সাক্ষাৎকার

হালাল রিজিক উপার্জনের সুন্দরতম পথ ব্যবসা : এম মোফাজ্জল ইবনে মাহফুজ

লিখেছেন মনযূরুল হক

এম মোফাজ্জল ইবনে মাহফুজ- ১৯৮৮ সালের ২ জানুয়ারি তার মাতুলালয় চাদঁপুর জেলার মতলব থানাধীন পশ্চিম লালপুর মিয়াজী বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। একাধারে তিনি একজন মেধাবী আলেম, অভিজ্ঞ অর্থনীতি বোদ্ধা, দক্ষ আলোচক, যোগ্য প্রশিক্ষক এবং উদীয়মান তরুণ ব্যবসায়ী। তার দাদা বাড়িও একই থানার এখলাছপুর গ্রামে। তার বাবা মাহফুজুর রহমান ছিলেন পাকিস্তান আমলে এখলাছপুর প্রাইমারী স্কুলের হেড মাস্টার আব্দুল আজিজের দ্বিতীয় পুত্র; সে-আমলে যার ছাত্র ছিলেন সাবেক পানি উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক, আল-রাজী হাসপাতালের কর্ণধার ডা. মোস্তফা জামানসহ বর্তমান সময়ের বহু খ্যাতিমান ব্যাক্তিত্ব। ইবনে মাহফুজের শৈশব কাটে নানাবাড়িতে।


পারিবারিক প্রয়োজনের খাতিরেই প্রথম আমাকে ব্যবসার পথ বেছে নিতে হয় এবং সেই ছেলেবেলা থেকে নানা কারণে এই ভাবনাটা আমার মধ্যে প্রবল আকারে দানা বেঁধে ওঠে যে, অনেক ভালো কাজ করা এবং অনেক ভালো উদ্যোগ বাস্তবায়নের জন্য সচ্ছলতা খুব প্রয়োজন। ধীরে ধীরে আমার কাছে পরিষ্কার হয়েছে, দীন ও দুনিয়া উভয়ের জন্যেই হালাল অর্থের প্রয়োজন রয়েছে। এক্ষেত্রে ব্যবসাই সবচে সুন্দরতম পথ।


ছাত্রজীবনে তিনি নিজগ্রাম এখাছপুর প্রাইমারী স্কুলে প্রথম শ্রেণিতে পড়াশোনা করেন। কিন্তু পিতার চাকুরির সুবাদে ১৯৯১ থেকে বহুবার পিতার সাথে মাদরসার পরিবেশে যাতায়াতের এক পর্যায়ে সকলের বাধা ও আপত্তি উপেক্ষা করে ১৯৯৪ সালে স্কুল ছেড়ে নারায়ণগঞ্জের কাশীপুরে ‘কাছেমুল উলুম মাদানিয়া’ মাদরাসায় ইবতেদায়ি বিভাগে ভর্তি হন। ২০০২ সাল একই মাদরাসায় হেদায়েতুন্নাহু (মাধ্যমিক প্রথমস্তর) পড়া শেষ করেন। এরপর ২০০৩ সালে মুন্সিগঞ্জের রিকাবি বাজার মাদরাসা ও ২০০৫ সালে নারায়ণগঞ্জের আমলাপাড়া মাদারাসায় মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তর সমাপন করে নারায়ণগঞ্জ দেওভোগ মাদরাসা থেকে দাওরায়ে হাদিস (স্নাতকোত্তর) সম্পন্ন করেন। জনাব মোফাজ্জল ছাত্রজীবন থেকেই ব্যবসা-বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। মাদরাসার মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক ক্লাস সমাপ্ত করার পর ব্যবসা-বাণিজ্যের অগ্রগতির ধারায় আরো বেশি সংযুক্ত হন তিনি।

বর্তমানে তিনি বারাকাত এন্টারপ্রাইজেস (এন্টারপ্রাইজেস, বারাকাত মার্কেটিং কর্পোরেশন, বারাকাত কনজ্যুমার প্রোডাক্টস ইন্ডাস্ট্রিজ, বারাকাত লজেষ্টিক) -এর প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও। এছাড়া আস্হাব কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজের মার্কেটিং ডিরেক্টর, কালার মিডিয়া প্রিন্টিং অ্যান্ড পাবলিকেশন্স-এর চেয়ারম্যান, বুশরা ট্রেড ইন্টান্যাশনাল কর্পোরেশন (বিটিআইসি) লিমিটেড-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং রিয়েল স্টেট অ্যান্ড হাউজিং ডেভেলপমেন্ট ও ডিস্ট্রিবিউশন অ্যান্ড মার্কেটিং ব্যবসার একজন দক্ষ কর্ণধার। কর্মজীবনে এসে তিনি বিভিন্ন ইনস্টিটিউটের অধীনে ইসলামী অর্থনীতি ও মার্কেটিং উন্নয়ন বিষয়ক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন এবং দেশে ও দেশের বাইরে অনুষ্ঠিত অর্থনীতি বিষয়ক নানা কর্মশালায়ও অংশগ্রহণ করেছেন। দেশ ভ্রমণ ইতোমধ্যে এম মোফাজ্জল ইবনে মাহফুজের একটি আগ্রহের বিষয়ে পরিণত হয়েছে। এরই মধ্যে তিনি মালয়েশিয়া, ভারত, নেপাল, সৌদি আরব, সিঙ্গাপুরসহ কয়েকটি দেশ ঘুরে বেড়িয়েছেন এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক কমার্শিয়াল সেমিনারে অংশ গ্রহণ করে সুনাম কুড়িয়েছেন। তরুণ এই ব্যবসায়ীর ব্যবসা জীবন, ইসলামি অর্থনীতি, কো-অপারেটিভ ব্যবসা, দেশীয় মার্কেট পরিস্থিতিসহ নানা বিষয়ে তিনি দ্য সুলতানের সাথে কথা বলেন।

