্রচেষ্টায় আল্লাহ মহান দীনের এই কাজকে বিশ্বের বিভিন্ন অমুসলিম দেশ পর্যন্ত কবুল করেছেন। মাওলানা ইউসুফের মাধ্যমে তাবলিগের কাজের এই ব্যাপ্তির কারণ বর্ণনা করতে গিয়ে বিখ্যাত লেখক মাওলানা আবুল হাসান মিয়া নদভি [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] লিখেছেন, ‘তিনি (মাওলানা ইউসূফ কান্দলভি) আমির থাকাকালীন দেশের অভ্যন্তরে জামাত পাঠানোর তুলনায় বিদেশে জামাত পাঠানোর প্রতি বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করেছিলেন। যার ফলস্বরূপ বিশ্বদরবারে সমাদৃত হয়েছে এই কাজ। দেশ-দেশান্তরে বিস্তৃতি ঘটেছে। নাম জানা কিংবা নাম না জানা বহু মুসলিম-অমুসলিমের কাছে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছেছে এবং ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে এসে শান্তির জীবন গ্রহণ করে ধন্য হয়েছে অনেকেই।’

মাওলানা ইউসূফ কান্দলভি [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] ইউরোপ, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, আফ্রিকাসহ বিশ্বের সব বড় বড় দেশে নিজে তাবলিগের সফর করেছেন এবং অসংখ্য অমুসলিমকে এ কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত করে নতুন জীবন দান করেছেন। বাংলাদেশের বেশ কিছু দাওয়াতি ইজতেমায়ও তিনি শরীক হয়েছেন। এছাড়া বর্তমান তাবলিগ জামাতে বিশ্ব ইজতেমা পালনের যে আয়োজন রয়েছে, এটাও মূলত মাওলানা ইউসূফ কান্দলভি [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-এর আবিষ্কার। তাঁর সময়েই সর্ব প্রথম তাবলিগ জামাতে বিশ্ব ইজতেমা আয়োজনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। ছোট্ট আকারের সেই ইজতেমা আল্লাহ মহানের রহমত ও বরকতে আজকের এই বৃহৎ রূপ লাভ করেছে। কোরানি কৌশল অবলম্বন করে দাওয়াত দানের ক্ষেত্রে তাঁর কোনো নজির ছিল না। তাঁর কর্মকৌশল ও বিচক্ষণতা দেখে সঙ্গী-সাথীরা বিস্মিত থেকেন।

সুন্নাতে রাসুলের (সা.) একজন পূর্ণ অনুসারী
ব্যক্তিগত জীবনে সুন্নাতে রাসুলের [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] পূর্ণ অনুসারী ছিলেন মাওলানা ইউসূফ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]। জীবন চলার পথে রাসুল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর সুন্নাতই ছিল তাঁর একমাত্র পাথেয়। এমন অনেক সুন্নাতি আমল তাঁর অভ্যাস ছিল, সাধারণত মানুষ তো দূরে থাক অনেক আলিমও সেগুলো পালন করতো না। মাওলানা ইউসূফের [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] সুন্নাতের ‘ইত্তেবা’র একটি উদাহরণ দিতে গিয়ে মাওলানা নোমানি [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] লিখেছেন, ‘আমি এক রাতে মাওলানা ইউসুফের বাড়িতে মেহমান ছিলাম। সকাল বেলা বিদায় নেওয়ার সময় অনেকটা পথ তিনি আমার সঙ্গে এলেন। আমি তাকে বললাম, এই কষ্টটা না করলেও তো থেকো। তখন তিনি বললেন, আমি আসাতে আপনার কোনো অসুবিধা হচ্ছে? আমি তো রাসুলের [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] সুন্নাত পালনার্থে আপনাকে এগিয়ে দিতে এসেছি।’

