ফিচার বই

বিন্দুহীন বর্ণে রচিত ঐতিহাসিক এক সীরাতগ্রন্থ

প্রিয়নবি (সা.) শানে ভালোবাসার প্রকাশ ঘটাতে কত মানুষ কত কিছুই না করেছে। কত আয়োজন আর কত আবিস্কার ও রচনায় বিমুগ্ধ যুগ পাড় করেছেন কত নবিপ্রেমিক। মহানবির (সা.) প্রতি ভালোবাস প্রকাশের এমনই একটি বিরল আয়োজন ঐতিহাসিক একটি সীরাতগ্রন্থ।

বুকের বাগানে গোলাপ হয়ে ফুটে ওঠা প্রিয় সীরাতগ্রন্থটির নাম ‘হাদিয়ে আলম’। উর্দু ভাষায় লিখিত চারশত পৃষ্ঠার একটি বিস্ময়কর নবীজীবন। এই গ্রন্থে নোকতাযুক্ত (আরবী বিন্দু) কোনো হরফ বা বর্ণ ব্যবহার করা হয় নি। আশ্চর্যতম ঐতিহাসিক এই গ্রন্থটি লিখেছেন মুহাম্মদ ওয়ালী রাযী । মুফতি শফী (রহ.)-এর দ্বিতীয় পুত্র তিনি। রাফী উসমানী ও তাকী উসমানীর বড় ভাই মুহাম্মাদ ওয়ালী রাযী। একজন মানুষের পক্ষে একশো তলা আকাশছোঁয়া প্রসাদ বানানো সহজ কিন্তু বিন্দুহীন বর্ণে একটি গ্রন্থ রচনা করা সত্যিই বিরল কাজ।

এত সাবলীল সহজ উর্দুতে লেখা, পড়তে মোটেও হোঁচট খেতে হয় না; অথচ বিস্ময়াভিভূত চোখ বর্ণে বর্ণে বিমূঢ় হয়ে থেমে দাঁড়ায়! আমাদের বহুল ব্যবহৃত দরুদবাক্য সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম লিখতে আলাইহি বিন্দু ব্যবহার করতে হয়। তাই লেখক দরূদবাক্যটি এভাবে লিখেছেন সাল্লাল্লাহু আলা রাসূলিহি ওয়া সাল্লাম।

এছাড়া তিনি সরাসরি রাসূল শব্দটি ব্যবহার করেছেন। বিস্ময়কর ব্যাপার হলো কোরআনের আয়াত ও হাদীসের তর্জমাও করেছেন তিনি বিন্দুহীন বর্ণের ব্যবহারে।

শুরুতে পাঁচ পৃষ্ঠার ভূমিকাটিও লিখেছেন বিন্দুহীন বর্ণে! ফোঁটাবিযুক্ত বর্ণমালায়! উর্দু কিতাবগুলোতে ভূমিকা বোঝাতে সাধারণত পেশলফয, গারযে মুরাত্তাব, দীবাজাহ, হারফে আগায ইত্যাদি শব্দ ব্যবহৃত হয়। কিন্তু এই গ্রন্থে এসব কোনো শব্দই ব্যবহার করা হয়নি। কারণ এই সবগুলো শব্দই নোকতাযুক্ত। তিনি ব্যবহার করেছেন বিন্দুহীন ভিন্ন শব্দ। তার নামের শেষাংশ রাযী লিখতে মানকুত (বিন্দুযুক্ত) শব্দের আশ্রয় নিতে হয়। তাই তিনি নাম থেকে এই অংশটি বাদ দিয়েছেন। লিখেছেন শুধু মুহাম্মাদ ওয়ালী।

আশ্চর্যের কথা হলো প্রকাশনীর নামেও নেই বিন্দুযুক্ত কোনো বর্ণের ব্যবহার! প্রকাশনীর নাম- দারুল ইলম।

এমন আশ্চর্যজনক পদ্ধতিতে প্রথম গ্রন্থ লিখেছেন আবুল কাসেম হারীরী (রহ.)। তার প্রসিদ্ধ মাকামাতুল হারীরি কিতাবটি আরবী সাহিত্যের আরেকটি বিস্ময় ও চিন্তার খোরাক। অপূর্ব, অনুপম ‘শব্দের জাদুকর’ উপাধিটি হারীরিকে (রহ.) দেওয়া যায় নির্দ্বিধায়। তিনি শব্দের যতরকম খেলা দেখিয়েছেন, সেগুলোর ভেতর একটি হলো বিন্দুহীন শব্দে লেখা।

বিন্দুহীন গ্রন্থের দ্বিতীয় নমুনা পাওয়া যায় মোঘলযুগের আলেম আবুল ফজল ফয়েজীর লেখা তাফসীরগ্রন্থ সাওয়াতিউল ইলহাম । গ্রন্থটির নাম থেকে নিয়ে পুরো কিতাবটি বিচন্দুহীন বর্ণে লিখেছেন।  মানুষ যে কত দুর্বল কত কিছু ভাবতে জানে এবং তৈরি করতে জানে এই গ্রন্থগুলো তার উজ্জ্বল উদাহরণ।

লিখেছেন  : আরিফ খান সাদ, শিক্ষা সচিব, জামিয়া কাসেমিয়া আশরাফুল উলূম, গুলশান, ঢাকা

Comment

লেখক পরিচিতি

আবদুল্লাহ মারুফ

আমি আবদুল্লাহ মারুফ। বর্তমানে অধ্যয়নরত আছি আল বায়ান অ্যারাবিক লানিং সেন্টারে। পাশাপাশি নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি হেরার জ্যোতি ও মাসিক ঘাসফড়িঙ -এর। পড়াশুনা, লেখালেখি আর ঘুরে বেড়ানো এই আমার ছোট্ট জীবন। ইসলাম প্রতিদিনের সাথে আছি কন্ট্রিবিউটিং রাইটার হিসেবে।

কমেন্টস করুন