এক জন মাদরাসায় পড়ুয়া আলেম হয়েও কেনো আপনি ব্যবসায় এলেন?

শিক্ষাজীবন থেকেই আমি ছোট-খাট ব্যবসা-বাণিজ্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত হই। বা এভাবে বলা যায়, আমার কর্মজীবন মূলত ছাত্রজীবন থেকেই শুরু হয়েছে। প্রিয় দাদা ও আপন ছোটো ভাইয়ের মৃত্যুতে শোকাহত বাবা প্রচ- অসুস্থ হয়ে পড়লে আমাদের পরিবারে সীমাহীন দুর্ভোগ নেমে আসে। নিজের শিক্ষা-উপকরণের খরচ যোগাতে তখন শহরের পাইকারি মার্কেট থেকে স্টেশনারী সামগ্রী কিনে সহপাঠীদের কাছে বিক্রি করতাম। বাবার চিকিৎসা খরচ ও অসুস্থতার মাত্রা বেড়ে চললে বাবার জমানো অর্থকড়িও ফুরিয়ে আসে, তখন একদিকে পরিবার ও অন্যদিকে বাবার চিকিৎসার ভাবনায় মাত্র ১৬ বছর বয়সে ১০০০ টাকা পুঁজি নিয়ে সরাসরি ব্যাবসায় নেমে যাই। গার্মেন্টস থেকে রিজেক্ট তৈরি পোশাক কিনে ফেরি করে কিংবা ফুটপাতে বসে বিক্রি শুরু করি। তখন আমার বন্ধু, সহপাঠী ও দীনি ভাইদের মধ্যে কয়েকজন মহামানব ফেরেশতার মতো এগিয়ে এসেছেন; যাদের কাছে সারাজীবন আমি ঋণী হয়ে থাকবো। আল্লাহ তাদের উত্তম প্রতিদান দান করুন। অর্থাৎ পারিবারিক প্রয়োজনের খাতিরেই প্রথম আমাকে ব্যবসার পথ বেছে নিতে হয় এবং সেই ছেলেবেলা থেকে নানা কারণে এই ভাবনাটা আমার মধ্যে প্রবল আকারে দানা বেঁধে ওঠে যে, অনেক ভালো কাজ করা এবং অনেক ভালো উদ্যোগ বাস্তবায়নের জন্য সচ্ছলতা খুব প্রয়োজন। ধীরে ধীরে আমার কাছে পরিষ্কার হয়েছে, দীন ও দুনিয়া উভয়ের জন্যেই হালাল অর্থের প্রয়োজন রয়েছে। এক্ষেত্রে ব্যবসাই সবচে সুন্দরতম পথ।



ব্যবসা বাণিজ্য সম্পর্কে ইসলামের দিক-নির্দেশনা কি? সংক্ষেপে আমাদের কিছু বলুন।

কোরআনে আল্লাহ তায়ালা ‘ব্যবসাকে হালাল এবং সুদকে হারাম’ আখ্যা দিয়েছেন। ব্যবসার বরকত সম্পর্কে হাদিসেও নবি [সা.]-এর বহু ইরশাদ বর্ণিত হয়েছে। রাসূল [সা.] নিজেও ব্যবসা করেছেন। তাই ব্যবসা করা রাসূল [সা.]-এর পবিত্র সুন্নতসমূহের একটি। সৎ ব্যবসায়ীকে ইসলামে একজন নবি, অলি, এমনকি শহিদের মর্যাদায় ভূষিত করা হয়েছে। বহু বড় বড় ওলামায়ে কেরাম ও আমাদের আকাবিরে উম্মত সততা নিষ্ঠা ও ইনসাফের সাথে সফলভাবে ব্যবসা করেছেন এবং একইসাথে তারা ইসলামের সম্প্রসারণ ও অন্যান্য দীনি খেদমতেও অনন্য ভুমিকা পালন করেছেন। ইসলামি দিক-নির্দেশনার আলোকে ব্যবসা সম্পর্কে আমার বক্তব্য হলো- বান্দার রিজিকের বৃহৎ অংশই ব্যবসার মধ্যে নিহিত, তাই হালালভাবে ব্যবসা করাও জিহাদের একটি অংশ।

একজন আলেমের জন্য কোন পথে উপার্জন উত্তম? দীনি শিক্ষাদানের বিনিময়ে যে অর্থ উপার্জন করা হয় সেটা উত্তম নাকি একজন ব্যবসায়ির কষ্টে উপার্জিত অর্থ উত্তম?