রাসুল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর একজন সাচ্চা আশেক ছিলেন তিনি। একনিষ্ঠ অনুসারী ছিলেন সুন্নাতে রাসুলের। রাসুলের [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] সান্নিধ্য স্পৃহায় আত্মহারা হয়ে বারবার পবিত্র হজব্রত পালনে যেতেন তিনি। একবার জাহাজে চড়ে তাঁর হজব্রত পালন করতে যাওয়া নিয়ে কেউ কেউ বললো, ‘এতো টাকা খরচ করে হজ পালন করা অপচয় হবে।’ তখন মাওলানা ইউসূফ কান্দলভি [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেছিলেন, ‘কেবল কিছু টাকা কেন, আমার জীবনের সবকিছু কোরবানি করেও যদি রাসুল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর একটি সুন্নাতকে আমি ‘জিন্দা’ করতে পারি, তাহলে আমার জীবনের সব শ্রম সার্থক হবে।’

লেখালেখিও করতেন তিনি
এতো এতো কর্মব্যস্ততা, এতো সব দাওয়াতি আমল বাস্তবায়ন করার মাঝেও লেখালেখির প্রতি গভীর ঝোঁক ছিল মাওলানা ইউসুফের। একটি লেখক সত্ত্বার অধিকারী ছিলেন তিনি। ছাত্রজীবনে পড়াশুনার ফাঁকে ফাঁকে বিভিন্ন কঠিন কিতাবের টিকা-টিপ্পনী-ব্যাখ্যা লিখতেন মাওলানা ইউসূফ। বিখ্যাত হাদিসগ্রন্থ ত্বহাবি শরিফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ ‘আমানিউল আহবার শরহে মায়ানিছিল আসার’ এবং তিন খন্ডে রচিত তাঁর ‘হায়াতুস সাহাবা’ নামক গ্রন্থদ্বয় বিশ্বব্যাপী সমাদৃত হয়েছে।

শুভ বিবাহর, শুভ পরিণয়
১৩৫৪ হিজরি সনের মহররম মাসে সাইয়িদ মাওলানা হুসাইন আহমদ মাদানি [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-এর হাতে শায়খুল হাদিস আল্লামা জাকারিয়া [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-এর কন্যার সাথে মাওলানা ইউসূফ কান্দলভির [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বিবাহ হয়। বিবাহের ১৬ বছর পর সিজদাবনত অবস্থায় তাঁর স্ত্রীর ইন্তেকাল হয়। প্রথম স্ত্রীর ঘরে কোনো সন্তান ছিল না তাঁর। প্রথম স্ত্রীর ইনতিকালের পর শায়খুল হাদিস আল্লামা জাকারিয়া [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-এর দ্বিতীয় কন্যার সঙ্গে দ্বিতীয়বার বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন মাওলানা ইউসূফ। এই ঘরে মুহাম্মাদ হারুন এবং আরজুমান্দ নামে এক পুত্র ও এক কন্যা সন্তান জন্ম গ্রহণ করে।

বাপ কা বেটা সিপাহি কা ঘোড়া…
তাবলিগ জামাতের মূল প্রতিষ্ঠাতা হজরত মাওলানা ইলিয়াস [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]। কিন্তু তাঁর ইনতিকালের পর দাওয়াতি এ ধারায় গতি সঞ্চালন এবং তাবলিগকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেয়ার পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান মাওলানা ইউসূফ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-এর। পিতার জীবদ্দশায় দাওয়াত ও তাবলিগের কাজের সঙ্গে জোরালো কোনো সম্পৃক্ততা তাঁর ছিল না। কিন্তু পিতার ইনতিকালের পর তাবলিগের কাজে সম্পূর্ণভাবে উৎসর্গ করে দেন নিজেকে। পিতার অপূর্ণতা, অসমাপ্ত মিশনকে সম্পূর্ণরুপে আয়ত্ব করেন তিনি এবং পিতার চেয়ে কয়েক ধাপ আগ্রগণ্য ভূমিকা পালন করার মাধ্যমে বিশ্বময় সফলতা অর্জন করেন তিনি। বাবা মাওলানা ইলিয়াস [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] -এর হুবহু কার্বন কপি ছিলেন মাওলানা ইউসূফ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]।

