কােরআন ফিচার বই বেসিক ইসলাম

পবিত্র কোরআন পড়া শিখুন মাত্র ২৭ ঘণ্টায়!

লিখেছেন মিরাজ রহমান

পবিত্র কোরআনুল করিম লাওহে মাহফুজের অধিপতি আল্লাহ মহানের কালাম। এর ভাষাশৈলী এবং শিল্পমান সবই একমাত্র আল্লাহতায়ালার নিজস্ব শান অনুযায়ী নির্মিত। পবিত্র কোরআন সংরক্ষণ করার দায়িত্বও মহান রাব্বুল আলামিন তার নিজ জিম্মায় রেখেছেন। এই মর্মে তিনি ইরশাদ করেছেন- ইন্না নাহনু নাজ্জালনাজ জিকরা ওয়া ইন্না লাহু লা হাফিজুন। অর্থাৎ আমিই নাজিল করেছি কোরআনকে এবং আমিই তার সংরক্ষণকারী। [সুরা হিজর, আয়াত-৯]।
মহান আল্লাহর বান্দা হিসেবে পবিত্র কোরআন সংরক্ষণ, লিপিবদ্ধকরণ এবং কোরআন শেখার বিভিন্ন পথ ও পদ্ধতি আবিষ্কারের মহান কাজ আঞ্জাম দিতে গিয়ে পৃথিবীর মানুষ এমন সব কৃতিত্ব দেখিয়েছে, যা যুগ যুগ ধরে ইতিহাসের অধ্যায় আলোকিত করে রেখেছে। রসুল (সা.)-এর স্বর্ণযুগ থেকে বর্তমানকাল পর্যন্ত প্রত্যেক যুগেই এমন কিছু লিপিকারের আবির্ভাব ঘটেছিল, যাদের একমাত্র কাজই ছিল পবিত্র কোরআন লিপি ও সংরক্ষণ করা এবং পবিত্র কোরআন শেখার পদ্ধতি আবিষ্কার ও সহজ করা। এরই ধারাবাহিকতায় পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষায় কোরআন ভাষান্তরিত হয়েছে এবং প্রায় প্রত্যেক ভাষাতেই আবিষ্কৃত হয়েছে কোরআন শেখার অভিনব ও বিজ্ঞানসম্মত বিভিন্ন পদ্ধতি।
পবিত্র কোরআন শেখা ও শেখানোর বিভিন্ন মাধ্যম আবিষ্কারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশিরাও কোনো অংশে পিছিয়ে থাকেননি। বাংলা ভাষাতে বিভিন্ন পদ্ধতির কোরআন শেখার মাধ্যম আবিষ্কৃত হয়েছে এবং প্রায় সব পদ্ধতিই কমবেশি মুসলমানদের মধ্যে সমাদৃত হয়েছে। সহজভাবে খুব অল্প সময়ে পবিত্র কোরআন শেখার অভিনব ও বিজ্ঞানভিত্তিক একটি পদ্ধতি সঙ্কলন করেছেন প্রকৌশলী মইনুল হোসেন। আর সঙ্কলিত পদ্ধতিটির নাম ‘নূরানী পদ্ধতিতে ২৭ ঘণ্টায় কোরআন শিক্ষা’। গ্রন্থটি প্রকাশ করেছে মীনা বুক হাউজ। অভিনব এই আয়োজনটি নিয়ে কথা হয় মইনুল হোসেনের সঙ্গে। তার কাছে জানতে চাওয়া হয়-
আপনি একজন প্রকৌশলী। কোরআন গবেষণা করা বা কোরআন নিয়ে কাজ করার ভাবনাটা আপনার মধ্যে কীভাবে এলো?
মইনুল হোসেন : ২০০৫-০৬ সালের দিকে আমার মনে হলো কোরআনটা আমার ভালো করে শেখা প্রয়োজন। তখন আমার একজন আপা আছেন যিনি কিন্ডারগার্টেন স্কুল চালান। তিনি মাওলানা আবদুল বাতেন নামের একজন আলেমেদ্বীনের সঙ্গে আমাকে পরিচয় করিয়ে দিলেন। তার কাছেসহ আরো বেশ কয়েক আলেমেদ্বীনের কাছে আমি কোরআন পড়া শিখেছি। কিন্তু তার পড়ানোর পদ্ধতিসহ সব কিছু আমার যতটা ভালো লেগেছে অন্য কারো পড়ানোটা আমার কাছে ততটা ভালো লাগেনি। এরপর ২০১৩ সালের দিকে আমার আব্বা বলেন, তুমি আমাকে কোরআন শেখাও। আমি তাকে কোরআন শেখাতে শুরু করলাম। একদিন আমার বাবা আমাকে বলছেন, আমার তো বয়স হয়েছে, অক্ষরের নাম আমার তো মনে থাকে না। তুমি আরবি হরফের নিচে বাংলায় উচ্চারণগুলো লিখে দাও। এরপর আমার বাবা আমাকে বললেন, তুমি আমাকে কিছু হোমওয়ার্ক দাও। আমি বাজার থেকে কোরআন শিক্ষার অনেক বই কিনে আনালাম, কিন্তু কোনোটাতে হোমওয়ার্কের কোনো বিষয় পেলাম না। সেই সময় আমি কিছুটা বিপদে পড়ে যাই। তখন আমি আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানের ওপর ভিত্তি করে হোমওয়ার্কভিত্তিক কোরআন শেখার পদ্ধতি তৈরি করতে থাকি এবং বাবাকে পড়াতে থাকি। এভাবে কিছু দিন পড়ানোর পর আমার মনে হলো, আমি যদি এগুলো দিয়ে একটা বই তৈরি করি তাহলে সাধারণ মানুষ যারা কোরআন শিখতে চায় তাদের কাজে লাগবে।