কোরআন-সুন্নাহ ও রাষ্ট্রীয় আইনে বৈধ- এমন যে-কোনো মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করাই একজন আলেমের জন্য উত্তম হতে পারে, চাই তা হালালভাবে ব্যবসা করে হোক অথবা দীনি শিক্ষাদানের মাধ্যমে হোক। হালাল পন্থার সকল উপার্জনই উত্তম। তবে আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে, যেনো আমাদের পার্থিব উপার্জন ও পরকালীন উপার্জন একত্রীভূত না হয়ে যায়। কেননা, আকাবিরগণও এই পদ্ধতি অবলম্বন করেছেন। যেমন- ইমাম আবু হানিফা [রহ.] নিজের প্রয়োজনে ব্যবসা করেছেন, আবার দীনের প্রয়োজনে মানুষকে ইলম শিক্ষা দিয়েছেন। ইলম শিক্ষাদানের জন্যে তিনি কোনো বিনিময় গ্রহণ করেন নি। বর্তমান সময়েও অনেক বিজ্ঞ উলামাগণ দীনি শিক্ষা প্রদানের পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্যেও সাথে যুক্ত রয়েছেন। সুতরাং আমাদের সর্বদা লক্ষ্য রাখা উচিত, যেনো আমরা দীন দ্বারা দুনিয়া উপার্জন করে না ফেলি; তা হলে তা নিশ্চিত আমাদের পরকালকে ক্ষতিগ্রস্থ করবে।

আমরা জানি কওমি মাদরাসায় ইসলামি অর্থনীতি সম্পর্কে পড়ালেখা করানো হয়। কিন্তু বাস্তব জীবনে ইসলামি অর্থনৈতিক পরিমণ্ডলে কওমি পড়ুয়াদের অংশগ্রহণ নেই বললেই চলে। এর কারণ কী বলে আপানি মনে করেন?

ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা- তা আমরা সকলেই জানি। একটি জীবন ব্যবস্থাকে ‘পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা’ তখনই বলা হয়, যখন তার মধ্যে ব্যক্তি জীবন, সামাজিক জীবন, রাষ্ট্রীয় জীবন ও অর্থনৈতিক জীবনসহ জীবনের সকল বিষয়ের সুষ্ঠু ও সুন্দর সমাধান থাকে। এই দৃষ্টিকোণ থেকেই ফোকাহায়ে কেরাম ইসলামি আইনশাস্ত্রে ‘কিতাবুল বুয়ূ’ নামে ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য স্বতন্ত্র অধ্যায় রচনা করেছেন; যা যুগ যুগ ধরে দীনি শিক্ষার্থীরা, বিশেষ করে কওমি মাদরাসার ছাত্ররা অধ্যয়ন ও অধ্যাপনা করে আসছে। কিন্তু কঠিন হলেও সত্য যে, বর্তমানে আমাদের বাস্তব জীবনে ইসলামি অর্থনৈতিক পরিম-লে তাদের অংশগ্রহণ নেই বললেই চলে। আমার মতে, এর কারণ প্রধানত দুইটি- ১. সুযোগের অভাব, ২. সদিচ্ছার অভাব। কেননা, একজন কওমি মাদরাসার ছাত্র যখন পড়ালেখা সমাপ্ত করে কর্ম জীবনে প্রবেশ করে, তখন সে দেখে, তার জন্যে অর্থনৈতিক পরিম-লে রাষ্ট্রীয় ও প্রাতিষ্ঠানিক অংশগ্রহণের কোনো সুযোগই নেই; আমরা আমাদের চারপাশে একটু চোখ ঘোরালেই এর সত্যতা অনুধাবন করতে পারি। তাদের জন্যে একমাত্র অবারিত দরোজা হলো, মাদরাসা ও মসজিদের দরোজা। সুতরাং পরিস্থিতির চাপে পড়ে সেখানেই ঢুকে পড়ে তারা। এরপরও যারা ব্যক্তিগত আগ্রহ ও উদ্দীপনা নিয়ে অর্থনৈতিক পরিম-লে অংশগ্রহণ করছেন, বৈশি^ক পরিস্থিতির কারণে তারাও খুব একটা সুখে নেই। সুতরাং পরিস্থিতির বদল না হলে অর্থনৈতিক পরিম-লে কওমিদের সংখ্যা বেশি হবার আশা করাই তো বাতুলতা।



আমরা জানি, আপনি একটি কো-অপারেটিভ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। আমরা জানতে চাচ্ছি, কো-অপারেটিভ ব্যবসা বা সমাবায় সমিতি সম্পর্কে ইসলামের দিক নির্দেশনা কী? এবং কী কী কারণে একটি সমবায় সমিতির আয় হারাম হয়?

