সাক্ষাৎকার

ক্যালিগ্রাফি-ই আমার ধ্যান জ্ঞান ও পেশা : সাইফুল্লাহ সাফা

সাইফুল্লাহ সাফা— তারুণ্যদীপ্ত একজন ক্যালিগ্রাফি শিল্পী। ক্যালিগ্রাফি শিল্পই যার ধ্যান এবং জ্ঞান। কারী নেয়ামতুল্লাহ ও সবুরা বেগমের সন্তান সাফা ১৯৯৯ সালে পবিত্র কুরআনের হিফজ সমাপ্ত কাার পর পড়াশুনা করেন কামরাঙ্গীরচরস্থ মাদরাসাতুল মদীনায় এবং জামিয়া ইসলামিয়া লালমাটিয়া থেকে দাওরায়ে হাদিস সমাপ্ত করেন ২০০৭ সালে। বর্তমানে তিনি সাফা আর্ট ফার্ম লিমিটেড এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও এবং সৈয়দ মইনুদ্দিন আহমেদ মাইজভান্ডারি ক্যালিগ্রাফি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তারুণ্যদীপ্ত এই ক্যালিগ্রাফি শিল্পীর সঙ্গে তার জীবনের অর্জন, পথচলা ও বাংলাদেশের ক্যালিগ্রাফি শিল্প নিয়ে কথা বলেছেন ইসলাম প্রতিদিনের বিশেষ প্রতিনিধি ওয়ালি উল্লাহ সিরাজ

আপনি ক্যালিগ্রাফির জগতে কেন আসলেন?
সাইফুল্লাহ সাফা : ২০০১ সাল। আমি মাদরাসাতুল মাদীনায় ভর্তি হই। তখন আমি আমার উস্তাদ শিল্পী বশির মেসবাহকে ক্যালিগ্রাফির কাজ করতে দেখতাম মূলত তখন থেকেই ক্যালিওগ্রাফি শিল্প শেখার প্রতি আগ্রহী হই। মূলত আমি মাদরাসাতুল মাদীনায় পড়ার কারণে এবং বিশেষ করে আবু তাহের মেসবাহ (আদীব হুজুরের) কাছে থাকার কারণে আমি ক্যালিগ্রাফি শিল্পের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠি। শুধু আগ্রহীই হয়ে উঠি না বরং আমি এই শিল্পকে ভালোবাসতেও শুরু করি। মাদরাসাতুল মাদীনায় পড়াকালীন সময়ে আমি স্বপ্ন দেখতাম, এক দিন আমি এই ক্যালিগ্রাফি শিল্পে অনেক ভালো করবো। দেশ ও দেশের বাহিরে সুনাম ও সুখ্যাতি অর্জন করবো। মাদরাসাতুল মাদীনায় পড়া অবস্থায় মাসরুর ভাই ও হা মীম কেফায়েত ভাই ক্যালিওগ্রফির কাজ করতেন। আমি তাদের থেকেই প্রথম এই শিল্প শেখা শুরু করি। এমনকি আমি বশির মেসবাহ সাহেব হুজুরের কাছেও কিছু দিন এই শিল্প শিখি। বাংলা ক্যালিগ্রাফি শিখেছি মাদরাসাতুল মাদীনার সিদ্দিক ভাইয়ের কাছ থেকে। ইরান কালচালার সেন্টারের পক্ষ থেকে ইরান বাংলাদেশ যৌথ উদ্দ্যোগে জাতীয়ভাবে একটি প্রতিযোগিতা হয় সেখানে আমি অংশগ্রহণ করি এবং দ্বিতীয় স্থান অধিকার করি। এর পরে ক্যাফিগ্রাফি শিল্পের প্রতি আমি আরো আগ্রহী হয়ে উঠি। এবং ইবার কালচারাল সেন্টার আমার শেখার আগ্রহ ও প্রতীভা দেখে এই শিল্প ভালোভাবে শেখার সুযোগ তৈরি করে দেয়। এই জন্য আমি তাদের প্রতি অনেক অনেক কৃতজ্ঞ।