আপনি তো বেশ কিছু বই ঘাঁটাঘাঁটি করেছেন এবং তারপর বইটি তৈরি করেছেন। অন্যান্য বইয়ের থেকে আপনার বইয়ের বিশেষ বৈশিষ্ট্য কী?
মইনুল হোসেন : আমার বইটিতে আমি এমন অনেক বিষয় যুক্ত করেছি, যা বাজারে থাকা সাধারণ কোনো কোরআন শিক্ষাবিষয়ক বইতে পাওয়া যাবে না। আমার বইয়ের একটা বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো, আমি এটাকে কোনো বই বলি না। আমি বলি এটি কোরআন শিক্ষাবিষয়ক একটি হোমওয়ার্কের খাতা। মানুষ শিখতে শিখতে লিখবে এবং লিখতে লিখতে শিখবে। এ ছাড়া বর্তমানে পাঠকের চাওয়া হচ্ছে স্পেসিফিক। আর আমার বইয়ে সেই স্পেসিফিক বিষয়টি রয়েছে। আমার বইয়ের মূল বিষয়টি হচ্ছে ২৭ ঘণ্টায় কোরআন শিক্ষা। কোনো একজন পাঠক যদি দৈনিক এক ঘণ্টা করে বইটি পড়ে তাহলে সে ২৭ দিনে ২৭ ঘণ্টায় মোটামুটিভাবে কোরআন শুদ্ধভাবে পড়তে পারবে। বইটির আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো- প্রত্যেক এক ঘণ্টা পড়ার পর একটা পরীক্ষা রয়েছে। এমন পদ্ধতি আর কোনো বইয়ে নেই এবং এই বইয়ে প্রশ্নের উত্তরও দেওয়া আছে। সুতরাং পরীক্ষা দেওয়ার পর পাঠক কতটুক পরল সেটা চেক করতে পারবে।
আপনার বইয়ের একটা আলাদা ভারতীয় সংস্করণ দেখেছি, এটা কেন করেছেন?
মইনুল হোসেন : আমার বইটি বাংলাদেশে ভালো চলার সঙ্গে সঙ্গে ভারতেও চলা শুরু করল। তা ছাড়া ভারতেও বাংলা ভাষাভাষী অনেক মুসলিম আছে, তাদের কথা তো আমাদের ভুলে গেলে চলবে না। যা হোক, আমি দেখলাম আমার বইটি অনেক হাত ঘুরে যখন ভারতের একজন পাঠকের হাতে যায়, তখন এই বইটির মূল্য দাঁড়ায় ভারতীয় ১৭০ রুপির মতো। তাতে করে বইটির অনেক বেশি দাম পড়ে যায়। যেটা সাধারণ একজন পাঠকের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। তাই আমি ভারতীয় একজন প্রকাশকের সঙ্গে কথা বললাম এবং সেখান থেকে বইটি প্রকাশনার ব্যবস্থা করলাম।
আপনার বইটি পড়ার বিষয়ে পাঠকদের বলার মতো বিশেষ কোনো দিকনির্দেশনা আছে কি?
মইনুল হোসেন : পাঠককে বলব, বইটি পড়ার আগে দৃঢ় নিয়ত করতে হবে যে, আমি বইটি পড়ে শিখব। আর দ্বিতীয় বিষয় হচ্ছে, তাকে একটা সময় নির্দিষ্ট করে নিতে হবে। পাঠক যেন প্রতিদিন নির্দিষ্ট একটা সময়ই পড়ে। সেটা হতে পারে ফজরের পরে বা এশারের পরে। যাহোক একটা নির্দিষ্ট সময়ে পড়াই ভালো। আর তৃতীয় বিষয় হচ্ছে, বইটি পড়ার মধ্যে নিয়মতান্ত্রিকতা বজায় রাখতে হবে।
বাংলা ভাষায় রচিত কোরআন শিক্ষাবিষয়ক সবচেয়ে বেশি প্রসিদ্ধ ও গ্রহণযোগ্য গ্রন্থ এই ‘নূরানী পদ্ধতিতে ২৭ ঘণ্টায় কোরআন শিক্ষা’। এটি এখন শুধু একটি গ্রন্থই নয়, আপামর জনসাধারণের কাছে পৌঁছানোর উদ্দেশ্যে সঙ্কলক প্রকৌশলী মইনুল হোসেন বইটির আলাদা ওয়েবসাইট, উচ্চারণসমৃদ্ধ মোবাইল অ্যাপস এবং সফটওয়্যার তৈরি করেছেন। এই বিষয়ে তিনি বলেন, বর্তমানে প্রযুক্তির যুগ। লাখ লাখ মানুষ প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে জাহান্নামের দিকে যাচ্ছে। আমরা কেন প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে জান্নাতের দিকে যেতে চেষ্টা করব না?