কো-অপারেটিভ ব্যবসা বা সমবায় সমিতিগুলো করা হয় সাধারণত মধ্যম ও ক্ষুদ্র আয়ের মানুষকে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করার উদ্দেশ্যে; যা শরীয়ত ও রাষ্ট্রীয় দৃষ্টিকোণ থেকে একটি মহৎ উদ্যোগ বলা চলে। আর যখন এ সমস্ত কো-অপারেটিভ ব্যবসা বা সমবায় সমিতিগুলোর অর্থনৈতিক কর্মকা-গুলি ইসলামি আইন বহির্ভূত হবে, তখন তার মুনাফা হারাম হবে। তাই আমাদের উচিত কো-অপারেটিভ ব্যবসার কর্মকা-গুলি ইসলামি আইন অনুযায়ী করার চেষ্টা করা।

বর্তমানে বেশিরভাগ মানুষ কো-অপারেটিভ ব্যবসাকে একধরনের প্রতারনা বলে মনে করে। সরকারও নতুন কো-অপারেটিভ ব্যবসার অনুমোদন দিতে নারাজ। আপনি যেহেতু এমন একটি প্রতিষ্ঠানে যুক্ত আছেন। সুতরাং এ সম্পর্কে আপনার মন্তব্য জানতে চাইছি।

চুন খেয়ে মুখ পোড়ার পর দই দেখে ভয় পাওয়ার মতো অবস্থা হলে যা হয়- আমাদের অবস্থাও এখন তদ্রুপ হয়েছে। কো-অপারেটিভ বা সমবায় সমিতি নামধারি কিছু প্রতিষ্ঠানের কাছে মানুষ প্রতারিত হয়েছে ঠিক। তারা যেমনিভাবে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে টাকা মেরেছে, ঠিক তেমনিভাবে কিছু সাধারণ মানুষও কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানের টাকা মেরে উদ্যোক্তাদের সর্বস্বান্ত করেছে। এজন্যে কি আমরা সকল ‘সাধারণ মানুষ’কে প্রতারক বলি? দুইয়েকজন মানুষের প্রতারনার কারণে যদি আমরা সকল ‘সাধারণ মানুষ’কে প্রতারক না বলি বা অবিশ্বস না করি তাহলে কেনো, দুই একটি প্রতিষ্ঠানের প্রতারনার কারণে সকল কো-অপারেটিভ ব্যবসা বা সমবায় সমিতিকে প্রতারক মনে করব? সরকার কো-অপারেটিভ ব্যবসাস বা সমবায় সমিতির অনুমতি দিতে নারাজ- একথাটি মনে হয় ঠিক নয়। বরং এভাবে বলা উচিত যে, যাতে করে কোনো কো-অপারেটিভ ব্যবসা অথবা সমবায় সমিতি দ্বারা কোনোভাবে আর সাধারণ মানুষ প্রতারিত না হয়- এদিকে লক্ষ্য রাখতেই অনুমোদন প্রক্রিয়াটাকে নিখুঁত ও স্বচ্ছ করার চেষ্টা করছে সরকার।

অনেকেই বলে এ যুগে সততার সাথে ব্যবসা করা সম্ভব নয়। ব্যবসা করতে গেলে কোনো না কোনোভাবে মিথ্যার আশ্রয় নিতেই হয়। আপনিও কি তাই মনে করেন?

না, আমি তা মনে করি না। কেননা, মিথ্যা বলেই যদি সফল হতে হয়, তাহলে তাকে আমি ব্যবসাই বলবো না; বরং তা হলো প্রতারণা। মিথ্যা বলে কেউ ব্যবসায় সফল হয় না, বরং বহ্যিকভাবে সফলতার চমক দেখায় মাত্র। বাস্তবে ব্যবসার সফলতা আসে সত্য বলার দ্বারাই; যদিও সে সফলতার জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করা প্রয়োজন।



আমরা জানি, আপনি বুশরা নামক একটি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তারপরও বারাকাত এন্টার প্রাইজেসেএর মতো একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুললেন কেনো? এর নেপথ্য উদ্দেশ্য সম্পর্কে যদি আমাদের কিছু বলতেন?

প্রতিটি মানুষের একটি ব্যক্তিগত স্বপ্ন থাকে, তেমন একটি স্বপ্ন আমারও ছিলো এবং এখনও আছে। আমি সবসময় স্বপ্ন দেখতাম, আমরা যারা মধ্যম আয়ের পরিবারের সন্তান, তাদের যেহেতু একার পক্ষে বৃহৎ আকারে এমন কিছু করা সম্ভব নয়, যার মাধ্যমে নিজেদের সাথে সাথে দেশ ও জাতির একটি বৃহত্তর অংশ উপকৃত হবে। এ উদ্দেশ্যেই আমি আমার সহপাঠী বন্ধু-বান্ধব ও শুভাকাক্সক্ষীদের নিয়ে বিটিআইসি (বুশরা ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল কর্পোরেশন) লিমিটেড নামে একটি বহুমুখী ব্যাবসায়িক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলি। বুশরা সমবায় সমিতি লিমিটেড ছিলো বিটিআইসির একটি সহযোগী প্রকল্প। যার সাথে সম্পৃক্ত ছিলো বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় ওলামায়ে কেরামসহ বিভিন্ন অঞ্চলের প্রায় পাঁচ সহস্রাধিক মানুষ। কিন্তু সেখানে বহুলোকের বহুমত ও দেশের চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে আমাদের অগ্রযাত্রাময় সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বিভিন্ন বাধা ও দ্বীধাদন্ধপূর্ণ জটিল এক পরিস্থিতির সম্মুখীন হই আমর। ফলশ্রুতিতে কোম্পানী আর্থিক সংকটের মুখে পড়ে এবং ধীরে ধীরে বিটিআইসির কার্যক্রম পরিচালনা সংকৃচিত হয়ে আসে। এভাবে একটি পর্যায় অতিক্রান্ত হওয়ার পরে এখন বিটিআইসি একটি প্যারালাইসড রোগীতে রুপান্তরিত হয়েছে।