তাবলিগের পাবলিসিটি পছন্দ করতেন না তিনি
হজরত মাওলানা ইলিয়াস [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] দাওয়াতে দীনের যে বীজটি অঙ্কুরিত করে গিয়েছিলেন; পরম মমতায় যত্নের মাধ্যমে সেই বীজতে একটি পরিপূর্ণ মহীরুহে পরিণত করার পেছনে মূল অবদান ছিল মাওলানা ইউসুফের। জামাতে তাবলিগের সোনালি ইতিহাসে স্বার্ণাক্ষরে রচিত থাকবে সে অবদানের কথা। ইখলাস ও লিল্লাহিয়াতে পিতার মতোই অতুলনীয় ছিলেন তিনি। তাবলিগ জামাত এবং তাবলিগি কাজের কোনো প্রকারের কোনো প্রচার পছন্দ করতেন না মাওলানা ইউসূফ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]। এক চিঠিতে তিনি এই বিষয়ে লিখেছিলেন, ‘মহান এই কাজের ব্যপকতার জন্য প্রচলিত প্রচার পদ্ধতি যথা— পত্র-পত্রিকা, লিফলেট-পোস্টার, ব্যানার-মাইকিং ইত্যাদি থেকে পরহেজ করা জরুরি। এই কাজই তো প্রচলিত প্রথা বিরোধী। এই কাজের প্রচার-প্রসারের জন্য দাওয়াত, গাশত, তালিম ও তাশকিলই যথেষ্ঠ। মাওলানা ইউসূফ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] এতোটাই প্রচার বিমুখ একজন মানুষ ছিলেন, বিভিন্ন সময়ে তাঁর প্রেরিত কোনো চিঠিপত্রেরও কোনো সন্ধান তিনি রেখে যাননি।

বিভিন্ন দেশে সর্বপ্রথম জামাত প্রেরণ
মাওলানা ইউসুফের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশে সর্বপ্রথম জামাত প্রেরণ করা হয়। তাবলিগ জামাতে বিদেশি সফরের তিনিই সূচনাকারী। ১৯৪৭ সালের ডিসেম্বরে পাকিস্তানের করাচিতে ইজতিমা অনুষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে ১৯৫৬ সাল পর্যন্ত রাওয়ালপিন্ডি, পেশাওয়ার, বাংলাদেশ, পাঞ্জাব, সিন্দুসহ বেশ কিছু এলাকায় তিনি সফর করেন। ১৯৪৬ সালে মাওলানা উবাইদুল্লাহ বলিয়াবি, মুফতি যাইনুল আবেদিন, মাওলানা সাঈদ আহমদ খান ও মাওলানা ইবরাহিমের সমন্বয়ে মিশরে সর্বপ্রথম একটি জামাত পাঠান। ১৯৬১ সালে মাওলানা আবুল হাসান আলি নদভির মাধ্যমে সুদানে, মাওলানা ওমর পালনপুরির মাধ্যমে ইরাকে, মাওলানা জিয়াউদ্দিনের মাধ্যমে সিরিয়ায় সর্বপ্রথম জামাত পাঠান তিনি। লিবিয়া, তিউনিশিয়া, আলজেরিয়া এবং মরক্কোতে সর্বপ্রথম জামাত পাঠান ১৯৬১ সালের দিকে। কেনিয়া, উগান্ডা, তাঞ্জানয়িা, জাম্বিয়া, দক্ষিণ ও পশ্চিম আফ্রিকা ও মরিশাসে সর্ব প্রথম জামাত প্রেরিত হয় ১৯৫২ সালে। ঠিক এই সময়ে মাওলানা ইউসুফের নেতৃত্বে জাপান, আমেরিকা এবং ইউরোপীয় বিভিন্ন দেশে সর্বপ্রথম তাবলিগের জামাত প্রেরিত হয় এবং তাবলিগি কাজের সূচনা ঘটে।

ইনতিকাল…
আল্লাহর রাস্তায় উৎসর্গিতপ্রাণ মহান এই বান্দা ২ এপ্রিল ১৯৬৫ সালে পাকিস্তানে চিল্লারত অবস্থায় ইনতিকাল করেন। সারা জীবন যার সফরে কেটেছে, ইসলামের দাওয়াত পৌঁছানোর সেই মহতি অবস্থায় বিদায় নিলেন তিনি। প্রিয়তম মাহবুবকে খুশি করার পথে নেমে আর ফিরলেন না ঘরে। শহিদ বেশে প্রভুর ‘দিদারে’ চলে গেলেন মাওলানা ইউসূফ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]। ###