শিল্পী সাইফুল্লাহ সাফার কিছু শিল্পকর্ম

ক্যালিগ্রাফি শিল্পের অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যত নিয়ে কিছু বলুন।
সাইফুল্লাহ সাফা : বাংলাদেশে ক্যালিগ্রাফির অতীত খুব একটা চোখে পড়ার মত না। বাংলাদেশে অনেক আগে যারা ক্যালিগ্রাফির কাজ করতেন তাদের মধ্যে রয়েছে সাবিউল আলম সার, মর্তুজা বশির সার এবং আব্দুস সাত্তার সাররা ক্যালিগ্রাফির কাজ করতেন। নতুনদের মধ্যে যারা কাজ করছেন তারা হলো, আমিনুল ইসলাম আমিন, আব্দুর রাহীম এবং সাইফুল্লাহ সাফা আরো আছেন আমার উস্তাদ হা মীম কেফায়েত। ক্যালিগ্রাফির এই জগতে নতুনরা খুব ভালো কাজ করছে আমি মনে করি বাংলাদেশের ক্যালিগ্রাফির ভবিষ্যত খুবই উজ্জল।

ক্যালিগ্রাফি শিল্পে আপনার অর্জন কি?
সাইফুল্লাহ সাফা : আমার আজ যা কিছু অর্জন তা এই ক্যালিওগ্রাফি শিল্পের মাধ্যমেই হয়েছে। এই ক্যালিগ্রাফি শিল্প এক সময় আমার কাছে ‘শিল্প’ ছিলো। এখনো ‘শিল্প’-ই আছে। কিন্তু এই ক্যালিগ্রাফি শিল্প এখন আমার ধ্যান, জ্ঞান, পেশা এবং সব কিছু। আমি আর কোনো কাজ করি না। আমি সারা দিন, সারাক্ষুণ শুধু এই ক্যালিওগ্রাফি নিয়ে কাজ করি।

ক্যালিগ্রাফি শিল্পে মাদরাসার শিক্ষার্থীরা বেশি আগ্রহী না স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা বেশি আগ্রহী?
সাইফুল্লাহ সাফা : ক্যালিগ্রাফিটা হচ্ছে কুরআনের ছন্দায়িত একটি রূপ। কুরআন যেমন একটি সার্বজনীন গ্রন্থ ঠিক তেমনই ক্যালিগ্রাফিও একটি সার্বজনীন শিল্প। কুরআন যেমন পবিত্র ঠিক তেমনই এই শিল্পটাও পবিত্র। ক্যালিগ্রাফি শিল্প হচ্ছে আধ্যাতিকতার বহি:প্রকাশ এবং সুফিজমের বহি:প্রকাশ। পৃথিবীতে কুরআন যতদিন থাকবে ক্যালিগ্রাফি শিল্পও ততদিন থাকবে। দল, মত ও ধর্ম নির্বিশেষে সবাই এই ক্যালিগ্রাফিকে পছন্দ করে। অনেক হিন্দু আছেন যারা কুরআনের আয়াতের ক্যালিগ্রাফি করেন।

বাংলাদেশে বাংলা ভাষার ক্যালিওগ্রাফি নিয়ে কিছু বলুন…
সাইফুল্লাহ সাফা : অনেক আগে থেকেই আমি দেখতাম হা মীম কেফয়েত উল্লাহ ভাই বাংলা ভাষার ক্যালিগ্রাফি করতেন। সেই সাথে শিল্পী সাইফুল ইসলাম ভাইও বাংলা ক্যালিগ্রাফি করেন। এমন আরো অনেকেই আছেন যারা বাংলা ভাষার ক্যালিগ্রাফি করেন। আমি আশা করছি বাংলাদেশে বাংলা ভাষার ক্যালিগ্রাফি এক সময় অনেক সুনাম অর্জন করবে।

Comment

লেখক পরিচিতি

ওয়ালি উল্লাহ সিরাজ

ওয়ালি উল্লাহ সিরাজ। তরুণ লেখক। আলেম ও গবেষক। দীর্ঘদিন যাবত দেশের বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক ও অনলাইন নিউজপোর্টালে লিখছেন। কাজ করেছেন সুনামধন্য কয়েকটি অনলাইন নিউজ পোর্টালে।
বর্তমানে এই তরুণ লেখক আমাদের সময়.কম অনলাইন নিউজ পোর্টালের সহ-সম্পাদক হিসেবে কাজ করছে। পাশাপাশি দায়িত্ব পালন করছেন দৈনিক বাংলাদেশের খবর পত্রিকার ইসলামি বিভাগের।