এই প্রেক্ষিতেই আমি আমার স্বপ্ন পূরণের জন্যে নতুনভাবে ভাবতে শুরু করি। নতুন ধারায় এমনভাবে কাজ করার চেষ্টা করি যেখানে থাকবে না বহুলোকের বহুমত, থাকবে না কোনো রাজনৈতিক বাধা এবং যেখানে ক্ষুদ্র থেকে বহুলোকের কর্মসংস্থান করারও ব্যবস্থা হবে। সেই স্বপ্নকে লালন করে আমি আমার ফ্যামিলির পরামর্শ ও অংশগ্রহণে গড়ে তুলি স্বপ্নের দ্বিতীয় অধ্যায়ে বারাকাত এন্টারপ্রাইজেস নামের একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। আলহামদুলিল্লাহ্, বুজুর্গ-মুরুব্বিদের দোয়ায়, শুভাকাক্সক্ষীদের উৎসাহে আজ বারাকাত এন্টারপ্রাইজেস আকাশের মিটি মিটি তারার আলোতে গন্তব্যের দিকে এগিয়ে চলেছে। বর্তমানে আমিও আমার সহকর্মীদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও নিরবচ্ছিন্ন ত্যাগের বিনিময়ে ‘বারাকাত’ এন্টারপ্রাইজেসের চারটি সফল প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার প্রত্যেয়ে সাহসী পদক্ষেপে এড়িয়ে চলছি। ১. বারাকাত এন্টারপ্রাইজেস। এই প্রতিষ্ঠানের অধীনে রয়েছে আমদানিকৃত তৈরি পোশাক ও ব্যবহারিক পণ্যসহ সময় উপযোগী পণ্যের বিশাল আয়োজন; যা অনলাইনের বিভিন্ন সোস্যাল মাধ্যমে ইতোমধ্যে ব্যপক সাড়া ও সুনাম অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। পাশাপাশি আমরা দেশের দুইটি বৃহৎ শিল্পপ্রতিষ্ঠান ‘আকিজ গ্রুপ’ ও ‘মেঘনা গ্রুপ’-এর পণ্য স্থানীয়ভাবে সুনামের সাথে পরিবেশন করে থাকি। ২.বারাকাত কনজ্যুমার প্রোডাক্টস ইন্ডাস্ট্রিজ। এই প্রতিষ্ঠান থেকে আমরা মামা সুপার ব্রান্ডসহ আরো বিভিন্ন কনজ্যুমার আইটেম উৎপাদন করে থাকি। ৩. বারাকাত মার্কেটিং কর্পোরেশন। এই প্রতিষ্ঠান থেকে আস্হাব কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজসহ আরো বেশি কিছু প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব উৎপাদিত পণ্য দেশব্যাপি বাজারজাত করা হচ্ছে। ৪. বারাকাত লজেস্টিক; এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে আমরা আমাদের নিজস্ব উৎপাদিত পণ্য ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের উৎপাদিত খাদ্য ও ব্যবহারিক পণ্যসামগ্রীর ট্রান্সপোর্ট পরিসেবা দিয়ে থাকি।

বাংলাদেশে কেউ যদি ইসলাম সম্মতভাবে ব্যবসা করতে চায় তাহলে সে কী কী ধরনের বাঁধার সম্মুখীন হতে পারে?


কোরআন-সুন্নাহ ও রাষ্ট্রীয় আইনে বৈধ- এমন যে-কোনো মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করাই একজন আলেমের জন্য উত্তম হতে পারে, চাই তা হালালভাবে ব্যবসা করে হোক অথবা দীনি শিক্ষাদানের মাধ্যমে হোক। হালাল পন্থার সকল উপার্জনই উত্তম। তবে আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে, যেনো আমাদের পার্থিব উপার্জন ও পরকালীন উপার্জন একত্রীভূত না হয়ে যায়। কেননা, আকাবিরগণও এই পদ্ধতি অবলম্বন করেছেন।