Comment

লেখক পরিচিতি

মিরাজ রহমান

গতানুগতিক ধারার বাইরে থেকে কাজ করে ইতিমধ্যেই বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন মিরাজ রহমান। পেশায় পুরোদস্তুর একজন সাংবাদিক হলেও কেবল ইসলামকে ঘিরেই আবর্তিত তার ধ্যান-জ্ঞান। দৈনিক পত্রিকার ইসলাম পাতায় লেখালেখি থেকে তিনি পরিচিত হয়ে উঠেছেন বটে, কিন্তু একসময় শিল্প চর্চায়ও ছিলেন বেশ মনোযোগী।
মিডিয়ায় সক্রিয়ভাবে কাজ শুরু করেছেন যখন, তখনও তিনি ছাত্র। মাদানিনগর মাদরাসার কাফিয়া জামাতের (শ্রেণি) শিক্ষার্থী থাকা অবস্থায় কণ্ট্রিবিউটর হিসেবে প্রথম কাজ শুরু করেন দৈনিক যুগান্তরে। ধারালো লিখনী শক্তি অল্পদিনের মধ্যে পরিচিত করে তোলে তাকে। দেশের জাতীয় দৈনিক পত্রিকার প্রায় সবগুলোতেই ইসলামবিষয়ক কলাম ও ফিচার লিখেছেন দীর্ঘ সময়। জাতীয় প্রিন্ট মিডিয়াগুলোতে তার অন্তত দুই সহস্রাধিক প্রবন্ধ-নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে।
মিরাজ মূলত পড়াশুনা করেছেন কওমি শিক্ষাধারায়, এর পাশাপাশি তিনি জেনারেল শিক্ষাধারায়ও পড়াশুনা করছেন। সহ-সম্পাদক হিসেবে প্রথম যোগদান করেন দৈনিক ডেসটিনি পত্রিকায়। সেখান থেকে দৈনিক কালের কণ্ঠে। দেশে-বিদেশে অনলাইন গণমাধ্যমের জয়যাত্রা শুরু হলে মিরাজ ইন্টারনেট জগতকে ইসলাম প্রচারের জন্য সবচেয়ে সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র বিবেচনা করে অনলাইনেই গাঁটছাড়া বাঁধেন। দেশের প্রথম পূর্ণাঙ্গ ইসলামবিষয়ক অনলাইন পোর্টাল প্রিয়.কমের ‘প্রিয় ইসলাম’-এর সৃষ্টি ও পথচলার সূচনা তারই হাতে। দীর্ঘদিন কাজ করেছেন প্রিয়.কমের প্রিয় ইসলাম বিভাগের এডিটর ইনচার্জ। সর্বশেষ কর্মরত ছিলেন দৈনিক বাংলাদেশের খবরের ফিচার ইনচার্জ হিসেবে।
টেলিভেশনে অনুষ্ঠানের উপস্থাপনা ও আলোচনার সঙ্গেও ইতিমধ্যে যুক্ত হয়েছেন মিরাজ রহমান। পরিচালনা করেছেন বেশ কিছু অনুষ্ঠানও। এসো কলম মেরামত করি, ছোটদের নবী-রাসূল সিরিজ, তাবলিগী জামাতের পৃষ্ঠপোষক-মুরুব্বি ছিলেন যাঁরা, শরয়ী পর্দার বিধান, আশিক মিন ফিলিস্তিন, নারী তুমি সৌভাগ্যবতী ও হালাল ব্যবসা ও হালাল অর্থনীতির কথকতাসহ বেশ কিছু আলোড়ন সৃষ্টিকারী গ্রন্থেও জনক তিনি। বর্তমান তিনি ইসলাম প্রতিদিনের সম্পাদক ও প্রকাশক এবং দ্য সুলতান প্রকাশনীর প্রধান নির্বাহী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।