এই গ্রন্থটি এখন মোবাইল অ্যাপলিকশেন আকারেও মোবাইলে ডাউনলোপ করে পড়া যাবে। মোবাইল অ্যাপসটি ডাউনলোড করতে প্লিক করুন এই লিঙ্কে

Comment

লেখক পরিচিতি

মিরাজ রহমান

গতানুগতিক ধারার বাইরে থেকে কাজ করে ইতিমধ্যেই বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন মিরাজ রহমান। পেশায় পুরোদস্তুর একজন সাংবাদিক হলেও কেবল ইসলামকে ঘিরেই আবর্তিত তার ধ্যান-জ্ঞান। দৈনিক পত্রিকার ইসলাম পাতায় লেখালেখি থেকে তিনি পরিচিত হয়ে উঠেছেন বটে, কিন্তু একসময় শিল্প চর্চায়ও ছিলেন বেশ মনোযোগী।
মিডিয়ায় সক্রিয়ভাবে কাজ শুরু করেছেন যখন, তখনও তিনি ছাত্র। মাদানিনগর মাদরাসার কাফিয়া জামাতের (শ্রেণি) শিক্ষার্থী থাকা অবস্থায় কণ্ট্রিবিউটর হিসেবে প্রথম কাজ শুরু করেন দৈনিক যুগান্তরে। ধারালো লিখনী শক্তি অল্পদিনের মধ্যে পরিচিত করে তোলে তাকে। দেশের জাতীয় দৈনিক পত্রিকার প্রায় সবগুলোতেই ইসলামবিষয়ক কলাম ও ফিচার লিখেছেন দীর্ঘ সময়। জাতীয় প্রিন্ট মিডিয়াগুলোতে তার অন্তত দুই সহস্রাধিক প্রবন্ধ-নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে।
মিরাজ মূলত পড়াশুনা করেছেন কওমি শিক্ষাধারায়, এর পাশাপাশি তিনি জেনারেল শিক্ষাধারায়ও পড়াশুনা করছেন। সহ-সম্পাদক হিসেবে প্রথম যোগদান করেন দৈনিক ডেসটিনি পত্রিকায়। সেখান থেকে দৈনিক কালের কণ্ঠে। দেশে-বিদেশে অনলাইন গণমাধ্যমের জয়যাত্রা শুরু হলে মিরাজ ইন্টারনেট জগতকে ইসলাম প্রচারের জন্য সবচেয়ে সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র বিবেচনা করে অনলাইনেই গাঁটছাড়া বাঁধেন। দেশের প্রথম পূর্ণাঙ্গ ইসলামবিষয়ক অনলাইন পোর্টাল প্রিয়.কমের ‘প্রিয় ইসলাম’-এর সৃষ্টি ও পথচলার সূচনা তারই হাতে। দীর্ঘদিন কাজ করেছেন প্রিয়.কমের প্রিয় ইসলাম বিভাগের এডিটর ইনচার্জ। সর্বশেষ কর্মরত ছিলেন দৈনিক বাংলাদেশের খবরের ফিচার ইনচার্জ হিসেবে।
টেলিভেশনে অনুষ্ঠানের উপস্থাপনা ও আলোচনার সঙ্গেও ইতিমধ্যে যুক্ত হয়েছেন মিরাজ রহমান। পরিচালনা করেছেন বেশ কিছু অনুষ্ঠানও। এসো কলম মেরামত করি, ছোটদের নবী-রাসূল সিরিজ, তাবলিগী জামাতের পৃষ্ঠপোষক-মুরুব্বি ছিলেন যাঁরা, শরয়ী পর্দার বিধান, আশিক মিন ফিলিস্তিন, নারী তুমি সৌভাগ্যবতী ও হালাল ব্যবসা ও হালাল অর্থনীতির কথকতাসহ বেশ কিছু আলোড়ন সৃষ্টিকারী গ্রন্থেও জনক তিনি। বর্তমান তিনি ইসলাম প্রতিদিনের সম্পাদক ও প্রকাশক এবং দ্য সুলতান প্রকাশনীর প্রধান নির্বাহী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।