বাংলাদেশে এমন কোনো আইন নেই, যার মাধ্যমে ইসলামসম্মত ব্যবসাকে বাধাগ্রস্ত করা যাবে। তবে এমন কিছু বিষয় আছে, যার কারণে কোনো কোনো ক্ষেত্রে কাজকর্ম জটিল হয়ে যায়। যেমন- ব্যাংকিং ব্যবস্থা, বীমা আইন ইত্যাদি। তবে এসকল বিষয়গুলোর তাৎক্ষণিক সমাধানের জন্যে আমরা যোগ্য মুফতিয়ানে কেরামের দ্বারস্থ হয়ে থাকি এবং তাদের পরামর্শ মেনে জটিলতা কাটানোর চেষ্টা করি। একই সাথে আমরা অভিজ্ঞ আইনজীবীদের পরামর্শও আমাদের সামনে রাখি, যেনো আইনজীবী ও মুফতিদের পরামর্শের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে ইসলামি আইন ও দেশীয় আইন উভয় দিক থেকেই একটি সুন্দর সমাধান লাভ করতে পারি। বাকিটা আল্লাহর হাওলা। তবে কয়েকটি সমস্যার সমাধান এখনো পাইনি; যদিও চেষ্টা ও আশা কোনোটাই ছাড়ি নাই।

আমরা জানি আপনি ব্যবসার উদ্দেশ্যে ইতিমধ্যে কয়েকটি দেশ ভ্রমণ করে এসেছেন। ব্যবসা সম্পর্কে অন্য দেশের আলেমদের চিন্তাধার কেমন দেখেছেন?

কোরআন ব্যবসাকে হালাল করেছে আর সুদকে করেছে হারাম। রাসূল [সা.] নিজেও ব্যবসা-বাণিজ্য করেছেন। এ দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যবসা সর্বসম্মতভাবে একটি সুন্নত আমল। সুতরাং ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে কোনো আলেম বিরূপ চিন্তা করবে তা তো কল্পনাই করা যায় না। ব্যবসা হালাল হওয়া নিয়ে কোনো আলেমের মধ্যেই সন্দেহ নেই। ভারতসহ অন্যান্য দেশের আলম-ওলামার দৃষ্টিতে ব্যবসার মাধ্যমে উপার্জিত রিজিকই হলো সর্বোত্তম রিজিক। সুতরাং আলেমগণ ব্যবসার মাধ্যমে রিজিকের ব্যবস্থা করবে এবং অধ্যাপনা ও অন্যান্য দীনি কাজের মাধ্যমে দীনের খেদমত করবেন- এটাই তাদের স্বাভাবিক জীবনরীতি হওয়া উচিত। অন্যসব দেশের ওলামা কেরাম সম্পর্কে আগে থেকেই আমি জানতাম এবং বিভিন্ন দেশে ভ্রমণের সুযোগে নিজেও চাক্ষুস দেখছি যে, তারা তালিমের পাশাপাশি সক্রিয়ভাবে ব্যবসায় সময় দেন- একমাত্র আমাদের বাংলাদেশের ওলামায়ে কেরামের এমনটা দেখা যায় না। আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত-পাকিস্তানের দিকে তাকালেও আপনি আমার কথার বাস্তব প্রমাণ পাবেন।

বিশ্বব্যপি হালাল সার্টিফিকেশন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমাদের দেশে যেসব পণ্য ইমপোর্ট হয় সেগুলোর ইনগ্রেডিয়েন্স শতভাগ হালাল কি না তা নিয়ে সংশয় বেড়েই চলেছে। সে-প্রেক্ষিতে আমাদের দেশে একটি হালাল সত্যায়নকারী প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয়তা কতটুকু বলে আপানার মনে হয়। এবং এই ক্ষেত্রে আপানার নিজের কোনো অভিজ্ঞতা বা মতামত আছে কিনা?

এ বিষয়ে কয়েক বছর পূর্বে দেশের শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন মুফতি সাহেবের সাথে পরামর্শ করেছিলাম, কিন্তু তাদের কাছ থেকে আশানুরূপ সাড়া পাইনি। আমাদের দেশে যে-সমস্ত পণ্য ইমপোর্ট হয় সেগুলোর ইগ্রেডিয়েন্স শতভাগ হালাল কি না তা নিয়ে সংশয় থাকাটা খুবই স্বাভাবিক, যেহেতু আমাদের দেশে মুসলিম ও অমুসলিম সকল দেশ থেকেই খাদ্য ও প্রসাধনী আসে। সমস্যা নিরসনের জন্যে হালাল সার্টিফিকেশন পদ্ধতি চালু করা অতীব জরুরি ও গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে সর্বস্তরের বিজ্ঞ মুফতি ও বিশেষজ্ঞদের সমন্বিত একটি প্রতিনিধি দল অবশ্যই থাকবেন, যাদের নিয়ে হালাল সার্টিফিকেশন বোর্ড গঠিত হবে। আরও আগেই এই পরিম-লে আলেমদের এগিয়ে আসা দরকার ছিলো। তারা হয়তো ভাবছেন যে, আমাদের দেশের মানুষ এখনও বাহিরে খাবারের প্রতি এতোটা অভ্যস্ত হয়ে ওঠে নি। অথচ আমাদের দেশের উৎপাদিত পণ্য ও খাদ্যদ্রব্যের অধিকাংশের উপকরণ কিন্তু বিদেশ থেকেই আসে। সুতরাং আমাদের দেশের ৯০ ভাগ মুসলিম জনগোষ্ঠীর প্রয়োজনে এ বিষয়ে এখনই উদ্যোগ গ্রহণ করা জরুরি।



ব্যবসায়ীদের কর ফাঁকি দেওয়া একটি সর্বজনবিদিত বিষয়। প্রশ্ন হলো, কোনো ব্যবসায়ী যদি সরকারকে সঠিকভাবে কর পরিশোধ না করেন তবে সেই ব্যবসার মাধ্যমে উপার্জিত অর্থ হালাল হবে কি না?

ব্যবসায়ী যদি সরকারকে সঠিকভাবে কর প্রদান না করেন তবে রাষ্ট্র ও সরকারী উন্নয়ন ক্ষতিগ্রস্থ হবে- যা ইসলামি আইন ও দেশীয় সংবিধান অনুযায়ী অপরাধ। তবে বর্তমানে কর দিলে সরকারের অনেক শরীয়ত পরিপন্থী কাজের সাথে শামিল হওয়ারও নামান্তর হয়ে যায়। রাষ্ট্রকেও এ বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে যে, ব্যবসায়ীদের প্রতি এমন অতিরিক্ত কর আরোপ না করা হয়, যার কারণে সাধারণ মানুষের ওপর দুর্ভোগ নেমে আসে। কেননা, ব্যবসায়ীরা তার করের অর্থটি পণ্যের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের কাছ থেকেই আদায় করে থাকে। তাই সরকারের উচিত এ বিষয়টি বিবেচনা করে ব্যবসায়ীদের প্রতি সুবিধাজনক কর আরোপ করা।

কালোবাজারী ও  মজুদদারী বাংলাদেশের ব্যবসা সেক্টরের অন্যতম একটি প্রধান সমস্যা। এ সমস্যার মূল কারণ কী বলে আপনার মনে হয়? ইসলামের দৃষ্টিতে এ সমস্যার কিভাবে সমাধান হতে পারে?

কালো বাজারী ও মজুদদারী ব্যবসাকে ইসলাম সমর্থন করে না। এই ধরনের সমস্যার মূল কারণ হলো অতিলোভী মানসিকতা ও সরকারের অব্যবস্থাপনা। কেননা, সরকার যদি সঠিক সময়ে বাজার মনিটরিং করে তাহলে অসাধু ব্যবসায়ীরা কালো বাজারী ও মজুদদারী করার সুযোগই পাবে না এবং সাধারণ মানুষকেও দুর্ভোগ পোহাতে হবে না। ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে ও দেশীয় আইনে এই সমস্যার সমাধান এক ও অভিন্ন। কেননা, ইসলামী শরীয়ত বলে- যখন এ ধরনের সমস্যা সম্মুখীন হবে তখন রাষ্ট্রপ্রধানের দায়িত্ব হলো, বাজার ব্যবস্থাপনা স্থিতিশীল রাখার জন্যে সর্বাত্মক প্রয়াস চালানো; যেনো কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান অতিমুনাফার ফাঁদে পড়ে না যায় এবং কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান একেবারে ধ্বংসও না হয়ে যায়। এ-ক্ষেত্রে রাষ্ট্র ও ইসলামের সমন্বয়েই ইনসাফ ঠিক রাখা সম্ভব।

বর্তমানে ব্যবসা পরিচালনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো প্রতিষ্ঠান ও পণ্যের বিজ্ঞাপন প্রদান করা। ব্যবসা পণ্যের বিজ্ঞাপন প্রদানের ক্ষেত্রে বিভিন্ন মুখরোচক বাক্য আমরা শুনি, যার সাথে পণ্যের গুনগত মানের আদৌ কোনো সম্পর্ক নেই। এধরনের বিজ্ঞাপন প্রদান করা ইসলামের দৃষ্টিতে বৈধ হবে কি না এবং এ বিজ্ঞাপন থেকে উপার্জিত অর্থ হালাল হবে কি না?

ইসলামের দৃষ্টিতে ব্যবসা হালাল হওয়ার জন্য যে সমস্ত শর্তাবলি আছে, তার মধ্যে অন্যতম একটি হলো পণ্যের যে গুণাগুণ বর্ননা করা হবে, বাস্তবে পণ্যের মাঝে সেই গুণাগুণ বজায় রাখা। যদি পণ্যের বর্ণিত গুণাগুণ ও বাস্তব গুণাগুণ এক না হয় তাহলে, সে-পণ্যের ক্রয়-বিক্রয় জায়েজ হবে না। যে-কোনো কোম্পানীর বিজ্ঞাপনের মূল উদ্দেশ্যই থাকে, তাদের পণ্যের গুণাগুণ বর্ণনা করা। সুতরাং বাস্তবে যদি পণ্যের সাথে তাদের বর্ণিত গুণাগুণের মিল খুঁজে না পাওয়া যায়, তাহলে তাদের বিজ্ঞাপন মিথ্যার অভিযোগে অভিযুক্ত হবে এবং মিথ্যা বিজ্ঞাপন থেকে উপার্জিত অর্থ কিছুতেই হালাল হতে পারে না।

বাংলাদেশের বিপুল সংখ্যক শিক্ষিত তরুণ কর্মসংস্থানবিহীন বেকার, তারা চাকরি খুঁজে পাচ্ছে না এবং একই সাথে ও দেশের বেশিরভাগ মানুষ দরিদ্র, তাদের ব্যবসা করার মতো পুঁজি নেই। একজন ব্যবসায়ী হিসেবে এই পরিস্থিতিকে আপনি কিভাবে দেখেন এবং এই সমস্যা থেকে উত্তরণের কী উপায় আছে বলে মনে করেন?



একজন ব্যবসায়ী হিসেবে আমি বলবো- আমার দৃষ্টিতে এটা তেমন কোনো সমস্যাই নয়। আমরা যদি আমাদের চিন্তাশক্তি ও মানসিকতা উদার করি, তহলে সহজেই এ সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। আমাদের দেশে তিন স্তরের মানুষ বসবাস করে। ১. কিছু মানুষের মেধা আছে, কিন্তু কাজ করার শক্তি ও আর্থিক সচ্ছলতা নেই; ২. কিছু মানুষের কাজ কারার শক্তি আছে, কিন্তু মেধা ও অর্থিক সচ্ছলতা নেই; ৩. আর কিছু মানুষের আর্র্থিক সচ্ছলতা আছে, কিন্তু কাজ করার শক্তি ও মেধা কোনোটাই নেই। যখনই আমরা নিজেদের চিন্তাশক্তি ও মানসিকতাকে উদার করে এই তিন স্তরের মানুষকে একটি প্লাটফর্মে নিয়ে কাজ করতে পারবো, তখন এই সমস্যাকে কোনো সমস্যা বলেই মনে হবে না এবং খুব অল্প সময়েই এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ পেতে সক্ষম হবো আমরা। ব্যক্তির সাথে সাথে তখন দেশও উন্নয়ের দিকে এগিয়ে যাবে। তবে এ-ক্ষেত্রে তিনস্তরের মানুষকে সমন্বিত করার কাজটা একটু কঠিনই বটে। মানুষের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি ও অবিশ্বাসই আমাদের সবচে’ বড় বাধা, যা স্বত:স্ফূর্তভাবে সকলকে সমাধান করতে হবে।

যেসব তরুণ আপনার মতো ব্যবসায়ি হতে চান, তাদের উদ্দেশ্যে আপনার কী বলার আছে?

আমি একজন সাধারণ মানুষ। দেশের সম্ভাবনাময় তরুণদের কিছু উদ্দেশ্যে আমি বলতে চাই, জীবনে কিছু করতে হলে টাকা-পয়সা তেমন মুখ্য বিষয় নয়। যে-ব্যক্তি তার যোগ্যতা, সাহসিকতা, নিষ্ঠা ও আমানতদারিতাকে সঠিক সময়ে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারবে, সে-ই হতে পারবে যুগের সফল ব্যক্তিত্ব। আরেকটি কথা না বললেই নয়- চাটুকার, হিংসুক ও দুষ্টলোকের কারণে কখনও নিজের স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে ব্রেক দেয়া যাবে না। খারাপ মানুষের সস্তা বিনোদন কখনো সফল ব্যক্তিদের কাজে আসে না। আর পাহাড়সম দৃঢ়তা ও অদম্য মনোবল ছাড়া ব্যবসা কেনো কোনকাজেই স্থায়ী সফলতা আসে না। সফল মানুষদের জীবন অধ্যায়ে এমন অভিধা বা শব্দ খুঁজে পাওয়া যায় না।

ব্যবসা-বাণিজ্য ছাড়া আর কোনো ধরনের জনসেবামূলক কাজে আপনি যুক্ত আছেন কি না?

দুইটি স্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটিতে ও জাতীয় পর্যায়ে জনসেবামূলক কর্মকা-সহ বারাকাত মিশন ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে ধর্মীয় ও সামাজিক উন্নয়নমূলক কাজে নিজেকে সম্পৃক্ত রেখেছি, আলহামুদুলিল্লাহ। সুযোগ-সামর্থ্য হলে জনসেবামূলক কার্মকা-গুলোকে আরো ব্যাপকতর করার ইচ্ছা রয়েছে, ইনশাআল্লাহ।

সাক্ষাৎকার নিয়েছেন

মনযূরুল হক

হেড অব কনটেন্ট, দ্য সুলতান

Comment

লেখক পরিচিতি

মনযূরুল হক

আমি মনযূরুল হক। সার্টিফিকেটে নাম মো. মনযূরুল হক মোর্শেদ। পেশা ও নেশা লেখালেখি। পড়াশুনার পাশাপাশি কাজ করছি একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানে। প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা নিতান্তই কম না- ৭টি। ২০১৫ সালে সামওয়্যারইনব্লগে সেরা লেখা নির্বাচিত হয়ে পুরুস্কৃত হয়েছি।

কমেন্টস করুন